সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শীতের রাতে মাথার উপর খোলা আকাশ, পায়ের নিচে হিমশীতল জমি। কাছেপিঠে কোথাও কোনও শৌচালয় নেই, চা-জলখাবারেরও তেমন ব্যবস্থা নেই। তাতে কী? পথ দেখিয়েছে দিল্লির শাহিনবাগ। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (CAA) প্রতিবাদে সেই পথে হেঁটেই সপ্তাহখানেক ধরে পার্ক সার্কাস ময়দানে অবস্থানে বসেছেন মুসলিম মহিলারা। হাজার প্রতিকূলতাকে তুচ্ছ করে টানা ধরনায় জারি রাখছেন নিজেদের প্রতিবাদ। এবার তাঁদেরই সাহায্যে এগিয়ে এল ছাত্রছাত্রীরা। বায়ো টয়লেট বানিয়ে, স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়ে, মাথার উপর তাঁবু বিছিয়ে দেওয়া হল। আন্দোলনরত মহিলাদের হাতে তুলে দেওয়া হল জলের বোতল, বিস্কুটের প্যাকেট। মাসুম রানা দেওয়ান, দেবকন্যা হালদার এবং তাঁদের বন্ধুবান্ধবরা মিলে দাঁড়ালেন পার্ক সার্কাসে CAA বিরোধীদের পাশে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় এক সপ্তাহ ধরে পার্ক সার্কাস ময়দানে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছে একদল মহিলা। কারও কারও কোলে একেবারে ছোট সন্তান। প্রতিবাদে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও শামিল করেছেন তাঁরা। সেই ধরনা মঞ্চের আয়তন দিনদিন বাড়ছে। এই মঞ্চে উপস্থিত হয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক যোগেন্দ্র যাদব, বামপন্থী ছাত্রনেতা উমর খালিদ, কবীর সুমনের মতো ব্যক্তিত্বরা। তাতে মানসিক জোর বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু এই শীতকালে, বিশেষত সন্ধের পর থেকে সারারাত ওভাবে প্লাস্টিক বিছিয়ে অবস্থান চালিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টকর।অনশনকারীদের মধ্যেই কেউ কেউ শহরবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের শাল, চাদর, জল এবং ন্যূনতম খাবার দিয়ে সাহায্য করার। কমবেশি এগিয়ে এসেছিলেন অনেকেই। তবে দেবকন্যারা যা করলেন, তাতে সত্যিই সুবিধা হল আন্দোলনকারীদের।
[আরও পড়ুন: পার্ক সার্কাসে CAA বিরোধী মঞ্চে চিদম্বরম, দেখা করলেন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে]
দেবকন্যা বলছেন, ”এখানে বিভিন্ন বয়সী মহিলারা, নিজেদের সন্তানদের কোলে নিয়ে এসে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের জন্য কোনও শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই। খাবার, জলও নেই। আমরা ওঁদের অসুবিধা বুঝে বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। স্যানিটারি ন্যাপকিন বিলি করেছি। পর্যাপ্ত জলের বোতল এবং বিস্কুটের প্যাকেটও দিয়েছি।” এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য, আসমাত জামিলের কথায়, ”ছাত্রসমাজকে আমাদের পাশে এভাবে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই মঞ্চে যাঁরা আসছেন, তাঁরা প্রকৃতই প্রতিবাদ করতে চান।” আর মাসুমরা বলছেন, তাঁদের এসব কাজে কোনও মাহাত্ম্যই নেই। সাধারণ, সংবেদনশীল মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকাই তো আসল কাজ।
[আরও পড়ুন: কাটা আঙুল পকেটে নিয়ে হাসপাতালে যুবক, জুড়ল আর জি কর]
মাসুম, দেবকন্যারা আসলে গবেষণার কাজের সূত্রে দেশের বাইরে থাকেন। কলকাতায় নিজেদের বাড়িতে ফিরে তাঁরা এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। আর তারপরই CAA বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে যেতে দু’বারও ভাবেননি। তাঁদের কথায়, ”আমাদের মতো মানুষজন সাধারণত কোনও প্রতিবাদ দেখাতে মিছিল হাঁটি, তারপর নিজেদের ঘরে এসে আরামে ডুবে যাই। কিন্তু ওখানে বসে যাঁরা এভাবে নিজেদের প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন, তাঁরাই তো আসল আন্দোলনকারী।” CAA বিরোধী প্রতিবাদে আমজনতার প্রতিবাদে এভাবেই নিজেদের অংশীদার করেছে কলকাতার ছাত্র সমাজ।