থিমের শহরে কোথায় বনেদিয়ানা? খোঁজ নিলেন ইন্দ্রজিৎ দাস। তুলে ধরলেন বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের দুর্গাপুজোর কাহিনি।
ইতিহাস-
১৬১০ খ্রিস্টাব্দ, কলকাতার বুকে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হল বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বাড়িতে। শুরু করলেন তৎকালীন সুতানুটি, কলিকাতা ও গোবিন্দপুরের জমিদার লক্ষ্মীকান্ত মজুমদার। ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি আটখানা নিষ্কর পরগনা লাভ করেন মান সিংহের কাছ থেকে। পরগনার সীমা ছিল হালিশহর থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর। সম্রাট জাহাঙ্গিরের কাছ থেকে তিনি ‘রায়চৌধুরী’ উপাধি লাভ করেন। আর তাঁদের গোত্র হল সাবর্ণ। সেই থেকে তাঁদের পরিবারের নাম হল সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার।
সাবর্ণদের এই দুর্গাপুজো ‘আটচালার পুজো’ নামেই বেশি পরিচিত। একসময়ের দুর্গামণ্ডপটি ছিল মাটির তৈরি এবং মাথাটি ছিল গোলপাতার ছাউনি দেওয়া আটটি চালের। এখন সেই মাটির মণ্ডপ আর নেই, ভেঙে তৈরি হয়েছে কংক্রিটের মণ্ডপ। স্মৃতি হিসেবে পড়ে রয়েছে লাল রঙের কয়েকটি স্তম্ভ। এই আটচালাতেই ১৬৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ নভেম্বর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জব চার্নকের জামাতা চার্লস আয়ার সুতানুটি, কলিকাতা ও গোবিন্দপুর–এই গ্রাম তিনটির প্রজাস্বত্ব ক্রয় করেন সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের কাছ থেকে।
[জলপাইগুড়ির দিশারিতে উঠে এসেছে এক টুকরো ‘পিপলি’ গ্রাম]
প্রথা-
জন্মাষ্টমীর দিন থেকে দুর্গামণ্ডপে শুরু হয় প্রতিমা তৈরি। ওইদিন হয় কাঠামো পুজো। প্রতি বছর বিসর্জনের পর প্রতিমার কাঠামো তুলে এনে রাখা হয়, ওই কাঠামোতেই আবার নতুন প্রতিমা তৈরি করা হয়। তিনচূড়া বিশিষ্ট একচালের প্রতিমা। চালাটির এক পাশে রামচন্দ্র ও অন্যপাশে মহাদেবের ছোট মূর্তি রয়েছে। মা দুর্গার মুখ ও গায়ের রং শিউলি ফুলের বোঁটার মতো। অসুরের রং সবুজ।
আটচালার দুর্গাপুজোর বোধন হয় দুর্গানবমীর তেরো দিন আগে অর্থাৎ কৃষ্ণানবমী তিথিতে। একসময় পুজোয় ১৩ টি পাঁঠা, একটি মোষ, আখ আর চালকুমড়ো বলির রীতি ছিল। এখন মোষবলি বন্ধ। এই বাড়িতে মা’কে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। ফল, মিষ্টি, লুচি, তরকারি, খিচুড়ি, ভাত, পোলাওয়ের সঙ্গে মাছের পদও থাকে। দশমীর দিন দেওয়া হয় পান্তাভাত, কচুশাক। একসময় প্রতিমা বিসর্জনের জন্য কাহাররা কাঁধে করে প্রতিমা নিয়ে যেত গঙ্গায়। সেই প্রথা আজ আর নেই। আজ পুজোর অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও রয়ে গিয়েছে তার ঐতিহ্য।
সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বংশে আজ আটটি দুর্গাপুজো হয়। তার মধ্যে বড়িশাতেই হয় ছ’টি বাড়িতে। আটচালা, বড়বাড়ি, মেজবাড়ি, বেনাকি বাড়ি, মাঝের বাড়ি ও কালীকিঙ্কর ভবন। আর দু’টি হয় বিরাটি ও নিমতার বাড়িতে। তবে ৪০০ বছরের প্রাচীন পুজো আটচালার পুজো। আজও হাজার হাজার মানুষ আসেন কত ইতিহাসের সাক্ষী আটচালার ঐতিহাসিক স্থান ও শতাব্দীপ্রাচীন মাকে দেখতে।
[৮ কুইন্টাল কাঠে তৈরি প্রতিমায় চমক দুর্গাপুরে]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.