অর্ণব আইচ: চর্মরোগ, যৌনরোগ থেকে কালান্তক এডস। বিবিধ ছোঁয়াচে রোগের আঁতুর বলে যে তল্লাটের বদনাম, তারাই দেখিয়ে দিল! করোনাকে দূরে ঠেকিয়ে রেখে নজির গড়ল সোনাগাছির যৌনপল্লি। আশপাশের এলাকার বহু বাসিন্দা আক্রান্ত হলেও সোনাগাছির যৌনকর্মীদের এখনও ছুঁতে পারেনি COVID-19। সৌজন্য, কারবারে রাশ টেনে কঠোর সংযম এবং বহিরাগতের আনাগোনায় দুর্দম নিয়ন্ত্রণ।
তাঁদের এই বজ্র আঁটুনির সুফল দেখে ভরসা পেয়েছেন বাসিন্দারা। যে কারণে আগামী জুন মাস পর্যন্ত পুরো সোনাগাছিকে তাঁরা ‘আইসোলেশন’-এ রাখতে চান। যাতে আরও দু’মাস বাইরের কোনও খদ্দেরের পা এখানে না পড়ে। যৌনকর্মীদের সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা চিকিৎসক ডা. স্মরজিৎ জানা জানিয়েছেন, জুন পর্যন্ত বাইরের লোকের প্রবেশ বন্ধ থাকলে যৌনপল্লিতে পরবর্তী সময়েও করোনা রোখা যাবে। ওই সময়টুকু পর্যন্ত যাতে যৌনকর্মীদের খাওয়াদাওয়ার অসুবিধা না হয়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: করোনা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দিতে হেল্পলাইন চালু করল বঙ্গ বিজেপি]
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, বড়তলা থানা এলাকার দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, রবীন্দ্র সরণি, ইমাম বক্স লেন, নীলমণি মিত্র স্ট্রিট, জয় মিত্র স্ট্রিটের বাসিন্দাদের শরীরে ধরা পড়েছে করোনা। তাই ওই রাস্তাগুলি ও আশপাশের সোনাগাছি লেন, মসজিদ বাড়ি স্ট্রিট, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, গরানহাটা স্ট্রিটের মতো কিছু এলাকাও কনটেনমেন্ট এরিয়া বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেই রাস্তাগুলি। পুলিশ জানিয়েছে, যাঁদের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে কেউ বয়স্ক ব্যক্তি, আবার কারও বা বয়স কম। কিন্তু কোনও যৌনকর্মীর শরীরে এখনও পর্যন্ত ধরা পড়েনি করোনা। পুলিশের ধারণা, যৌনকর্মীদের করোনা রোধের প্রধান সম্ভাব্য কারণ ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’, যা প্রথম থেকেই শুরু করেছেন তাঁরা। এঁদের একটি অংশ লকডাউন শুরু হওয়ার মুহূর্তে, এমনকী, পরেও পরিচিত ও ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কোনওভাবে চলে গিয়েছেন নিজেদের বাড়িতে। যাঁরা সোনাগাছিতে রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের সম্পূর্ণ ঘরবন্দি করে ফেলেছেন।
[আরও পড়ুন: আয়ুশেই ম্যাজিক, কোয়ারেন্টাইনে থাকা ২৬ জনই করোনা নেগেটিভ]
দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির অ্যাডভোকেসি অফিসার মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় জানান, লকডাউনের অনেক আগে যখন করোনা সবে দেশে ধরা পড়তে শুরু করেছে, তখনই সোনাগাছি-সহ রাজ্যের প্রত্যেকটি যৌনপল্লির যৌনকর্মীদের বিশেষভাবে সচেতন করা হয়। তখনও যৌনপল্লি চালু ছিল। বলা হয়, পরিচিত ব্যক্তি ছাড়া অনে কাউকে ঘরে ঢুকতে না দেওয়াই ভাল। যে ব্যক্তি ঘরে আসবে, তাঁর জ্বর বা কাশি না থাকলেও তাঁকে চলে যেতে বলতে হবে।
এ ছাড়াও প্রতিদিন জামাকাপড়, বিছানার চাদর সাবান দিয়ে ধোয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। ডা. স্মরজিৎ জানা বলেন, দুর্বারের যে টিম এইডস নিয়ে কাজ করে, সেই টিম সোনাগাছি ও অন্য যৌনপল্লিগুলির ঘরে ঘরে গিয়ে সচেতনতার প্রচার চালিয়েছে। এইচআইভি নিয়ে যৌনকর্মীরা যতটা সতর্ক থাকেন, করোনা নিয়েও ততটা সতর্ক থাকতে বলা হয় তাঁদের। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে সতর্ক হয়েই বাইরের লোকের যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন যৌনকর্মীরা। তার ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের বলা হয়েছে এপ্রিল থেকে তিন মাস এই অবস্থায় ঘরবন্দি হয়েই থাকতে। এর পরও যেন যৌনপল্লিতে করোনা সংক্রমণ না হয়, সেই বিষয়টির উপরও নজর রাখতে বলছেন চিকিৎসকরা।