অর্ণব আইচ: র্যাগিং হয়েছিল তিনটি ঘরে। গত ৯ আগস্ট রাতে যাদবপুরের মেইন হস্টেলে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রটিকে একটি ঘরে র্যাগিং হয়নি। প্রথমে ১০৪ নম্বর ঘর ও তারপর ৬১ এবং ৭০ নম্বর ঘরে নিয়ে গিয়ে করা হয় র্যাগিং। তদন্তে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে পুলিশের হাতে। পুলিশ ওই ঘরগুলিকে শনাক্ত করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ৯ আগস্ট মৃত পড়ুয়া এসে হস্টেলের ‘দাদা’দের জানায়, বাংলা বিভাগে তার সিনিয়র রুদ্র চট্টোপাধ্যায় তাকে হস্টেল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এরপর রাজনৈতিক কারণে হস্টেলের ‘দাদা’ সৌরভ চৌধুরীর নির্দেশে ওই পড়ুয়াকে তার নিজের ৬৮ নম্বর ঘর থেকে ডেকে চারতলায় ১০৪ ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে ‘রুদ্রদা’র বিরুদ্ধে মন্তব্য করেই চিঠি লিখতে বলা হয়। ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে ধৃত যাদবপুরের মেইন হস্টেলের দুই প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরি ও সপ্তক কামিল্যা চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নেয়। ডায়েরির পাতায় ওই ছাত্র বানান ভুল করার পর জানায়, সে লিখতে পারছে না। তখন দীপশেখর দত্ত নামে ছাত্রটি সেই চিঠিটি লেখে।
তার দাবি, চিঠিতে সইটি ওই মৃত নাবালক ছাত্রের। যদিও তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পুলিশের। রাত দশটা নাগাদ শুরু হয় ওই চিঠি লেখালেখির পর্ব। এর মধ্যেই তার র্যাগিং চলে। এরপর তাকে নামিয়ে আনা হয় তিনতলায়। প্রথমে ৬১ নম্বর ঘরে তার ‘ইন্ট্রো’ নেওয়া শুরু হয়। সেখানেই তাকে বলা হয়, সে সমকামী। এই দাবির বিরুদ্ধে তাকে প্রমাণ দাখিল করতে বলা হয়। ‘দাদা’রা নিদান হাঁকে, সে কোনও অন্তর্বাস পরতে পারবে না। এই ব্যাপারে তার উপর বেশ কিছুক্ষণ মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। রাত প্রায় সোয়া এগারোটা নাগাদ তাকে ফের নিয়ে যাওয়া হয় ৭০ নম্বর ঘরটিতে। সেখানে ফের ‘ইন্ট্রো’ নেওয়া শুরু হয়। প্রথমে কয়েকজন ধৃত জানায়, ওই পড়ুয়া নিজে নিজের জামাকাপড় খুলে ফেলে অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। যদিও পরবর্তী সময়ে পুলিশ অন্যদের জেরা করে জানতে পারে যে, ৭০ নম্বর ঘরেই তাকে জোর করে বিবস্ত্র করা হয়।
ওই ছাত্রটির ‘সমকামিতা থেকে মুক্তি দিতে’ বিভিন্ন নিদান হাঁকতে থাকে প্রাক্তনী দাদারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য বিভাগের ছাত্র তথা হস্টেলের আবাসিকরা। প্রথমে তাকে শুধুমাত্র একটি গামছা পরে থাকতে বলা হয়। এরপর তার গামছা খুলে বিবস্ত্র অবস্থায় বারান্দা দিয়ে প্যারেড করতে ও দৌড়তে বলা হয়। ওই হস্টেলে থাকা কয়েকজন প্রথম বর্ষের ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও এই ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে পুলিশ। কারণ, তারাও একই ধরনের র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছে, এমনই তথ্য এসেছে পুলিশের হাতে। প্রত্যেক নতুন ছাত্রকেই ঘরে ঘরে ঘুরে ইন্ট্রো দিতে হয়। ‘দাদা’দের ইচ্ছামতো তাদের ফাইফরমাশও খাটতে হয় নতুনদের। এই ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.