সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিমল গুরুংয়ের চরম শাস্তি চাইলেন শহিদ সাব-ইনস্পেক্টর অমিতাভ মালিকের স্ত্রী বিউটি মালিক। রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থর কাছে তাঁর আরজি, ‘আমার সব শেষ। কিন্তু গুরুংয়ের শাস্তি চাই। গুরুং মাথায় গুলি খেলে তবেই অমিতাভর আত্মা শান্তি পাবে।’ ডিজি তাঁকে আশ্বাস দেন, ‘এত বড় বীরের আত্মাহুতি নষ্ট হতে দেব না। বিফলে যাবে না অমিতাভর মৃত্যু।’ বিউটি বলেন, ‘আমার সব শেষ স্যার।’ ডিজি বলেন, ‘আমরা সবাই আপনার পাশে রয়েছি। গোটা রাজ্যের মানুষ আজ এক হয়ে অমিতাভকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। এত বড় বীর খুব কম মানুষই হন।’ তখনই বিউটি বলেন, ‘স্যার, আমি চাই বিমল গুরুং গুলি খেয়ে মরুক।’
শনিবার নিমতলা মহাশ্মশানে শহিদ এসআইয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। চোখের জলে অমিতাভকে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষ। এর আগে মধ্যমগ্রামে তাঁকে গান স্যালুট জানানো হয়। শহিদ সাব-ইনস্পেক্টরের শেষকৃত্যে ভিড় করেছিলেন অজস্র মানুষ। এদিন কফিনবন্দি স্বামীর নিথর দেহ বিমানবন্দরে আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী। বারবার স্বামীর মৃতদেহ ধরে কাঁদছিলেন, কিছুতেই শববাহী গাড়িতে স্বামীর মৃতদেহ তুলতে দেবেন না। বিউটির আকুতি, ‘ওকে বাড়িতে নিয়ে চলো।’ বিমানবন্দরেই স্বামীর কফিনবন্দি দেহ বারবার আঁকড়ে ধরতে চাইছিলেন বিউটি। মনে হচ্ছে এখনই অমিতাভ এসে ডাকবে – “মনা! কোথায় গেলে। এখনও দরজা খুলছ না কেন। দেখো আমি এসে গেছি।” অমিতাভর শোকে বিহ্বল অমিতাভর সহকর্মীরাও। কালিম্পংয়ে নিহত এসআইকে শেষ শ্রদ্ধা জানান সহকর্মীরা।তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করে কলকাতা ও শিলিগুড়িতে মোমবাতি মিছিল হয় এদিন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও বীর অমিতাভর স্তুতি থামছে না। তাঁর প্রোফাইলে আত্মার শান্তি কামনা করেছে ফেসবুক পরিবার।
মাত্র ছ’মাস আগে ১৩ মার্চ, সাত পাকে বাঁধা পড়েছিলেন অমিতাভ ও বিউটি। বিয়ের পর মাত্র সাতমাস। এখনও ঘোর কাটেনি। কত স্বপ্ন। কত প্রাণবন্ত ছিল জীবন। দার্জিলিংয়ে অশান্তির পরিবেশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল। কিন্তু হঠাৎ সবকিছু এভাবে শেষ হয়ে যাবে ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছেন না বিউটি। বিমানবন্দরে আপনজনদের দেখে তাই নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি তিনি। পরিজনদের আঁকড়ে ধরে কেঁদে উঠলেন। আর্তনাদে লুটিয়ে পড়েন বিমানের সিঁড়িতেই। অমিতাভের কফিনের দিকে তাকিয়ে তাঁর একটাই প্রশ্ন “এ হয় না। তুমি এভাবে ছেড়ে চলে যেতে পারো না।” বিমান থেকে নামিয়ে যখন শ্রদ্ধা জানাতে রাখা হয়েছিল তখনও ফের কফিন আঁকড়ে ধরে বারবার বিলাপ করেন বিউটি। বাড়ি ফিরে অসুস্থ শাশুড়ির কাছে গিয়ে ফের আর্তনাদ করে কার্যত জ্ঞান হারান সদ্য স্বামীহারা। মধ্যমগ্রামের শরৎকাননের আনাচে কানাচে এখন শুধুই কান্নার রোল। শোকস্তব্ধ। বিপর্যস্ত। নিষ্প্রাণ। অস্বস্তিকর। কালীপুজোর আগেই বাড়ি ফিরব বলেছিল। ফিরল তার আগেই। কিন্তু সাদা কাপড়ে মুড়ে। নিষ্প্রাণ শরীর হয়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.