ছবি প্রতীকী
ব্যান্ড-বাজা-বারাত তাঁদের দায়িত্ব। আপনি কেবল উপভোগ করুন প্রিয়জনের বিয়ের মুহূর্ত। বিদেশে বসেও কলকাতায় বিয়ের আয়োজন করে ফেলুন। শহরের ওয়েডিং প্ল্যানারদের খোঁজ দিচ্ছেন প্রীতিকা দত্ত।
পাত্র-পাত্রী থাকেন ওয়াশিংটনে। পাত্রীর মা-বাবা দুবাইয়ের নাগরিক। পাত্রের পরিবার সেটলড দিল্লিতে। পাত্রী বাঙালি, তাঁর আত্মীয়স্বজন বেশির ভাগ কলকাতায়। অতএব বিয়েটা কলকাতা ছাড়া অন্য কোথাও করা জাস্ট ভাবনার বাইরে।
স্রেফ রেজিস্ট্রি আর ছিমছাম অনুষ্ঠান করে বিয়ের পাট চোকানো? পাত্র-পাত্রী রাজি, কিন্তু দু’সেট মা-বাবা এই নতুন পন্থায় ঘোরতর অবিশ্বাসী। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হবে বিয়ের মতো করে। অন্য কোনও ভাবে নয়।
পরিস্থিতিটা চেনা-চেনা লাগছে? স্থান-কাল সামান্য পালটে দিলে বাঙালি সমাজে এখন খুব চেনা ছবি এটা। পরিবারের সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। কিন্তু বিয়েটা হতে হবে হোম ম্যাচ। মানে, কলকাতায়।
প্লেয়িং ইলেভেনের বেশির ভাগ যেখানে প্রবাসী, সেখানে কলকাতায় বিয়ে অ্যারেঞ্জ করবে কে? মামা-কাকাদের ইচ্ছে থাকলেও সময় নেই। কে ছুটবে ভেনু বুক করতে? কে ঠিক করবে ক্যাটারার? ব্রাইডাল মেকআপ-টাও এনআরআই পাত্রীর পছন্দসই হওয়া চাই, সুতরাং যে কাউকে ধরে আনলে হবে না। পাত্রের আবার গোলাপ-রজনীগন্ধা ব্যাকডেটেড লাগে। ফ্লোরাল ডেকরে লিলি বা টিউলিপ না থাকলে বিয়েটা জাতে উঠবে নাকি? জমকালো ইন্ডিয়ানওয়্যার ছাড়া বিয়ের মণ্ডপে বসা বিদেশি বন্ধুদের কাছে মান থাকবে?
[বিয়ে না করলেই নির্ঘাত স্মৃতিভ্রংশ! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা]
আধুনিক বাঙালির আধুনিক সমস্যা। যার আধুনিক সমাধান– ওয়েডিং প্ল্যানার।
অনুষ্কা শর্মা আর রণবীর সিং-এর ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ মনে আছে? যশরাজ ফিল্মস-এর ব্যানারে বছর সাতেক আগে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটা। জনমনে বেশ ভালই সাড়া ফেলেছিল। হবে নাই বা কেন! থিম বিয়ের রসদটা ভালই জুগিয়েছিলেন থার্ড ইয়ারের কলেজ পড়ুয়া শ্রুতি। স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের সব থেকে বড় ওয়েডিং প্ল্যানার হবেন তিনি। ঠিক করে রেখেছিলেন নিজের কোম্পানির নামও। ‘শাদি মুবারক’। বলতে গেলে তখন থেকেই বাঙালি মন জানতে পারল, বিয়ে এ ভাবেও করা যায়।
কলকাতার অবাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে আগেই চল ছিল। বিয়েবাড়ি ভাড়া থেকে ক্যাটারিং থেকে বিয়ের যাবতীয় হ্যাপা যে আউটসোর্স করে দেওয়া যায়, বিয়ে আয়োজনের মাথাব্যথা ভুলে অনুষ্ঠানটা যে শুধু উপভোগ করা যায়, সেটা জানার পর বাঙালিও উঠে পড়েছে প্ল্যানড ওয়েডিংয়ের মঞ্চে। দরকার শুধু স্বাস্থ্যকর বাজেট। ব্যস, তা হলেই বিয়ের সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেবেন পেশাদাররা। আর আপনার কাজ? নো টেনশন, ওনলি এনজয়মেন্ট।
কলকাতার অন্যতম ওয়েডিং প্ল্যানার সংস্থা ‘ওয়েডিং সূত্র’-র তরফে রাজ জয়সওয়াল বলছেন, “এটা ঠিক যে এখন কলকাতার বাঙালিরাও বিয়ের জন্য বেশ অনেকটা বাজেট বাড়িয়েছেন। আগে শুধু মাড়োয়ারিদের মধ্যেই বেশি ছিল এই প্রবণতা। আমাদের দিল্লি, মুম্বইয়েও অফিস আছে। প্রবাসী বাঙালিরা বরাবর এ ভাবেই বিয়ের প্ল্যানিং করতেন। থিম ওয়েডিং ছাড়াও আমাদের দায়িত্ব দিলে বিয়ের ‘A to Z’ আমরাই দেখে দেব।” রাজের মতে, ভাল মেকআপ আর্টিস্ট এবং ইউনিক ফটোগ্রাফারের চাহিদা সবথেকে বেশি।
এ রকমই আর এক সংস্থা ‘এমারেল্ড ইভেন্টস’-এর নিধি পোদ্দার জানালেন, কলকাতায় বাঙালিদের মধ্যে ওয়েডিং প্ল্যানারের ট্রেন্ড আস্তে আস্তে চালু হচ্ছে। “বিয়ের ব্যাপারে সবচেয়ে ছোট বিষয়ও আমাদের নজরে রাখি। বাজেট বেশি হলে বিনোদনের জন্য বলিউড স্টারদের আনি। ডেকরেশনে আমরা কোনও প্লাস্টিক ফুল ব্যবহার করি না। সবই আসল,” বলছেন নিধি।
[প্রথম দর্শনে কি সত্যিই প্রেম হয়? কী বলছে সমীক্ষা?]
কী রকম খরচ হয় এক-একটা বিয়েতে? ‘ওয়েডিং সূত্র’-র রাজ বলছেন, “খরচ নির্ভর করে বিয়েতে আমাদের ক্লায়েন্টে কী কী চাইছেন, তার উপর। তাও ধরা যেতে পারে, ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা তো লেগেই যায় এক একটা বিয়েতে।” আর নিধির কথায়, “বাজেট বাড়ালে তো বাড়ানোই যায়। তবে বাজেট ১৫ লক্ষের নিচে হলে তার মধ্যে সব কিছু অ্যারেঞ্জ করা একটু চাপ হয়।”
এই ধরনের ফাইভ স্টার বিয়ের প্রিয় ভেনু হল শহরের সব ফাইভ স্টার হোটেল। ভিভিআইপি ভেন্যুর তালিকায় রয়েছে পিসি চন্দ্র গার্ডেন্স, রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাব, নলবন, ইকো পার্কের মতো প্রমোদস্থান। এ ছাড়া ক্লায়েন্টের কোনও পছন্দের জায়গা থাকলে সেখানেও ব্যবস্থা করে দেন ওয়েডিং প্ল্যানাররা।
‘এমারেল্ড ইভেন্টস’ এবং ‘ওয়েডিং সূত্র’ ছাড়াও কলকাতায় আরও বেশ কিছু ওয়েডিং প্ল্যানিং সংস্থা আছে। যেমন ‘ট্রুলি ইওরস’, ‘অ্যাসপারাগাস’, ‘স্বমঙ্গলম’, ‘অনকোর ইভেন্টস’ ইত্যাদি। কলকাতা আইএইচএম-এর প্রাক্তন ছাত্র এবং ‘অ্যাসপারাগাস’-এর কর্ণধার প্রীতম দত্ত জানালেন, “বিয়ের দায়িত্ব আমাদের দিলে বিয়ের বাজেট থেকে শুরু করে ম্যারেজ হল বুকিং, মেকআপ- সবটাই আমরাই দেখি। আমাদের নিজেদের ক্যাটারিং সার্ভিসও আছে। কার কী চাহিদা সেটা শুনে আমরাই বাজেট রেডি করে দিই। কম-বেশি সব রকম বাজেটেই আমরা কাজ করি।”
ওয়েডিং প্ল্যানারের এত ডিমান্ড যে, এক দিনে তিন-তিনটে বিয়ে পর্যন্ত অ্যারেঞ্জ করতে হয় প্ল্যানারদের। তার বেশি চাহিদা থাকলেও পূরণ করা যায় না, কারণ তাতে কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
[কোন পেশা বেছে নেবে আপনার খুদে? উত্তর দেবে জন্ম মাস]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.