Advertisement
Advertisement
SSC Scam

১৫ লক্ষে শিক্ষক, ১২ লক্ষে গ্রুপ-ডি, নিয়োগের রেট বেঁধেছিল ‘সৎ রঞ্জন’, টাকা তুলতেন এজেন্টরা

২০১১ সালের পর থেকেই উল্কার গতিতে উত্থান বাগদার রঞ্জনের।

SSC Scam: Ranjan recruited agents to collect money for Primary Teacher recruitment
Published by: Paramita Paul
  • Posted:February 19, 2023 9:36 am
  • Updated:February 19, 2023 1:47 pm

অর্ণব আইচ ও জ্যোতি চক্রবর্তী: চন্দনের ফোঁটা কপালে থাকলে সাদা খাতা জমা দিলেও মিলবে চাকরি। এই কথাটি যত ছড়িয়ে পড়তে থাকে, ততই ভিড় বাড়ে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার মামাভাগ্নে বাস স্টপেজে। আর তার সঙ্গে বাড়তে থাকে চন্দন মণ্ডল ওরফে ‘সৎ রঞ্জনে’র রেট। নিয়োগ দুর্নীতির কারবারে বাড়াতে চন্দন জেলায় জেলায় টাকা তোলার ভার দেন নিজের এজেন্ট ও সাব এজেন্টদের।

কীভাবে স্কুলের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থেকে চন্দন মণ্ডল কোটিপতি হয়ে ওঠেন, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই টিনের চালের বাড়ি থেকে কীভাবে চন্দন তিনতলা বাড়ি হাঁকিয়ে বসলেন, কীভাবেই বা বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে চলছে তদন্ত। এলাকা সূত্রে সিবিআইয়ের কাছে এসেছে খবর, প্রায় হাজার দেড়েক প্রার্থীকে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন চন্দন মণ্ডল। তাঁকে ক্রমাগত জেরা করে সেই তথ্যই খতিয়ে দেখছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: DA ইস্যুতে দু’দিনের কর্মবিরতি রুখতে পালটা নবান্ন, সোম-মঙ্গলে সরকারি কর্মীদের ছুটিতে নিষেধাজ্ঞা]

সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকের চাকরি থেকে শুরু করে, স্কুলের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, যার যেরকম চাকরি চাহিদা, সেরকমই মেটাতেন ‘সৎ রঞ্জন’। তার জন্য রেট বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থা বুঝে চলে দর কষাকষি। তবুও গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগের জন্য চন্দন মণ্ডলের রেট ছিল প্রার্থী পিছু ৮ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ছিল ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের জন্য দিতে হত ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা।

Advertisement

এলাকা ও সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে চন্দন সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাগদার স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ওই কর্মীর উত্থান হয় ২০১১ সালের পর থেকে। এক আত্মীয় যোগাযোগ করিয়ে দেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে স্কুল দপ্তরের কয়েকজন কর্তার সঙ্গে। জেলার রাজনৈতিক মহলেও নিজের প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন চন্দন। বছর দশেক আগে বাগদা এলাকার জনা দশেক প্রার্থীর কাছ থেকে লক্ষ তিনেক টাকা করে নেন তিনি। তাঁদের প্রত্যেকের স্কুল শিক্ষকের চাকরি হয়। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। নাম ছড়িয়ে পড়ে চন্দন ওরফে ‘সৎ রঞ্জনে’র।

[আরও পড়ুন: কখনও প্রেমে পড়েছেন? কী বলছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়?]

তিনি এলাকার বহু যুবককে নিয়োগ করেন। তাঁর এজেন্ট ও সাব এজেন্ট হিসাবে টাকা তুলতে শুরু করেন এলাকার বহু যুবক। প্রাথমিক পর্ষদ থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দপ্তরে অবাধ যাতায়াত ছিল চন্দনের। প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরে প্রথমে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা ও ক্রমে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, মুর্শিদাবাদ সহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেন নিজের এজেন্টদের। তাঁরা টাকার বিনিময়ে প্রার্থীদের চাকরির ব্যবস্থা করেন।

এলাকার সূত্র জানিয়েছে, কয়েক বছর আগেও সকাল থেকে বাগদার মামাভাগ্নে স্টপেজ জমজমাট হয়ে উঠত। চন্দনের বাড়িতে ভিড় বাড়তে শুরু করে। চাকরিপ্রার্থীদের তিনতলা বাড়ির পিছন দিকে একটি ঘরে এজেন্টরা নিয়ে আসতেন। সেখানেই দর কষাকষি হত। এজেন্ট ছাড়াও কখনও চন্দন, কখনও বা এক নিকট আত্মীয়া থাকতেন বলে খবর সিবিআইয়ের কাছে। সিবিআইয়ের জেরায় চন্দনের দাবি, তিনি টাকা তুললেও শুধু কমিশন নিতেন। এজেন্টকে দিতে হত কমিশন। বাকি টাকা পৌঁছে যেত বিভিন্ন প্রভাবশালীর কাছে। সিবিআই-এর ধারণা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সহ ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের হাতে ধৃত শিক্ষা দপ্তরের কর্তাদের হাতেও গিয়েছে সেই টাকা। চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকার সূত্র ধরেও তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ