সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করলেন মুকুল রায়। বুধবার উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুর হাতে ইস্তফাপত্র তুলে দিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। আর ইস্তফা দেওয়ার পরই সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলকে একহাত নেন একদা রাজ্যের শাসকদলের সেকেন্ড হাই কম্যান্ড। নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বলেছেন, কেউ কারও চাকর নয়। এমনকী তাঁর বক্তব্য, কখনও কংগ্রেস, কখনও বিজেপি-র দিকে ঝুঁকেছে তৃণমূল। আর তারপরই মুকুলের পালটা দিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বললেন, “কাঁচরাপাড়ার কাচরা ছেলের হাত থেকে বাঁচল তৃণমূল।”
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বলেন, “নারদ কাণ্ডে সিবিআইয়ের কাছে ধরা পড়ার পরই মুকুল রায় বুঝে গিয়েছিলেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়া ছাড়া গতি নেই। তাই অনেকদিন ধরেই তলে তলে বিজেপের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। আমাদের দলের কোনও নেতা যা করেননি মুকুল রায় সেটাই করলেন। এভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেউ কুৎসা রটায়নি। এভাবে অপমান করেননি। ২০১৫ সালে আবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল রায়কে শেষ সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।”
পার্থর আরও দাবি, সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের বিষয়ে যেসব তথ্য মুকুল রায় তুলে ধরেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্রের মতো অভিযোগ তুলেছেন মুকুল। যা মিথ্যা। অত্যন্ত কাঁচা রাজনীতি করেছেন তিনি। তাঁর মতে তৃণমূল যদি এমনই হয়, তাহলে এতদিন পর কেন বোধদয় হল তাঁর? মুকুলের চাকর মন্তব্যকে খণ্ডন করে পার্থর বক্তব্য, “প্রতিটি দলেরই একটি মুখ থাকে। সেই মুখই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা কেউ চাকর নই। আমরা কি চাকর? আমরা রাজ্যের সেবা করি, নিজেদের দায়িত্ব পালন করি। দলকে জমিদারের মতো চালনা করতে চেয়েছিলেন তিনি। জমিদারি গিয়েছে। তৃণমূল বেঁচে গিয়েছে।” এদিকে সাংবাদিকদের সামনে পার্থকে বাচ্চা ছেলে বলেও সম্বোধন করেন মুকুল রায়। তারও পালটা দিতে ছাড়েননি তৃণমূলের মহাসচিব। বলেন, “হ্যাঁ, আমি বাচ্চা ছেলে আর উনি আমার দাদা।”
এবার প্রশ্ন একটাই, মুকুল রায় কি শেষমেশ বিজেপিতেই যোগ দিতে চলেছেন। সে ধোঁয়াশা এদিনও রয়ে গেল। আপাতত কোনও দলেই যোগ দেওয়ার কথা জানাননি তিনি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন, “মুকুল রায় নিজে থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা বলেলনি। তিনি ভাবনা-চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন। যদি উনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন তবে দলের নিয়ম অনুযায়ী তা বিবেচনা করে দেখা হবে।” তবে মুকুল রায় বহু দলের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন বলে পালটা খোঁচাও দিয়ে রাখলেন দিলীপবাবু। বস্তুত দিল্লিতে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে বৈঠকের পর রাজনৈতিকমহলের একাংশ ধরেই নিয়েছিল যে বিজেপিতেই যোগ দিচ্ছেন মুকুল। কিন্তু এদিন তা নিশ্চিত না করে আক্ষরিক অর্থেই পুরো বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখলেন তিনি। এতে যে গেরুয়া শিবিরও ততটা সন্তুষ্ট নয়, এদিন হাবেভাবে তারও ইঙ্গিত মিলল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.