স্টাফ রিপোর্টার: উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দ থেকে পাটনা ও বর্ধমান হয়ে কলকাতা।
দূরত্বটা অনেকটাই। কিন্তু এর মধ্যেই একের পর এক রাজ্যে যেভাবে আল কায়দার জঙ্গিরা স্লিপার সেল ও নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, তাতে হতবাক গোয়েন্দারা। হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, রাঁচি, পাটনা, উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগর, দেওবন্দ, এই রাজ্যের বর্ধমান ও কলকাতা। একসঙ্গে ৬টি রাজ্যের শহরগুলিতে আল কায়দার জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক তৈরির কাজে হাত দিয়েছিল আনসার বাংলা টিম (এবিটি) তথা ভারতের মাটিতে আল কায়দার সংগঠন ‘আকিস’। গত কয়েক মাসের মধ্যে কলকাতায় রীতিমতো ঘাঁটি তৈরি করে ফেলেছিল দুই জঙ্গি সামশাদ ও রিয়াজুল। শুরু হয়েছিল আল কায়দার ‘কলকাতা মডিউল’ তৈরির কাজ।
[বাংলায় আশ্রয় নেওয়া ব্লগারকে খুনের ছক ছিল ধৃত জঙ্গিদের]
কলকাতা পুলিশের এসটিএফ-এর হাতে ধরা পড়ার পর লালবাজারে এবিটি-র ওই দুই জঙ্গি গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, দশমীর পর থেকে তারা কলকাতায় ঘাঁটি তৈরি করতে থাকে। এর মধ্যেই এবিটি-র হ্যান্ডলার বাংলাদেশ থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের জানায়, শহরে একাধিক আস্তানা খুঁজতে। বাড়ি ভাড়া নিতে। তার জন্য টাকার অভাব হবে না। হায়দরাবাদের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে এবিটি-র প্রায় লাখ পাঁচেক টাকা রয়েছে। তুষার বিশ্বাস পরিচয় দিয়ে সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন করত জঙ্গি নেতা সামশাদ। কলকাতা ও তার আশপাশে সেই আস্তানাগুলিতে বাংলাদেশ থেকে এসে আশ্রয় নেবে এবিটি তথা আল কায়দার সদস্যরা। এই তথ্যই ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। কারণ, গোয়েন্দাদের ধারণা, সামশাদ বা রিয়াজুলের মতো আরও কয়েকটি মডিউল হয়তো কাজ করছে কলকাতা বা তার আশপাশে। তারাও আলাদাভাবে ঘাঁটি ও স্লিপার সেল তৈরি করছে শহরে। আশ্রয় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় বসে জঙ্গিরা বিস্ফোরক তৈরি শুরু করতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা। কলকাতা, রাঁচি ও পাটনার একাধিক রাসায়নিকের দোকান থেকে বিস্ফোরকের দরদাম করেছে তারা। সামশাদ যে নিজে আইইডি ও সার্কিট তৈরিতে দক্ষ, সেই প্রমাণও গোয়েন্দারা পেয়েছেন। এমনকী, বাংলাদেশে অনেককে বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণও দিয়েছে সামশাদ। যাদের সে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, তাদের দিয়ে নতুন করে জঙ্গি নেতারা কলকাতায় মডিউল বা স্লিপার সেল তৈরি করতে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা। তাঁদের সন্দেহ, জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র পুরনো স্লিপার সেলকে কাজে লাগাতে শুরু করেছে আল কায়দার জঙ্গিরাও।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, আল কায়দার স্লিপার সেলের নাটের গুরু হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের বাসিন্দা ফইজান। বাংলাদেশ থেকে কয়েক বছর আগে ফইজান কলকাতা হয়ে দেওবন্দে পৌঁছয়। তৈরি করে স্লিপার সেল। আল কায়দার অন্যান্য জঙ্গি সদস্যদের জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দিত সে। মুজফ্ফরনগর থেকে ধৃত এবিটি জঙ্গি আবদুল্লা আল মামুনকেও জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে দেয় ফইজান। বিভিন্ন রাজ্যে ফইজান ও আবদুল্লা স্লিপার সেল তৈরি করে ফেলেছে বলে খবর গোয়েন্দাদের কাছে। অবশ্য সামশাদের দাবি, তার জাল পরিচয়পত্র তৈরি করিয়ে দেয় বেঙ্গালুরুর এক বাঙালি দালাল। তার সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।