২৫ জ্যৈষ্ঠ  ১৪৩০  শুক্রবার ৯ জুন ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

প্রতিবন্ধকতা বাধা নয়, এক হাতেই মৃন্ময়ী দশভুজা গড়ছেন জগদীশ

Published by: Sangbad Pratidin Digital |    Posted: August 30, 2017 8:08 am|    Updated: October 2, 2019 4:20 pm

This idol maker ‘single-handedly’ brings goddess Durga to life

অভিরূপ দাস: ‘ইয়ে হাত মুঝে দে দে ঠাকুর।’ ঠাকুর বানাতে বসে কখনও একথা বলেননি তিনি। বলেই বা কী লাভ। চলে যাওয়া ডানহাতটা তো আর ফিরে আসবে না! চল্লিশ বছর ধরে এক হাতই তাঁর সম্বল। রং করা থেকে ত্রিনয়নী টান। এক হাতেই তিনি তুলি ধরেন। তিনি মানে জগদীশ পাল। রাজারহাট গোপালপুরে যাঁর বাড়ির হদিশ জানতে চাইলে যে কেউ দেখিয়ে দেবে।

[শহরের সেরা পুজোর জবর খবর, চোখ থাকুক শুধুই sangbadpratidin.in-এ]

“ও বাড়ি চিনতে পারব না! একহাতে মূর্তি গড়তে কজন পারে দাদা?” প্রশ্ন ছোড়ে মোড়ের মাথার আড্ডা দিতে থাকা ছেলের দল। বহু বছর আগে দুর্ঘটনায় কনুই থেকে উড়ে গিয়েছিল ডানহাতটা। তখন বয়স মাত্র ন’বছর। আর এখন ৫৬। এতগুলো বছর কীভাবে কাজ করলেন? জগদীশ বলেন, “হাত চলে যাওয়ার পর ভয় হয়ে গিয়েছিল ঠিকই। ঠাকুর বানিয়েই আমাদের রুজি রোজগার। চালাতে পারব তো?” তবে তিনি পেরেছেন। না পারলে ফাটাকেষ্ট কী তাঁর হাত ধরে বলতেন, “কালীঠাকুর বানাতে জগদীশকে ডাক।” মিথ হয়ে যাওয়া সেই কালীঠাকুর তৈরি করতেন ফাটাকেষ্টর আদরের ‘জগা’। প্রথম বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাবের থিম পুজোও তার হাত ধরেই।

[আমার দুগ্গাপুজো: সিটি সেন্টারের ওখানেই প্রথম কাশফুল দেখা যেত]

শুভ কাজে বাম হাত চলে না, সেই সংস্কারকে তুড়ি মেরে বাঁ হাতেই মায়ের মূর্তি গড়েন জগদীশ। বাড়ির দোতলায় ছোট্ট জায়গা নিয়ে ওয়ার্কশপ। কাজের জন্য ফ্যান চালানো যায় না। টিমটিমে আলোয় কপালের ঘাম মোছাও বিড়ম্বনা। একহাতে তুলি ধরবেন না কি কপাল মুছবেন? “মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার নামই তো জীবন। এর মধ্যেই কাজ করি।” -শুকনো হেসে বলেন শিল্পী। তবে অসুবিধে তো একটু হয় ঠিকই। খড় বাঁধতে পারেন না। কাঠামোয় পেরেক পুঁততে পারেন না। কিন্তু নাছোড়বান্দা জেদ। জানান, “দুহাতে অনেক কাজই করা যায়। যেগুলো একহাতে পারি না। কাটারি হাতে বাশ কাটা খড় বাধায় অন্য লোকের সাহায্য নিতে হয়।” আবার নিজেই বলেন, “ হাত একটা কম থাকলেও অন্য কিছু ক্ষমতা আমার বেশি।”

কলকাতার নামজাদা কিউরিওশপের লোকেদের গাড়িও থামে তাই রাজারহাট গোপালপুরের জগদীশ পালের বাড়ির সামনে। পুরনো মূর্তি, ভাস্কর্য নিখুঁত মেরামত করেন তিনি। চারশো বছরের পুরনো মূর্তি হুবহু এক রেখে মিলিয়ে দেন তুলির টানে। পুরনো রাজবাড়ির ফুলদানি, পরীর ফোয়ারা ভগ্নপ্রায় অবস্থায় আসে তার কাছেই। ফের তাকে নতুনের মতো করে দেন। এবছর বড় ঠাকুর তৈরি করা থেকে সরে এসেছেন জগদীশ। অভিমানে? ব্যাখ্যা দিলেন, “বয়স তো হল। নতুনদের কিছু দিয়ে যেতে চাই। মাথার মধ্যে অনেক চিন্তা কিলবিল করে।” সেই চিন্তাই নতুনদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। স্বপ্ন দেখেন ফের থিম পুজোর তলায় লেখা থাকবে জগদীশ পালের নাম।

[মাছ ধরার জালের সুতো দিয়েই দুর্গা প্রতিমা তৈরি পুলিশকর্মীর]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে