স্টাফ রিপোর্টার: প্রায় আড়াই বছরের ব্যবধান। রবিনসন স্ট্রিট যেন ফিরে এল টালায়। মায়ের গলিত দেহ আঁকড়ে থাকা ছেলেকে ঘিরে। যা দেখে স্বভাবতই উসকে উঠছে ২০১৫ সালে রবিনসন স্ট্রিটের সেই কঙ্কাল কাণ্ডের স্মৃতি। দিদি দেবযানীর কঙ্কাল ৬ মাস ধরে আগলে রেখেছিলেন পার্থ দে। টালার ঘটনায় অবশ্য অতদিন নয়। কয়েকদিন আগে মারা যাওয়া মায়ের শব পাশে নিয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন অনির্বাণ বসু। বছর চল্লিশের যুবকটি মানসিক ভারসাম্যহীন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তদন্তকারীদের প্রাথমিক ধারণা, তাঁর মা মীরা বসু (৬৭) অসুস্থতার কারণেই মারা গিয়েছেন। তবে অন্য সমস্ত সম্ভাবনাই পুলিশ খতিয়ে দেখেছে।
[মিলল না মিড ডে মিল, গরম কড়াইয়ে পড়ে গেল ৬ বছরের পড়ুয়া]
বস্তুত পড়শিরাও আঁচ পাননি। যদিও পচা গন্ধ আগেই পেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মঙ্গলবার সহ্যের সীমা ছাড়াতেই খবর গেল পুলিশের কাছে। উত্তর কলকাতার টালা থানার পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেহটি উদ্ধার করতে গিয়েই হতবাক হয়ে যায়। বৃদ্ধা মীরা বসুর গলিত দেহের পাশেই ঘোরাঘুরি করছেন তাঁর ছেলে অনির্বাণ। বিশ্বাসও করতে চাইছেন না যে, মৃত্যু হয়েছে তাঁর মায়ের। একেই প্রচণ্ড পচা গন্ধ, তার উপর নাছোড়বান্দা ছেলের কাছ থেকে মায়ের দেহটি উদ্ধার করতে গিয়ে রীতিমতো বেগ পেতে হয় পুলিশকে। দেহটি কতদিনের পুরনো, তা নিয়েও ধন্দে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধার। যদিও এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, পাঁচদিন আগে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। অনেক আগে থেকেই তাঁরা পচা গন্ধ পেয়েছিলেন। কিন্তু বুঝতে পারেননি।
এই বিষয়ে ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ জানান, বৃদ্ধার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই মৃত্যুর কারণ বোঝা যাবে। পুলিশ জানিয়েছে, টালা থানা এলাকার রাজা মণীন্দ্র রোডের একটি হাউসিংয়ের একতলার ফ্ল্যাটে ছেলেকে নিয়ে থাকতেন বৃদ্ধা। বছর চারেক আগে বৃদ্ধার স্বামীর মৃত্যু হয়। প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, আগে তাঁরা ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু বৃদ্ধার সঙ্গে তাঁরা দেখা করতে গেলেই প্রথমে খারাপ ব্যবহার করতেন মানসিক ভারসাম্যহীন অনির্বাণ। পরে তিনি প্রতিবেশীদের দিকে তেড়েও যেতেন। ফলে বৃদ্ধার কাছে আর বিশেষ কেউ যেতেন না। জমানো টাকা দিয়ে কোনওমতে খাওয়া চলত মা-ছেলের। বেশিরভাগ দিন খাওয়াও জুটত না। বহু আগেই কেটে দেওয়া হয়েছিল ফ্ল্যাটের বিদু্যৎ সংযোগ।
পুলিশের ধারণা, বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু টাকা ও দেখাশোনার লোকের অভাবে তাঁরা চিকিৎসাও হচ্ছিল না। বাড়িতে আসবাবপত্র বিশেষ ছিল না। বৃদ্ধার দেহও পড়ে ছিল মেঝেয়। একটি সূত্র জানিয়েছে, দেহে মাছির লার্ভাও পাওয়া গিয়েছে। ফলে দেহটি বেশ কয়েকদিনের পুরনো তা বোঝাই যাচ্ছে। মায়ের মৃত্যুর পর দেহ যখন পচতে শুরু করে, তখনও ছেলে মায়ের সঙ্গেই ছিলেন। মায়ের দেহ ছেড়েও যেতে চাননি। এমনকী, পুলিশ দেখেও প্রথমে তেড়ে যান। যদিও তাঁকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পুলিশ বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার করে। অনির্বাণকে উদ্ধার করে তাঁকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[জঙ্গি সন্ধানে এই তিন জেলার পাসপোর্ট খতিয়ে দেখবে পুলিশ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.