দীপঙ্কর মণ্ডল: কেউ ছোটবেলা থেকে ব্যাঙের ঝোলে অভ্যস্ত। কারও বা শেষপাতে আরশোলার চাটনি ছাড়া চলে না। কারও পছন্দ পিঁপড়ের ডিম ভাজা। কেঁচোর কাটলেট বা শুঁটকিমাছ না হলে কারও পেট ভরে না। আর অনেকের বিফ বা পর্ক ছাড়া কিছুই মুখে রোচে না।
রোচে তো না, কিন্তু জোগায় কে?
কলকাতার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা হাজারো বিদেশি পড়ুয়া তাই মহা আতান্তরে। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, মার্কিন মুলুক বা লাতিন আমেরিকার বহু ছেলেমেয়ে এখানে এসে স্থানীয় খাবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন না। অনেকে প্রাইভেট মেসে বা হস্টেল ক্যান্টিনে আধপেটা খেয়ে উদরপূর্তির তাগিদে দূর-দূরান্তে ছোটেন। সুরাহার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক দিন ধরেই আরজি জমা পড়ছিল। এবার নড়েচড়ে বসল রবীন্দ্রভারতী। বিদেশি ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য তাদের যে দু’টি আলাদা হস্টেল তৈরি হচ্ছে, সেখানে সব পড়ুয়ার রসনাতৃপ্তির যাবতীয় বন্দোবস্ত মজুত থাকবে। গোমাংস, শূকরের মাংস থেকে কাঁচা মাছ, পিঁপড়ের ডিম- চাইলেই পাতে পড়বে। রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরির কথায়, ‘সিঁথিতে ছাত্রীদের ও রাজারহাটে ছাত্রদের নতুন হস্টেলে সবার জন্য আলাদা রান্নাঘর থাকবে। বিদেশিরা নিজেদের পছন্দমতো জিনিস রান্না করে খেতে পারবেন।’
[চিংড়িঘাটায় দুর্ঘটনার জের, সরিয়ে দেওয়া হল বেলেঘাটা ট্রাফিক গার্ডের ওসিকে]
কলকাতা, যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও বিদেশি পডুয়ার ছড়াছড়ি। তাঁদের খাদ্যাভ্যাসের কথা মাথায় রেখে এহেন অভিনব সিদ্ধান্তটি অবশ্য রবীন্দ্রভারতী-ই প্রথম নিল। মানুষের খাদ্যাভ্যাস ঘিরে সম্প্রতি দেশে যে অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ ডানা মেলেছে, তার প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রভারতী কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপটিকে যুগান্তকারী, যুগোপযোগী ও অনুকরণীয় হিসেবে দেখছেন অনেকে। ‘পেট না ভরলে পড়াশোনা করা যায় না। অথচ বিদেশি বহু ছেলে-মেয়ে এখানে এসে ভালভাবে খেতে পারেন না। কারণ, প্রত্যেকের রুচি ও অভ্যাস মোতাবেক খাবার সরবরাহের পরিকাঠামো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।’- বলছেন রাজ্যের এক শিক্ষা-কর্তা। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, সমস্যার নিরসনে রবীন্দ্রভারতী যে ভাবে এগিয়ে এসেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সমস্ত ধর্ম-সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতার যে চিরন্তন ঐতিহ্য এই বাংলার সঙ্গে জড়িয়ে, রবীন্দ্রভারতীর সিদ্ধান্তে তারই প্রতিফলন দেখছেন শিক্ষামহলের বড় অংশ। বস্তুত খাদ্য হিসেবে সাপ, ব্যাং, বা আরশোলার তেমন প্রচলন এখানে নেই। এদিকে চিন-জাপান-কোরিয়ার মতো অনেক দেশে এগুলো অতি উপাদেয়। আফ্রিকা-এশিয়ার বহু জায়গায় কাঁচা গাছের পাতা, কাঁচা মাছ, পোকা-মাকড়, পিঁপড়ের ডিম রোজকার মেনুতে থাকে। আবার ইউরোপ-আমেরিকার ছেলে-মেয়েরা বিফ, পর্কে অভ্যস্ত। এদেশে পড়তে এসে তাঁরা যাতে ‘খাদ্যসংকটে’ না পড়েন, রবীন্দ্রভারতী কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করতে চায়। সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে এসে এমনিতেই বিদেশি ছেলে-মেয়েরা একটু বিভ্রান্ত থাকে। তার উপর পছন্দসই খাবার না পেলে দুর্গতি আরও বাড়ে। আমাদের চিঠি লিখে অনেকে এই সমস্যার কথা জানিয়েছে। তারই ভিত্তিতে আমরা কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
[যাদবপুরের নিখোঁজ ছাত্রীর খোঁজ মিলল বর্ধমানে, স্বস্তিতে পরিবার]
কী রকম?
রবীন্দ্রভারতীতে আপাতত শ’দুয়েক বিদেশি পড়ুয়া। আপাতত তাঁরা বিভিন্ন মেস, পরিচিতের বাড়ি বা গেস্টহাউসে রয়েছেন। ওঁদের জন্য দু’টি হস্টেল বানানো হচ্ছে। সিঁথি থানার কাছে হবে মেয়েদের হস্টেল। রাজারহাটে ছেলেদের। বছর দু’য়েকের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার আশা। হস্টেলগুলির বিশেষত্ব, প্রতি আবাসিকের নিজস্ব হেঁসেল থাকবে। বাজার থেকে উপকরণ কিনে যেখানে পছন্দের আইটেম রেঁধে ফেলা যাবে, অন্যদের অসুবিধায় না ফেলে। গরুর মাংস, শুয়োরের মাংস, ব্যাং কিংবা শুঁটকিমাছ ইচ্ছে হলেই খাওয়া যাবে। এমনকী, বিশেষ কিছু উপকরণ জোগান দেওয়ার জন্য কোনও এজেন্সির সাহায্যও নেওয়া হতে পারে। বাইরের লোকের কাছে হাত পেতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে না কাউকে। ফলে দূরদেশ থেকে আসা অল্পবয়সের ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তার দিকটাও খেয়ালে থাকবে বলে জানিয়েছেন সব্যসাচীবাবু।
[শীত সরতেই নতুন বিপদ, ধোঁয়া-ধুলোয় শ্বাসকষ্টে অতিষ্ঠ শহর]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.