সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে এবছরের মতো অশান্তি অতীতে কখনও দেখা যায়নি। বুধবার যাবতীয় অশান্তির জন্য সরাসরি শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলে তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় তোপ দাগেন একদা তৃণমূলপন্থী বুদ্ধিজীবীরাই। পালটা এদিন সন্ধ্যায় বিদ্বজ্জনদের একাংশের ক্ষোভে মলম দিতেই তড়িঘড়ি আসরে নামলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। জানালেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সকলেরই ভাল সম্পর্ক রয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের বিজেপি ভুল তথ্য দিচ্ছে।
নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চক্রবর্তী, সমাজকর্মী মীরাতুন নাহার, মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র, সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়, পল্লব কীর্তনীয়া-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আজ সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করেন, ভোটের আগে কোনও দল জিতে যায়, বা জেতার পর বিজয়ী প্রার্থীদের দলে টেনে এনে সরকার গঠন করে, তখন বুঝতে হবে গণতন্ত্র বিপন্ন। প্রতুল মুখ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রভুত্ব করে বেশিদিন শাসন করা যায় না।’ গায়ক পল্লব কীর্তনিয়া বলেন, ”শাসক দলের এক নেতা ঘোষণা করছেন, বিরোধীশূন্য হলে জেলায় জেলায় পাঁচ কোটি টাকা উন্নয়ন তহবিলে দেবেন। এ কেমন আচরণ?’ নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী বলেন, ‘গণতন্ত্র আজ দুষ্কৃতীদের হাতে চলে গিয়েছে। রাজ্যে প্রতিবারই ভোটে অশান্তি হয়, কিন্তু এবার যেন সমস্ত মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। একদা তৃণমূলপন্থী বলে পরিচিত বিদ্বজ্জনদের গলায় এরকম বিদ্রোহী সুর মোটেও ভালভাবে দেখছে না শাসক দল। কারণ, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পরবর্তী অধ্যায়ে এই বুদ্ধিজীবীদের পাশে নিয়েই তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল।
বুদ্ধিজীবীদের ক্ষোভে প্রলেপ দিতে সন্ধ্যায় আসরে নামেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বলেন, ‘বিজেপি নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে। কয়েকটি টিভি চ্যানেলের অতিরঞ্জিত প্রচার দেখে মনে হচ্ছে যেন শাসক দল অশান্তি করছে। কিন্তু কই, একটাও নথি এনে তো কেউ দেখাতে পারছেন না!’ যাঁরা আজ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, তাঁদের হাতে সঠিক তথ্য নেই বলেও দাবি করেন পার্থবাবু। তাঁর মতে, আগের চেয়ে বেশি আসনে মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছে বিরোধীরা। তৃণমূলপন্থী বুদ্ধিজীবীদের প্রতি দলের মহাসচিবের বার্তা, ‘যে ধারণা নিয়ে একদিন আমাদের উপর বিশ্বাস রেখেছেন, সে বিশ্বাস অটুট থাকবে। বিরোধীদের প্রতি যে সৌজন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখান, তা বজায় থাকবে।’ তবে কোন তথ্যের ভিত্তিতে বিদ্বজ্জনরা আজ এমন অভিযোগ তুললেন, সে কথা তাঁদের কাছ থেকে জানতে চাইবে তৃণমূল। আজ বুদ্ধিজীবীদের সভায় উপস্থিত সভ্যদের কেউ কেউ এককালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আনুকূল্যে তৈরি বিভিন্ন সরকারি কমিটিতেও ছিলেন, বেতনও নিতেন।
তৃণমূল অবশ্য আজ বুদ্ধিজীবীদের এই আচরণের জন্য বিজেপির ইন্ধনকেই দায়ী করছে। তৃণমূল মহাসচিবের দাবি, প্রায় ৭০ হাজার আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে বিরোধীরা। অথচ সেই তথ্য কোথাও দেখানো হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন বিজেপি-ই জমা দিয়েছে। পার্থবাবুর কথায়, পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি দ্বিমুখী কৌশল নিয়েছে। একদিকে অস্ত্র মিছিল করে মনোনয়ন জমা দেবে ও অন্যদিকে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখিয়ে সকলের নজর ঘোরাবে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বুদ্ধিজীবীদের এদিনের সভাকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। টিপ্পনি কেটেছেন, বিজেপি যখন কলকাতায় অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে, তখন আপনারা সরব হন না কেন?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.