ছবিটি প্রতীকী
সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: বড়দিন বা ইংরেজি বর্ষবরণের রাতে কোনও নাইট ক্লাব, হোটেল বা ক্লাব থেকে আপনি আকণ্ঠ মদ্যপান করে বাইরে বের হয়ে চরম বেলেল্লাপনা করছেন? কিংবা সুন্দরী কোনও মহিলাকে দেখে নিজের প্রাকৃতিক স্পৃহাকে সংযত করতে না পেরে সেই মহিলার হাত ধরে টানাটানি করছেন?
সাবধান! সাদা পোশাকের গোয়েন্দা কিংবা ছদ্মবেশী মহিলা পুলিশ ছাড়াও আপনার বেলেল্লাপনার উপর কিন্তু কড়া নজর রেখে চলেছে লালবাজারের সিসিটিভির গোপন ক্যামেরা। ভাববেন না, রাতের নির্জন রাস্তাতেও আপনার পিছনেও নেই পুলিশের চোখ। সেখানেও রাস্তার গোপন স্থান থেকে আপনার উপর কড়া নজর রাখছে পুলিশের ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা দেখে লালবাজারের ওসি কন্ট্রোল রুমে বসেই আপনার বেলেল্লাপনার উপর কড়া নজর রেখে চলেছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা। একটু বেগতিক দেখলেই আর রক্ষে নেই। বড়দিন বা বর্ষবরণ রাতে আনন্দ করতে এসে আপনার ঠাঁই হবে শ্রীঘরে। শুধু তাই নয়, মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি ও মোটরবাইক চালালেও এবার থাকছে কড়া পুলিশি ব্যবস্থা। কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা তো হবেই, সেই সঙ্গে হতে পারে হাজতবাসও। এই কড়া সতর্কতার কারণে কাল, রবিবার থেকেই পথে নামছে পুলিশ। বড়দিনে থাকছে বাড়তি পুলিশি ব্যবস্থা। অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য শহরের সমস্ত নাইট ক্লাব, হোটেল, ক্লাব এবং রেস্টুরেন্ট কর্তাদেরও লালবাজারে ডেকে সতর্ক করে দেন পুলিশকর্তারা।
শুধুমাত্র কলকাতা নয়। গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে কিছুটা হলেও জৌলুস হারিয়েছে পার্ক স্ট্রিট। সেই জৌলুস এখন ছড়িয়ে পড়েছে চায়না টাউন, বিধাননগর সিটি পুলিশের আওতাধীন লেকটাউন, বাগুইআটি চত্বরেও। এমনকী ইএম বাইপাস লাগোয়া পানশালাগুলিতেও এখন চলে জমজমাট বর্ষবরণের পার্টি। সেই পার্টিগুলির উপরেও এবার রাখা হচ্ছে কড়া পুলিশি নজরদারি। আইপিএস কর্তা জ্ঞানবন্ত সিং বিধাননগর সিটি পুলিশের কমিশনার হয়ে আসার পরেই সেখানকার পানশালাগুলির উপর কড়া ব্যবস্থা নেন। গত মার্চ মাসে বিধাননগরে ‘বার ব্যারন’ জগজিৎ সিংয়ের পানশালায় কলকাতারই দু’টি দুষ্কৃতী দলের মধ্যে ‘গ্যাং ওয়্যার’ হয়। রাত ১২টা থেকে শুরু করে ২টো পর্যন্ত টানা দু’ঘণ্টা ধরে দু’দল দুষ্কৃতীর মধ্যে চলে গুলির লড়াই। এই ঘটনার পর বেপাত্তা হয়ে যায় জগজিৎ ও তার ছেলে। বিধাননগর সিটি পুলিশ দিল্লি থেকে জগজিৎকে এবং বাঁকুড়া থেকে তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকেই বিধাননগর এলাকায় বেআইনি পানশালাগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। বিধাননগর এলাকায় একটি সময় ছিল প্রায় ৫০টি পানশালা।
তার মধ্যে শুধুমাত্র বাগুইআটি থানা এলাকায় পানশালা ছিল ২২টি। পুলিশ জানতে পারে, কলকাতার অধিকাংশ দুষ্কৃতী রাতের আঁধারে ওই সমস্ত পানশালায় গিয়ে মদ্যপান ও নাচা-গানায় অংশ নেয়। তখনই নড়েচড়ে বসে বিধাননগর সিটি পুলিশ। বিধাননগরের ডিসি-সদর অমিত জাভালগি জানান, “তদন্তে আমরা দেখেছিলাম, বেশিরভাগ পানশালাই সরকারি নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে চালানো হয় না। ওই সমস্ত পানশালাগুলি বেআইনিভাবে চলে গভীর রাত পর্যন্ত। তখনই আমরা ২০টির বেশি পানশালার লাইসেন্স বাতিল করে দিই। মামলা দায়ের হয় ওই সমস্ত পানশালার মালিকদের বিরুদ্ধেও।” বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিং জানান, “পাশাপাশি আমরা বড়দিন ও বর্ষবরণের রাতেও সতর্ক হয়ে কড়া পুলিশি ব্যবস্থা রাখছি। থাকছে সাদা পোশাকের গোয়েন্দাও। মদ্যপান করে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধাননগর ছাড়াও হাওড়া, বারাকপুর, বারাসত, জোকা প্রভৃতি এলাকাতেও বড়দিন ও বর্ষবরণের রাতে থাকছে পুলিশি নজরদারি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.