স্টাফ রিপোর্টার: এই নিয়ে তিনবার বয়ান বদল করলেন অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। এক মাস সাত দিন ধরে গা—ঢাকা দিয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘লুকোচুরি’ খেলার পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ তাঁকে ধরে ফেলে। রাত সওয়া বারোটা নাগাদ কসবার একটি শপিং মলের কাছে অ্যাপ ক্যাব থেকে গ্রেপ্তার হন বিক্রম। আদালতের নির্দেশে শুক্রবার তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার পর জেরা শুরু করেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, খুব অল্প সময়ের মধ্যে অন্তত তিন বার বয়ান বদল করেছেন বিক্রম।
শুক্রবার রাতে তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার পর টালিগঞ্জ থানার লক আপে আরেক অপরাধীর সঙ্গে একটি সেলে রাখা হয়েছে। সূত্রের খবর, বিক্রম বাড়ির পোশাক পরতে চাইলেও তাঁকে তা পরতে দেওয়া হয়নি। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য অপরাধীদের মতো তাঁকেও জেলকোড মানতে হবে। সকালে ব্রেকফাস্টে তাঁকে টোস্ট খেতে দেওয়া হয়েছে। ব্রেকফাস্টের পরই বিক্রমকে দফায় দফায় জেরা শুরু করেছে পুলিশ। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, গত ২৯ এপ্রিল ভোররাতে পার্টি শেষ করার পর তাঁরা কোথায় অর্থাৎ কোন কোন রাস্তায় গিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রায় ৩৫ মিনিট বিক্রমের গাড়ি থেমে ছিল তাঁর বাড়ির পাশের একটি রাস্তায়। এই ৩৫ মিনিটের রহস্য খুঁজতে বিক্রমকে নিয়ে ঘটনার পুননর্নির্মাণ করবে পুলিশ।
সনিকা মৃত্যুর ঘটনায় এর আগেও বিক্রমকে বেশ কয়েকবার জেরা করেছে পুলিশ। আগেও একাধিকবার তিনি বয়ান বদলেছেন। ঘটনার দিন মদ্যপান প্রসঙ্গে বিক্রমের বয়ানে একাধিক অসংগতি ছিল। পুলিশ জানতে পারে ঘটনার দিন তিনি পার্টিতে মদ্যপান করেন। পার্টি শেষ করে সনিকাকে নিয়ে মদ্যপ অবস্থাতেই গাড়ি ছুটিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন। এমনকী বিক্রমের গাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া পানীয়ের বোতলেও মদ মিলেছে বলে ফরেন্সিক রিপোর্টে উঠে এসেছে তথ্য। বিক্রম ও সনিকার গোপন জবানবন্দিতেও বিক্রমের মদ্যপানের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু মদ্যপান নিয়ে প্রশ্ন করায় বিক্রম প্রথমে বলেন, তিনি সেদিন মদ খাননি। পরে আবার বয়ান বদলে তিনি পুলিশকে বলেন, মদ্যপান করলেও তিনি স্বাভাবিক ছিলেন।
মদ্যপানের মতোই গাড়ির গতি নিয়েও বিক্রমের বয়ানে একাধিক অসংগতি রয়েছে। পুলিশকে প্রথমে তিনি জানান, গাড়ির গতি কখনওই ৭০ কিংবা ৮০ অতিক্রম করেনি। কিন্তু গাড়িটি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে জানা গিয়েছে, গাড়ি সেসময় ১০৫ থেকে ১১৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে ছুটছিল। প্রথমে বিক্রমের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪এ ধারায় গাফিলতির জন্য অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের হয়, পরে ৩০ জুন তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারা যুক্ত করে পুলিশ। যেহেতু বিক্রমই এই ঘটনায় একমাত্র অভিযুক্ত, তাই তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেরা করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও পুলিশের একটি অংশের মতে, চাপ দিচ্ছিলেন সনিকার পরিবার ও বন্ধুরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় তৈরি হওয়া ফোরামে সনিকা মৃত্যুর ‘বিচার’ চেয়ে একের পর এক পোস্ট নাড়া দিয়েছিল সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে। তাই একটু ‘দেরি’ হলেও গ্রেপ্তার হলেন বিক্রম। যদিও ঘটনার পরই ৫ মে আত্মসমর্পণ করে জামিন দেন বিক্রম। সে সময় আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, বিক্রম যেন তদন্তে সহযোগিতা করেন। কিন্তু সে পথে হাঁটেননি তিনি। জেরার মুখে বিক্রম সম্পূর্ণ ভুল তথ্য পুলিশকে দিয়েছেন। তদন্তের অভিমুখ পরিবর্তন করেছেন। তদন্তকারী আধিকারিককে ভুল পথে চালিত করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.