Advertisement
Advertisement

Breaking News

School

পোশাক ফতোয়ায় এক মাস কর্মহীন শিক্ষিকা, কলকাতার স্কুলে প্রধান শিক্ষিকার নির্দেশে বিতর্ক

সমালোচনায় সরব হয়েছেন রাজ্যের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরাও।

Question arises regarding clothing of teacher while teaching in New Alipore school | Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী।

Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:April 5, 2023 10:54 am
  • Updated:April 5, 2023 10:54 am

স্টাফ রিপোর্টার: শাড়ি পরতেই হবে। সালোয়ার কামিজ পরে এলে ক্লাস নিতে দেওয়া হবে না। খাস কলকাতার বুকে পরিধেয় নিয়ে এমনই ‘ফতোয়া’ দিয়েছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তা মানতে রাজি হননি স্কুলের গানের শিক্ষিকা। যে ‘অপরাধের’ শাস্তি হিসাবে তাঁকে প্রায় এক মাস ক্লাস নিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। নিউ আলিপুরের (New Alipore) স্কুলটির গানের দিদিমণি সোমা ভাদুড়ীর আরও আক্ষেপ, তাঁর সব ক্লাস এ ভাবে বাতিল করার প্রতিকারের জন‌্য মানবাধিকার সংগঠন, রাজ্য মহিলা কমিশন, পুলিশ এবং জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে দরবার করেও লাভ হয়নি, স্কুলে পরিস্থিতি বিন্দুমাত্র বদলায়নি। ঘটনা শুনে সমালোচনায় সরব হয়েছেন রাজ্যের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরাও।

পোশাক-বিতর্কে আগেও শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উত্তাল হয়েছে। এ বারের ঘটনাস্থল নিউ আলিপুরের বিদ্যাভারতী গার্লস হাই স্কুল। রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের অধীনস্থ বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটির প্রাতঃবিভাগে আঠারো বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন সহ-শিক্ষিকা সোমা ভাদুড়ী। তিনি জানান, সমস্যার সূত্রপাত গত ২১ ফেব্রুয়ারি। সকালে স্কুলে আসার সময় ভিড় বাসে পায়ে শাড়ি জড়িয়ে যায়। সহযাত্রীদের তৎপরতায় বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ালেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। সে দিনই প্রধান শিক্ষিকাকে চিঠি লিখে ঘটনাটি উল্লেখ করে জানিয়ে দেন, পরের দিন থেকে ‘কর্মক্ষেত্রের উপযুক্ত বিকল্প পোশাক’ তথা সালোয়ার কামিজ পরে আসবেন। সোমাদেবীর অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে জানানো হয়, শাড়ি ছাড়া অন্য কোনও পোশাকে এলে ক্লাস নিতে দেওয়া হবে না। ‘‘প্রধান শিক্ষিকা আমায় জানান, স্কুলের ঐতিহ্য বজায় রেখে শাড়ি পরেই আসতে হবে। এ-ও পরামর্শ দেওয়া হয়, সালোয়ার কামিজ পরে স্কুলে এসে চেঞ্জ করে নেবেন।’’– বলেন সোমাদেবী।

Advertisement

[আরও পড়ুন: পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক স্বাস্থ্য শিক্ষা কেন্দ্রের তকমা জোকা ইএসআইকে, বিস্মিত স্বাস্থ্য প্রশাসন]

ইতিমধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। সোমাদেবী বলেন, ‘‘পরীক্ষার দিনগুলো শাড়ি পরেই গিয়েছিলাম। মাধ্যমিক শেষের পর বলে দেওয়া হল, সালোয়ার কামিজ পরে এলে ক্লাস করতে পারবেন না।’’ সেই ইস্তক তাঁকে একটাও ক্লাস করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ সংগীত শিক্ষিকার। তিনি জানাচ্ছেন, রোজ সালোয়ার কামিজ পরে স্কুলে গিয়ে কর্মহীন হয়ে বসে থাকতে হয়। উনি প্রাতঃবিভাগের একমাত্র গানের শিক্ষিকা, সপ্তাহে ১২টি ক্লাস নেওয়ার কথা। রুটিন পাল্টে গানের ক্লাসের সময়ে অন্য সাবজেক্টের ক্লাস দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা পড়ুয়াদের প্রতি বঞ্চনার শামিল। ওঁর কথায়, ‘‘ব্যক্তিগতভাবে শাড়ি পরতে ভালবাসি। এত বছর শাড়ি পরেই এসেছি। কিন্তু দৈনন্দিন কাজে, আমাকে ছুটতে হচ্ছে, তখন শাড়ি পরতে আমি বাধ্য নই। আমার সংবিধান স্বীকৃত অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এবং তা করতে গিয়ে বাচ্চাগুলোকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর থেকে ন‌্যক্ক‌ারজনক কিছু হয় না।’’ ওঁর দাবি, একাধিকবার প্রধান শিক্ষিকাকে মৌখিকভাবে ও লিখিতভাবে ক্লাস নিতে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে লাভ হয়নি।

Advertisement

কর্তৃপক্ষের কী বক্তব‌্য? স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মঙ্গলবার একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তোলেননি। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলও স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে দেখা করে বোঝানোর চেষ্টা করে ব‌্যর্থ হয়েছেন। এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, ‘‘যে কোনও মার্জিত, রুচিসম্মত পোশাক পরা সাংবিধানিক অধিকার।  আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কলকাতার মতো শহরে এই ধরনের তালিবানি ফতোয়া মেনে নেওয়া যায় না।’’ ওঁরা জানিয়েছেন, আলাপ-আলোচনায় সুরাহা না হলে বাধ‌্য হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। শেষ পর্যন্ত রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবে সংগঠন। 

[আরও পড়ুন: ‘আমরা আতঙ্কিত’, হাওড়া ও রিষড়া কাণ্ডে পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করে খোলা চিঠি অনির্বাণ-অপর্ণা-ঋদ্ধিদের]

রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘স্কুলে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চেয়েছি, ব্যাপারটা আসলে কী। যে কোনও রুচিসম্মত পোশাক পরা যেতেই পারে।  বরং যে পোশাকে বিপদ হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তা পরিহার করায় অন্যায় নেই। আপাতত আমরা শিক্ষিকার অভিযোগ পেয়েছি। একপক্ষের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের অপেক্ষায় রয়েছি।’’ তবে সোমাদেবী আপন অবস্থানে অনড়। এদিন তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘পরিস্থিতি যা-ই হোক, নিজের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় আমি শেষ পর্যন্ত যাব।’’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ