ফাইল ছবি
অর্ণব আইচ: বৈধ সেকেন্ড দোকানের ব্যান্ড বন্দুক চোরাপথে মাছের ভেড়িতে। বিভিন্ন ‘মোডাস অপারেন্ডি’তে ভেড়ির কর্মীদের হাতে চোরাপথে পৌঁছে যাচ্ছে দোকানের একতলা ও দোনলা বন্দুক। দামে কিছুটা কম পড়ে বলে সেকেন্ড হ্যান্ড বন্দুকের চাহিদা রয়েছে ভেড়ি মালিকদের কাছে। আবার কখনও বা নতুন বন্দুকই চোরাপথে পৌঁছে যাচ্ছে ভেড়িতে। আবার লাইসেন্স দেখিয়ে বন্দুকের ১২ বোর ক্যালিবারের গুলি কিনে তা ভেড়ি মালিকদের কাছে বিক্রি হচ্ছে চোরাপথে। এমনকী, বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কিছু নিরাপত্তাকর্মী বা ‘গানম্যান’-এর কাছেও চোরাপথে আসা বা ভুয়া লাইসেন্স দেখিয়ে তোলা বন্দুক ও কার্তুজের চাহিদা রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
কলকাতার বৈধ দোকান থেকে অসাধু চক্রের হাত ধরে বাইরে অস্ত্র পাচারের তদন্তে উঠে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৯৯ রাউন্ড দু’রকমের বুলেট ও একটি দোনলা বন্দুক। এর পর উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ায় এক ভেড়ির কর্মচারীর কাছ থেকে আরও একটি দোনলা বন্দুক উদ্ধার হয়। এই মামলায় প্রথম দিনেই ধৃত মধ্য কলকাতার একটি নামী অস্ত্র দোকানের কর্মচারী জয়ন্ত দত্ত, আশিক ইকবাল, আবুল সেলিম গাজি, হাজি রশিদ মোল্লাকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়।
জীবনতলার হাজি রশিদ মোল্লাকে জেল হেফাজতে পাঠানোর আবেদন জানানো হয়। তাকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। তদন্তের অগ্রগতির জন্য বাকি তিনজনকে পুলিশ হেফাজতে রাখার আবেদন জানায় রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। এদিন এই মামলায় এক সাক্ষীর গোপন জবানবন্দি নেয় আদালত। কলকাতার অন্য একটি বৈধ অস্ত্রের দোকানের কর্মী এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ও বুলেট পাচারের সঙ্গে যুক্ত, এমন তথ্য এসেছে পুলিশের কাছে। তারই ভিত্তিতে তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা।
মধ্য কলকাতার যে বৈধ দোকানগুলি রয়েছে, সেগুলির মধ্যে কয়েকটি পুরনো বা সেকেন্ড হ্যান্ড বন্দুকও বিক্রি করে। সাধারণভাবে যে ব্যক্তিদের কাছে পুরুষানুক্রমে বন্দুক রয়েছে, অথচ তা এখন কাজে লাগছে না, তাঁরাই এখন বিক্রি করেন বন্দুকগুলি। সেগুলি যাঁরা কিনবেন, তাঁদেরও লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। এখানেই অস্ত্রের জাল লাইসেন্স কাজে লাগায় চক্র। দোকানগুলিতে ভুয়া লাইসেন্স পেশ করেও তুলে নেওয়া হয় নতুন অথবা সেকেন্ড হ্যান্ড বন্দুক। ক্রমে তা চোরাপথে বিক্রি করা হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা-সহ কলকাতার আশপাশের বিভিন্ন জেলার মাছের ভেড়ি ও জলকরে।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, আসল লাইসেন্সে বন্দুক ও গুলি কিনে তা বেআইনিভাবে ভেড়ি মালিকদের হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে এই ধরনের বন্দুক ভাড়াও দেওয়া হয় বলে খবর। অভিযোগ, অনেক মাছের ভেড়িতেই একাধিক অস্ত্র রাখা হয়। মাছচোরদের বন্দুক থেকে গুলি ছুড়েও ভয় দেখানো হয়। একটি বন্দুকের সঙ্গে অন্তত চারটি গুলি ‘প্যাকেজে’ বিক্রি করা হয়। একজন অস্ত্রের লাইসেন্সধারী বছরে ৫০টি করে বুলেট বা কার্তুজ পেতে পারেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কার্তুজ কিনে তা চার থেকে পাঁচ গুণ দামেও বিক্রি করা হয়, এমন অভিযোগ এসেছে এসটিএফের হাতেও। চোরাপথে অস্ত্র পাচারের ব্যাপারে আরও কয়েকজনের উপর গোয়েন্দাদের নজর রয়েছে। তাদের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.