শুভঙ্কর বসু: কাড়ি কাড়ি টাকা, সোনা-হীরে-মানিক কিংবা অগাধ সম্পত্তির মালিক হলেই কি মিলতে পারে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক? সম্প্রতি এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের স্পষ্ট উত্তর-‘না’। প্রচুর ধন-সম্পত্তি কিংবা গণ্যমান্য ব্যক্তি হলেই তিনি যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক রাখার অধিকার পাবেন এমনটা নয়। একজন ব্যক্তি যার এসব কিছুই নেই তিনিও লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুকের অধিকারী হতে পারেন। সেক্ষেত্রে থাকতে হবে প্রাণহানির আশঙ্কা। সেটা শুধু মুখে বললেই চলবে না। উল্লেখ্য ব্যক্তির প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে স্থানীয় থানায় তার প্রমাণও থাকতে হবে।
কোন ঘটনায় এমন রায় দিয়েছে হাই কোর্ট? গত ফেব্রুয়ারিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুকের জন্য জেলাশাসকের দপ্তরে আবেদন জানিয়েছিলেন নদিয়ার বাসিন্দা ইসমাইল মণ্ডল। কিন্তু সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখার পর জেলাশাসক তাঁর সেই আবেদন নাকচ করে দেন। এরপর জেলাশাসকের ওই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ইসমাইল। বিচারপতি শিবপ্রসাদের এজলাসে তাঁর আইনজীবী সুবীর সান্যাল বলেন, ইসমাইল মণ্ডল স্থানীয় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে তিনি একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁর প্রচুর শত্রু রয়েছে। ফলে তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও তাঁর একটি বড় ব্যবসাও রয়েছে। যে কারণে সুরক্ষার খাতিরেই তাঁর একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুকের প্রয়োজন। কিন্তু তিনি আইন মোতাবেক আবেদন জানালেও জেলাশাসক তা নামঞ্জুর করেছেন। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্যের তরফের আইনজীবী অসীম কুমার গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ইসমাইল মণ্ডল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং প্রচুর সম্পত্তির মালিক হলেও তার জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। সে কারণেই তার আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি।
[আরও পড়ুন: বাঁকুড়া থেকে সোনামুখী চলবে ইলেকট্রিক ট্রেন, লকডাউনেই বিদ্যুতিকরণের কাজ সম্পূর্ণ]
দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি প্রসাদ জানিয়ে দেন, প্রচুর সম্পত্তি থাকলেই যে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে এমনটা ধরা যাবে না। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানায় তার প্রমাণও থাকতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় থানায় এমন কোনও ঘটনার উল্লেখ নেই যাতে প্রমাণিত হয় ইসমাইল মণ্ডলের বন্দুকের প্রয়োজন রয়েছে। ফলে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে সেই ভাবনা থেকে প্রাণহানির আশঙ্কা লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক পাওয়ার কারণ হিসেবে যথেষ্ট নয়। পর্যবেক্ষণে বিচারপতি প্রসাদ আরও বলেন, “কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন মামলায় রায় দানের কারণে দায়রা বিচারকদেরও প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। অবসর গ্রহণের পর সেই আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। তা সত্বেও তাঁরা আবেদন করলেই যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক পাবেন এমনটা নয়।” ভারতীয় অস্ত্র আইন মোতাবেক মূলত তিনটি কারণ থাকলে কেউ লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুকের অধিকারী হতে পারেন। যার মধ্যে অন্যতম প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে আত্মরক্ষা। এছাড়া বন্য জন্তুর আক্রমণ থেকে পরিবার ও ফসলকে রক্ষা করার কারণেও মিলতে পারে বন্দুক। পাশাপাশি শুটিং বা নিশানা বাজির জন্য লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুকের আবেদন করা যেতে পারে।