সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নিরাপদে থাকবে সন্তান। এই ভরসা করেই নামী স্কুলে মেয়েকে ভরতি করেছিলেন অভিভাবক। সেই স্কুলেরই দুই শিক্ষক নিদারুণ নির্যাতন করেছে তাঁর মেয়ের উপর। দুধের শিশুকে চকোলেটের লোভ দেখিয়ে প্রথমে পর্নোগ্রাফি দেখানো হয়েছে। তারপর প্যান্ট খুলে আঙুল ঢোকানো হয়েছে গোপনাঙ্গে। তা জানার পর থেকেই চোখের জল বাঁধ মানছে না বছর চারেকের খুদে ছাত্রীর বাবার। সকলের কাছে তাঁর প্রশ্ন, এমন অমানবিক মানুষ কী করে হতে পারে?
[ চকোলেটের লোভ দেখিয়ে শিশুকে যৌন নির্যাতন দুই শিক্ষকের ]
খোদ কলকাতার বুকে এরকম ঘটনায় ভয়ের ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গিয়েছে অভিভাবকের শিরদাঁড়া দিয়ে। প্রায় প্রত্যেক অভিভাবকই বিশ্বাসে ভর করে সন্তানকে স্কুলে পাঠান। দিনের বেশিরভাগ সময় চোখের আড়ালেই থাকে বাচ্চারা। সেখানেই যদি শিশুরা নিরাপদ না হয়, তাহলে আর সুরক্ষা কোথায়? প্রশ্ন অভিভাবকদের। স্কুলের সামনে দফায় দফায় চলছে বিক্ষোভ। অভিভাবকরা জানাচ্ছেন, ২০১৫ সালেও অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল। তারপরও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কতদিনে সিসিটিভি বসবে কেউ জানেন না। এদিকে সিসিটিভি না থাকাতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে জোরাল প্রমাণও পাচ্ছে না পুলিশ। ইতিমধ্যে পুলিশকে বয়ান দিয়েছে নির্যাতিতা শিশু। পুরো ঘটনাই সে খুলে বলতে পেরেছে। তার শারীরিক পরীক্ষাও হয়েছে। তাতে যৌন নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট। তাকে চারটি ছবি দেখানো হয়। তা থেকে দু’জন শিক্ষককে সে চিহ্নিতও করতে পরেছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে ইতিমধ্যে অশিক্ষক কর্মচারী-সহ নয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে যাদবপুর থানার পুলিশ। এদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষর থেকে লিখিত বিবৃতির দাবিতে বিক্ষোভ জোরদার করেছেন অভিভাবকরা।
[ অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি জি ডি বিড়লা স্কুল, ফুঁসছেন অভিভাবকরা ]
পুরো ঘটনায় কার্যত ভেঙে পড়েছেন শিশুটির বাবা। জানাচ্ছেন, তাঁর মেয়ের হৃদযন্ত্রে ফুটো আছে। ভরসা করেই নামী স্কুলে নিজের সন্তানকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। ভরতির খরচ প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। কিন্তু তার এই পরিণাম? এত অমানবিক কীভাবে হতে পারে কেউ? সব সীমা ওই শিক্ষকরা পেরিয়ে গিয়েছেন বলেই ক্ষোভ উগরে দেন শিশুটির বাবা। এদিকে ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, “নিন্দা করারও ভাষা নেই। চাই কঠোরতম শাস্তি হোক। এরকম কামনা, লিপ্সা যাদের থাকে, শিক্ষাঙ্গনে যেন তারা পা না রাখে।” ইতিমধ্যেই তিন সদস্যের দল পাঠানো হয়েছে স্কুলে। পর্ষদের ওই দল তদন্ত করছে পুরো ঘটনার। শিশুসুরক্ষা বিধি বেসরকারি স্কুলে ঠিকঠাক মানা হয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সিসিটিভি না থাকায় গোড়াতেই গাফিলতি স্পষ্ট। সেক্ষেত্রে কঠোরতম শাস্তির মুখেই পড়তে চলেছে জিডি বিড়লা স্কুল।
[ বহু দিন পর ভারতীয় রেলে বড় মাপের নিয়োগ, শূন্যপদ কত জানেন? ]
এদিকে নির্ভয়া কাণ্ডের পর ধর্ষণের সংজ্ঞায় বদল এসেছে। স্কুলের এই ঘটনায় প্রথমে এক শিক্ষকের নামই উঠে এসেছিল। অভিষেক রায় নামে ওই শিক্ষক বোলপুরের বাসিন্দা। থাকতেন সোনারপুরে। তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে আরও এক শিক্ষকের কথা উঠে এসেছে। দু’জনে মিলেই যৌন নির্যাতন চালিয়েছে শিশুটির উপর। সেক্ষেত্রে এই ঘটনা গণধর্ষণের সমতুল্য হতে পারেও বলে দাবি আইনজীবীদের একাংশের। পকসো আইনেও মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশি তদন্তে শিক্ষকদের দোষ প্রমাণিত হলে কঠোর সাজার মুখে পড়বে ওই দুই শিক্ষক। ঘটনায় রাজ্য সরকারও দ্রুত হস্তক্ষেপ করেছে। অভিভাবকদের বিক্ষোভের আগুন ক্রমশ চড়ছে। ইতিমধ্যেই অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করেছেন তাঁরা। উত্তেজনা ক্রমশই বাড়ছে। আপাতত স্কুল খোলা থাকবে কিনা, তা অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করেই ঠিক করা হবে বলেই পরিকল্পনা ছিল স্কুল কর্তৃপক্ষর। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিযুক্ত শিক্ষকদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব শহরবাসী ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষ।
[ জানেন, পাকিস্তানকে ঠান্ডা করতে বিএসএফের অস্ত্র তাদের কোন ‘এলিট ফোর্স’? ]