অনির্বাণ বিশ্বাস ও অরিজিৎ গুপ্ত: ফের রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া! এবার হাওড়ায়। মায়ের মৃতদেহ কম্বল চাপা দিয়ে ঘরের মধ্যে রেখে দিলেন ছেলে। প্রায় চারদিন এভাবেই বাড়িতে শোয়ানো ছিল ৮০ বছরের মৃত সন্ধ্যারানি বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শনিবার সকালে এমন বিস্ফোরক ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই এলাকায় ছড়ায় চাঞ্চল্য।
ঘটনা হাওড়ার শিবপুরের ব্যাতাইতলা ফাঁড়ি এলাকায়। এদিন সকালে ১/৯ বলাই মিস্ত্রি লেনের বহুতলের নিচের ফ্ল্যাট থেকে পচা গন্ধ বের হতে থাকে। তখনই সন্দেহ হয় প্রতিবেশীরদের। প্রতিবেশী গৌরীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথমে অনুমান করেন, নিচের তলার বাসিন্দা সন্ধ্যারানিদেবী ও তাঁর ছেলে অপূর্ব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু হয়েছে বলে। এরপরই অপূর্বর নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করেন স্থানীয়রা। প্রথমে দরজাই খুলতে চাইছিলেন না ছেলে। তবে ধাক্কাধাক্কি করাতে রেগে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন অপূর্ব। তখনই ঘরের ভিতর জমে থাকা গুমোট পচা গন্ধ আরও প্রকোট হয়ে ওঠে। এরপরই প্রতিবেশীরা অপূর্বকে লোহার গ্রিল গেট খুলতে বলেন। রীতিমতো জোর করে ভিতরে ঢোকেন তাঁরা।
ঘরের ভিতর তাঁরা দেখেন, খাটের উপর কম্বল, তোশক ও বিছানার চাদর দিয়ে মুড়িয়ে রাখা সন্ধ্যারানিদেবীর মৃতদেহ। এরপরই খবর দেওয়া হয় শিবপুর থানার পুলিশকে। পুলিশ আসার পরও ঘটনাস্থলে মৃতদেহ পড়েছিল বেলা দু’টো পর্যন্ত। পুলিশের গড়িমসি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। অপূর্ব বলেন, “গত বৃহস্পতিবার রাত ১২ টা নাগাদ মারা গিয়েছেন মা। অসুস্থ ছিলেন জুলাই মাসের প্রথম থেকেই। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। এমনকী স্থানীয় চিকিৎসক অভিজিৎ ঘোষকেও দেখানো হয়। তিনি মাকে হাসপাতালে ভরতির কথা বলেছিলেন। কিন্তু মা ভরতি হতে রাজি হননি।” যদিও অপূর্বর এই সব কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ প্রতিবেশীরা। তাঁদের একাংশের দাবি, অপূর্বর মানসিক ভারসাম্য ঠিক নেই। পাশাপাশি তাঁদের প্রশ্ন, তাঁর মা বৃহস্পতিবার রাতেই মারা গিয়ে থাকলে কাউকে খবর দেননি কেন অপূর্ব। যদিও অপূর্ব দাবি করেছেন, “আত্মীয়দের ফোন করেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আসেননি।” প্রতিবেশীদের বক্তব্য, তাঁদের শুক্রবার কিছু জানানো হয়নি।
প্রতিবেশীদের কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে বলাই মিস্ত্রি লেনে থাকার জন্য ফ্ল্যাট কেনেন অপূর্ব ও তাঁর মা। এর আগে তাঁরা থাকতেন ভবানীপুর এলাকায়। অপূর্বর বাবা অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কয়লা ব্যবসায়ী। রানিগঞ্জে একটি কয়লা খনিতে তাঁদের শেয়ার ছিল বলেও জানা গিয়েছে। ১৯৯৫ সালে মারা যান অশোকবাবু। এরপর ২০০৫ সাল নাগাদ খুন হন অপূর্বর দাদা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। অপূর্বর দাবি, দক্ষিণ কলকাতার লেকের জলে ডুবিয়ে খুন করা হয় দাদাকে। যদিও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, রানিগঞ্জে বাবার ব্যবসা সামলাতে গিয়েই খুন হন অভিজিৎ। এদিন ঘটনার খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসেন অভিজিৎবাবুর স্ত্রী দীপশিখা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অপূর্বর কাছে জানতে চান কেন তিনি ফোন ধরছিলেন না। অপূর্ব বলেন, মোবাইল আলমারিতে তুলে রাখা আছে। আর এতেই প্রতিবেশীদের বক্তব্য, অপূর্বর কোনও কথার সঙ্গে অন্য কথার সামঞ্জস্য নেই।
প্রসঙ্গত ২০১৫ সালের জুন মাসে ৩ নম্বর রবিনসন স্ট্রিটেও এমনই ঘটনা ঘটেছিল। ৬ মাস ধরে দিদি ও পোষ্য সারমেয়র দেহর সঙ্গে একই ঘরে বাস করছিলেন ওই বাড়ির বাসিন্দা পার্থ দে। কঙ্কালে পরিণত হয়ে যাওয়া দেহ দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় পুলিশের। এবার হাওড়ায় তেমনই শিউরে ওঠার ঘটনা সামনে এল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.