অভিরূপ দাস: বিশেষজ্ঞ ইএনটি সার্জনের দায়িত্ব পালন করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সঙ্গ দিলেন পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের টেকনিশিয়ান। কোনও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ‘রেফার’ নয়। চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে নিজেরাই মধ্যরাতে শ্বাসনালি থেকে খেলনার টুকরো বের করে নতুন জীবন দিলেন একরত্তিকে।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কুলপির বাসিন্দা ১১ মাসের সুনয়না খাতুন ভুগছিল মারাত্মক শ্বাসকষ্টে। বুধবার ভোর রাতে তাকে পরিবারের লোকেরা নিয়ে আসেন চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা তাকে নেবুলাইজেশন দিতে চেষ্টা করেন। লাভ হয়নি। দ্রুত নন ইনভ্যাসিভ ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। তাতেও বাড়ছিল না অক্সিজেন স্যাচুরেশন। পিজিটি ডা. সব্যসাচী ভট্টাচার্য প্রথমে সন্দেহ করেন নিশ্চয় কোথাও কোনও গণ্ডগোল রয়েছে। ল্যারিঙ্গোস্কোপ দিয়ে দেখা যায় সন্দেহ সত্যি। খেলনার একটা টুকরো আটকে ছিল মোক্ষম জায়গায়। ভোকাল কর্ড আর ল্যারিংক্সের মাঝে আটকে সেই প্লাস্টিকের খেলনার টুকরো। যা বের করার ‘টেকনিক’ জানেন ইএনটি বিশেষজ্ঞ। কিন্তু এখানে তো সবাই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ! অত রাতে চিত্তরঞ্জন শিশু সদনে ইএনটি বিশেষজ্ঞ কোথায়?
কাছাকাছির মধ্যে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম। সেখানে ইএনটি বিভাগে এমন অস্ত্রোপচার গা সওয়া। কিন্তু অত ছোট শিশুকে মধ্যরাতে সেখানে পাঠানোর ঝুঁকি নেননি চিকিৎসকরা। ঠিক করেন নিজেরাই বের করবেন খেলনার টুকরো। সেইমতো পিজিটি ডা. সুস্মিতা মিশ্র, ডা. মুক্তাদির রহমান, পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের টেকনিশিয়ান বিশ্বজিৎ পাল আর নার্সিং সিস্টার তৈরি হন। দক্ষ হাতে সন্তপর্ণে ফরসেপ ঢুকিয়ে দেন শিশুর মুখের মধ্যে এপিগ্লটিসের নিচে। প্রথমটায় বেরেয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় চেষ্টায় কিস্তিমাত। বের করে আনা হয় প্লাস্টিকের খেলনার টুকরো। মুহূর্তে বেড়ে যায় অক্সিজেন স্যাচুরেশন। হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শুভাশিস ভট্টাচার্য্ জানিয়েছেন, “সকলে পেডিয়াট্রিশিয়ান। এটা ইএনটিদের কাজ। কিন্তু আমরা গর্বিত বাচ্চাটিকে রেফার করা হয়নি। অক্সিজেন স্যাচুরেশন এত কম ছিল রেফার করা হলে ঝুঁকির বিষয় হয়ে যেত।” চিত্তরঞ্জন সেবা সদনের পক্ষ থেকে ডা. ঐশ্বর্য মজুমদার জানিয়েছেন, “সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারার জন্য পিজিটিদের কুর্নিশ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.