ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: মুখ্যমন্ত্রীই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। রেশন দোকানে গিয়ে খদ্দের দেখলেন, সে আশঙ্কাই সত্যি। রেশনে পাওয়ার কথা ১ কিলো পিঁয়াজ। পেলেনও। কিন্তু হাতে নিয়ে দেখেন, প্রায় পুরোটাই পচা। কথা কাটাকাটি থেকে সটান চ্যালেঞ্জ ডিলারকে। ভাল পিঁয়াজ দেবেন কিনা? সদুত্তর না মেলায় রেশন দোকানে দাঁড়িয়েই ‘দিদিকে বলো’-তে ফোন।
নালিশের ফল যে এমন হবে ভাবেননি কেউই। এক ঘণ্টার মধ্যে সুফল বাংলার গাড়ি এসে হাজির রেশন দোকানের সামনে। আবার লাইন দিয়ে টাটকা পিঁয়াজ মিলল হাতে হাতে। মঙ্গলবার টালিগঞ্জের হরিদেবপুরের ঘটনা। এবং এতেই স্পষ্ট পিঁয়াজের আকালের ছবিটা ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে। কেন্দ্রের পাঠানো ইজরায়েলি পিঁয়াজের অর্ধেকই পচা। নিজেই এই খবরের কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন। তার পর থেকে সরকারি ভরতুকি দিয়ে কখনও আফগানিস্তান, কখনও ইজিপ্ট এমনকী, বাংলার বেশ কিছু প্রান্তের পিঁয়াজ দিয়ে বাজার সামলানোর কাজ চালাচ্ছিল সরকার।
সেই পচা পিঁয়াজ যে এভাবে সত্যিই হাতে এসে পৌঁছবে ভাবতে পারেননি কেউই। ঘটনার কথা শুনে ক্রেতারা তো রেগে কাঁই। প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, বচসার পরও ফল মেলেনি। কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানান ক্রেতা। ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রত্না শূরের সঙ্গে কথা বলেই ডায়াল করেন ৯১৩৭০৯১৩৭০ নম্বরটি। উলটোদিক থেকে ফোনে সাড়া পেতেই গড়গড় করে ঘটনার কথা জানিয়ে দেন ওই ক্রেতা।
[আরও পড়ুন: পিঁয়াজের কালোবাজারি রুখতে এবার কলকাতার বাজারে হানা নগরপালের]
সরকারের তরফে ভরতুকি দিয়ে সাধ্যমতো পিঁয়াজের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এর মধ্যেই সুফল বাংলার স্টল লুটের খবর এসেছে। বাড়তি পিঁয়াজ মজুত রেখে কেউ এর দাম বাড়াচ্ছেন কিনা, তা জানতে বাজারে নেমে পরিস্থিতি দেখেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। রেশন ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের কথায়, দুর্নীতির অভিযোগ যে আসে না, তা নয়। তবে এখন যা পরিস্থিতি তাতে, চেষ্টা করা হচ্ছে বেশিরভাগটাই ভাল মানের পিঁয়াজ ক্রেতার হাতে তুলে দিতে। তার মধ্যেই এমন গুরুতর অভিযোগ। আর তাতেই সুফল মিলল একেবারে হাতেনাতে।
কৃষি বিপণন দপ্তর এই মুহূর্তে তাদের ন্যায্য মূল্যের সবজির চলমান দোকান সুফল বাংলার মাধ্যমে রাজ্যের সর্বত্র পিঁয়াজ বিক্রি করছে। প্রাথমিকভাবে ৯৩৪টি রেশন দোকানের মাধ্যমে এই পিঁয়াজ দেওয়ার কথা। দপ্তর সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে তাদের পিঁয়াজের পর্যাপ্ত জোগান নেই। ফলে পালা করে করে বিভিন্ন রেশন ডিলারকে পিঁয়াজ পাঠানো হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন দপ্তরের সচিব মনোজ আগরওয়াল। দুই ২৪ পরগনায় যার পরিমাণ হাফ কিলো করে। কলকাতা-সহ রাজ্যের বাকি অংশের জন্য বরাদ্দ ১ কিলো।
দপ্তরের একটি সূত্র বলছে, মঙ্গলবার ১১০ টাকা কেজি দরে সাকুল্যে ৬৭ টন পিঁয়াজ কোলে মার্কেট থেকে কিনেছে সরকার। কখনও তা মিলছে ১১৫ টাকায়। সেই পিঁয়াজই সুফল বাংলা ও বিভিন্ন রেশন দোকান থেকে বিক্রি হচ্ছে ৫৯ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ভরতুকি দিতে হচ্ছে ৫১ টাকা। এর মধ্যেই অভিযোগ আসছে ভিন্নরকম। সুফল বাংলার বেশ কিছু স্টলের সামনে লাইন রাখতে স্থানীয় বাজারেরই কোনও কোনও গোষ্ঠী ক্রেতার কাছ থেকে ৫-১০ টাকা করে নিয়ে নিচ্ছে। এমনকী, অনেক বাজারের সামনে সুফল বাংলার গাড়ি দাঁড় করাতেও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের। তা নিয়েও কড়া প্রশাসন।