সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শিশুমৃত্যু নিয়ে যখন রাজ্য উত্তাল তখন ফের বিতর্কে মুকুন্দপুর আমরি। এবার ঋণদানকারী সংস্থার নম্বর দিয়ে বিল মেটানোর চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠল এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
[ ঐত্রীর পরিবারকে শাসানি, আমরির ইউনিট হেড জয়ন্তীকে আজই থানায় তলবের সম্ভাবনা ]
বুধবারই সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে এই হাসপাতাল। এক শিশুমৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মেজাজ হারান ইউনিট প্রধান জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়। সে বিতর্কের মধ্যেই নতুন ঘটনায় নাম জড়ায় হাসপাতালে। অভিযোগ জয়ন্ত সিনহা নামে ঝাড়খণ্ডের এক ব্যবসায়ীর। তাঁর দাবি, তাঁর সম্মতি না নিয়েই তাঁর স্ত্রীকে ভেন্টিলেশনে দিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালের মোট বিল হয়, প্রায় ৬.৯ লক্ষ টাকা। জয়ন্তবাবু জানান, তাঁর কাছে ৪.১ লক্ষ টাকা আছে। এরপরই তাঁকে একটি ঋণদানকারী সংস্থার নম্বর দেওয়া হয়। সেখান থেকে টাকা ধার করে বিল মেটানোর কথা বলা হয়।
[ শাসানির অভিযোগ আমরির বিরুদ্ধে, কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ঐত্রীর পরিবার ]
ঘচনার সূত্রপাত গত ২৫ ডিসেম্বর। যমজ সন্তান গর্ভস্থ অবস্থায় সল্টলেক আমরিতে ভরতি হন জয়ন্তর স্ত্রী শক্তি সিনহা। ব্লাড প্রেসারজনিত সমস্যা ছিল তাঁর। সে কারণে ২৪ ঘণ্টা তাঁকে মনিটর করতে হবে বলেও হাসপাতালের তরফে জানানো হয়। পরদিন বিকেলে জীবনবাবু জানতে পারেন, তাঁর স্ত্রীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এবং তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। অভিযোগ, এক্ষেত্রে তাঁর অনুমতি নেওয়া তো দূরের কথা, তাঁকে কোনওভাবে জানানোও হয়নি। এরপর জানানো হয় যে শক্তিদেবী সেমি কোমায় চলে গিয়েছেন। সেই অবস্থাতেই ডেলিভারি করাতে হবে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা সল্টলেকে নেই। মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ মতো তাঁকে মুকুন্দপুর আমরিতে স্থানান্তরিত করা হয়। সেইমতো ডেলিভারি করে যমজ সন্তানকে বের করা হয়। কিন্তু প্রসূতির অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। একসময় হাসপাতালের তরফে বলা হয়, আপাতত শক্তিদেবীর কোনও চিকিৎসা হওয়া সম্ভব নয়। অপেক্ষা করে দেখতে হবে। সেইসময়ই তাঁকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবে পরিবার। কিন্তু পুরো বিল না মেটালে রোগীকে ছাড়া হবে না বলে জানানো হয়। ধার করার জন্য একটি বিশেষ ঋণদানকারী সংস্থার নম্বরও দিয়ে দেওয়া হয়।
[ অভিযুক্তর পাশে দাঁড়িয়ে ঐত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধেই থানায় আমরি কর্তৃপক্ষ ]
এই মর্মে পূর্ব যাদবপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন জয়ন্ত সিনহা। তাঁর দাবি, তাঁর স্ত্রী এখন যে অবস্থায় পৌঁছেছেন তার কারণ মস্তিষ্কে সঠিকমাত্রায় অক্সিজেন না পৌঁছানো। তিন মিনিট অক্সিজেন না পৌঁছলে এই অবস্থা হয়। সেক্ষেত্রে হাসপাতালের গাফিলতি তো আছেই। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর সন্তানরা হাসপাতালেই আছে। শুধু স্ত্রীকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও পুরো বিল না মেটানোর কারণে তাঁর স্ত্রীকে রিলিজ দেওয়া হয়নি। এদিন থানার তরফে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। বর্তমানে পুলিশ জয়ন্তকে সঙ্গে নিয়েই হাসপাতালের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছে। এদিকে গোটা হাসপাতাল জুড়েই কড়া নিরাপত্তা। সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। রোগীর পরিবারকেও রীতিমতো পরিচয়ের প্রমাণ দেখিয়ে তবে হাসপাতালে ঢুকতে হচ্ছে।
[ আমার চেয়ে বড় মস্তান আর নেই, আমরি কর্তার শাসানি মৃতার মাকে ]
বেসরকারি হাসপাতালের দৌরাত্ম্য মেটাতে গতবছরই কড়া হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মেডিক্যাল বিল এনে স্বাস্থ্য কমিশনও গঠন করা হয়। কিন্তু তারপরও যে হাল ফেরেনি, এমনকী বেসরকারি হাসপাতালের দাপট কমেনি সাম্প্রতিক ঘটনাতেই তা প্রমাণ হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.