স্টাফ রিপোর্টার: “এটা ঠিক হয়নি…” যেন দাদার কাছে বোনের আক্ষেপ। মহিষাসুরমর্দিনী রেকর্ড করে রাখাটা মেনে নিতে পারেননি গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, এ তো যখন-তখন যেখানে-সেখানে বাজছে। এর তো একটা আবেগ আছে।
মঙ্গলবার মহালয়ার সন্ধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র জাগো বাংলা ১৪২৪-এর উৎসব সংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠান। মঞ্চ আলো করে একদিকে বসে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মহিষাসুরমর্দিনীর বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী। উল্টোদিকে আরেক কিংবদন্তি শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। তাঁর কণ্ঠও রয়েছে এই অ্যালবামে। আসর জমেইছিল। মঞ্চে তখন মুগ্ধ শ্রোতা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরপর বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা উদ্বোধন করতে করতেই জাগো বাংলার উৎসব সংখ্যা প্রকাশ। তাঁদের ঘিরে রয়েছেন তৃণমূলের মন্ত্রী-সাংসদরা। শ্রোতার আসন কানায় কানায় পূর্ণ। কথা হচ্ছিল মহালয়ার শুরুর দিনের স্মৃতি নিয়ে। তখন সরাসরি আকাশবাণীতে ভেসে আসে শ্রী বীরুপাক্ষের মন্দ্রিত কণ্ঠ। চণ্ডীপাঠের মাঝেমাঝে একে একে শিল্পীদের গান। প্রথম প্রথম হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গাইতেন মহিষাসুরমর্দিনীতে। তার পর দ্বিজেনবাবু। সঙ্গে সন্ধ্যাদেবী। একটা সময়ের পরে গ্রামোফোন কোম্পানি মহালয়ার এই অনুষ্ঠান রেকর্ড করে নিল। সালটা ১৯৬৬।
[পুজোয় বাংলার ব্রতকথার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে শ্যামবাজার নবীন সংঘ]
গীতশ্রী বলে উঠলেন, “এই অনুষ্ঠান রেকর্ড করে ভাল করেননি। এটা ঠিক হয়নি।” তাঁর বক্তব্য, “এর একটা সময় আছে। ভোর চারটে থেকে জেগে থাকার একটা আবেগ আছে।”দ্বিজেনবাবুর পাল্টা যুক্তি, “এর তো একটা কমার্শিয়াল ভ্যালুও আছে। সেটা তো মানবে। গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে এটা পৌঁছে গেল।” তবু যেন মন গলল না বোনের। কন্ঠ নিয়ে যেমন তাঁর খুঁতখুঁতেমি। বয়সের ভারে শরীর নুব্জ্য। তবু মমতার অনুরোধে স্পষ্ট সুরে বেঁধে গাইলেন ‘শান্তি দিলে ভরি মাগো’!
মনে সেই খুঁতখুঁতেমি নিয়েই শ্রদ্ধেয় দাদার কাছে বোনের অনুযোগ, “যখন-তখন যেখানে সেখানে বাজছে মহিষাসুরমর্দিনী। শ্রাদ্ধে বাজছে, হোটেলে বাজছে, এখানে বাজছে, ওখানে বাজছে। এর তো একটা পরিবেশ-পরিস্থিতি আছে।” মহিষাসুরমর্দিনীর সেই মাহাত্ম্যের কথা দ্বিজেনবাবুও বললেন। তাঁর কথায়, “যতদিন বাঙালি থাকবে, ততদিন মহালয়ার মহিমা থাকবে। বিশ্বের কাছে তা বন্দিত হবে। এটা একটা সেনসেশন তৈরি করে।”
যার রেশ ধরে পরে দ্বিজেনবাবু ফোনে জানান, “মহিষাসুরমর্দিনী রেকর্ড না করে উপায় ছিল না। বাস্তবটা বুঝতে হবে। সরাসরি অনুষ্ঠান করার নানা ঝক্কি। সবসময় সব শিল্পীকে পাওয়া যেত না। তা ছাড়া এখন কী সুন্দর রেকর্ডের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বাঙালির গর্বের বিষয় এটা।”
এই কথোপকথন শেষে মুখ্যমন্ত্রী দু’জনকেই শ্রদ্ধা জানান। তার পর জাগো বাংলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে নিজের লড়াই-আন্দোলনের জীবনের কথা তুলে আনেন। মমতা বলেন, “এটা একটা আবেগের জায়গা। সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় ধরনা দিতে দিতেই জাগো বাংলায় পোস্ট এডিট লিখেছি। তখনই বুঝেছিলাম, দলের কথা বলার জন্য একটা বলিষ্ঠ মুখপত্র দরকার।” শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু বসুর লেখার প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্বেদ রায়, বেচারাম মান্নার মতো দলের নেতাদের পাশাপাশি সুধাংশুশেখর দে, ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রকাশক শিক্ষাবিদদের জাগো বাংলায় লেখার কথা বলেন।
[পুজোয় শান্তি নামক ধরায় নিয়ে যাবে খিদিরপুরের পল্লি শারদীয়া]
এর পরই আরেক কাণ্ড। বন্যায় দুর্গতদের উদ্ধারে, তাঁদের পরিষেবা দিতে বারবার বিভিন্ন জেলায় ছুটে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তা নিয়ে প্রশংসায় মমতাকে ভরিয়ে দেন গীতশ্রী। অনুরোধ করেন চণ্ডীপাঠ শুনবেন তাঁর কণ্ঠে। সেই অনুরোধ রেখে রাজ্যের সকলকে শুভকামনা জানিয়ে স্তোত্রপাঠ করেন মমতা। এদিন নাকতলা উদয়ন সংঘ, হিন্দুস্থান ক্লাব, চেতলা অগ্রণীর মতো বেশ কিছু পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে বলেন, “কেউ কোনওরকম উস্কানিতে পা দেবেন না। শান্তি বজায় রাখবেন। প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.