সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বেজিং, টুংফাং, মান্ডারিন। এই নামগুলো কলকাতাবাসীর কাছে বেশ পরিচিত। ভোজনরসিকরা তো মাঝেমধ্যেই শহরের এইসব রেস্তোরাঁগুলিতে ঢুঁ মারেন। আর চাইনিজ খাদ্যপ্রেমীদের এই জনপ্রিয় গন্তব্যগুলি কখনও নিরাশ করে না। তাই তো সারা বছর এরা থাকে হাউসফুল। কিন্তু জানেন কী, তিলোত্তমার বুকে গড়ে ওঠা এই সব রেস্তোরাঁর নেপথ্যের মানুষটি কে? না, তিনি কোনও বিজনেস টাইকুন নন। বা কোনও বিদেশি ফুড ফ্র্যাঞ্চাইজিরও অংশ নন।
তাহলে কে তিনি? তিনি একজন মহিলা শরণার্থী। যিনি নিজের তাগিদে হাজার প্রতিকূলতাকে জয় করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সুনাম অর্জন করেছেন। বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, শরণার্থীরা সর্বহারা হয়েও আত্মবিশ্বাস হারায় না। মনের জোর থাকলে, ‘ইমপসিবল ইজ নাথিং।’ তিনি মনিকা লিউ। চিনা বংশোদ্ভূত সফল এই মহিলার জীবনকাহিনি কোনও হিন্দি ছবির চিত্রনাট্যর থেকে কম নয়।
১৯৬২ ইন্দো-চিন যুদ্ধ মনিকা ও তাঁর পরিবারকে সর্বহারা করেছিল। বাড়ি, ঘর, আত্মীয় পরিজন, এমনকী দেশও ত্যাগ করতে হয়েছিল তাঁদের। সেই পরিস্থিতিতে রাজস্থানের একটি ক্যাম্পে আশ্রয় নেন তাঁরা। সেখানে একপ্রকার বন্দি অবস্থাতেই দিন কাটত ছোট্ট মনিকার। স্বাধীনতা কাকে বলে, ভুলেই গিয়েছিলেন শরনার্থীরা। নাম নয়, তাঁদের চিহ্নিত করা হত নম্বর দিয়ে। মনিকার নম্বর ছিল ৮৮০। বছর পাঁচেক পর পরিস্থিত খানিকটা স্বাভাবিক হলে দেশে ফিরে যান তাঁরা। ফিরে গিয়ে আর কোনওভাবেই নিজেদের গুছিয়ে উঠতে পারেননি মনিকারা। বেশ কয়েক বছর পর কলকাতায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন মনিকা। আর তখনই কলকাতার চায়না টাউনের বুকে জন্ম নিল এক নয়া অধ্যায়। মনিকার পরিবারের খাবারের ব্যবসা ছিল। তাই ঠিক করে ফেলেন নিজের রেস্তোরাঁ খুলবেন তিনি। মোমো দিয়ে সেই যাত্রা শুরু। মায়ের থেকেই মোমো শিখেছিলেন। সারা রাত বসে মোমো বানাতেন এবং সকালে বিক্রি করতেন। এভাবেই ১৯৯১ সালে একদিন চায়না টাউনে নিজের প্রথম রেস্তোরাঁ খুলে ফেলেন তিনি। এখন তিনি শহরের পাঁচটি রেস্তোরাঁর মালকিন। গর্বের সঙ্গে মনিকা বলেন, “আমি এখন ট্যাংরার ডন। কিম লিং, বেজিং, টুংফাং এবং ২টি মান্ডারিন এখন আমার সম্পত্তি।”
২০০৩ সালে তাঁর এই কীর্তির জন্য সেরা উদ্যোগপতির পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। মনিকার কর্মক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাসকে আজও স্যালুট জানায় কলকাতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.