হাঁটুতে ব্যথা কিংবা হাড়ে চোট! আর বড় অপারেশনের চিন্তা নয়। ব্যথা থেকে মুক্তির নতুন এক থেরাপির কথা জানাচ্ছেন অ্যাপোলো গ্লেনিগলস হাসপাতালের বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন ডা. অভীক কর। লিখছেন সোমা মজুমদার
হাঁটুতে ব্যথা? দুর্ঘটনায় হাড়ে আঘাত পেয়ে কাহিল? বড় অপারেশন ছাড়া হয়তো আর কোনও উপায় নেই বলে ধরে নিয়ে অযথা চিন্তা করবেন না। অর্থোপেডিক চিকিৎসায় এই ধরনের সমস্যার সমাধানে নতুন পথের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। হাড়ের চিকিৎসার জন্য ওসরোন ও কার্টিলেজের চিকিৎসার জন্য কনড্রোন এই দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থোপেডিক রোগীরা সহজেই অপারেশন না করে স্থায়ীভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন। আমাদের দেশে খেলতে গিয়ে আঘাত লাগা, দুর্ঘটনায় আঘাতের ঘটনা আকছারই ঘটে। যেসব ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছায় না, সেখানে খুব সহজেই এই দুটি থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। একইসঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে হিপ প্রতিস্থাপন ও হাঁটু প্রতিস্থাপনের বিকল্প হিসাবেও চিকিৎসা করা যাবে।
[ক্যানসারেও ভুয়ো চিকিৎসক! লেকটাউনে জালে ঠগবাজ]
ওসরোন কীভাবে হয়:
ওসরোন হল বোনম্যারো স্টেমসেল থেরাপি। এটি এক ধরনের অটোলোগাস বোন সেল ইমপ্ল্যান্টেশন থেরাপি। এই থেরাপির মাধ্যমে রোগীর শরীর থেকে প্রথমে অস্থিমজ্জা (বোনম্যারো) নেওয়া হয়। সেই অস্থিমজ্জা সংরক্ষণ করে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রথমে সেল কালচার প্রসেস পদ্ধতি পরে কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রসেস পদ্ধতির মাধ্যমে বোন ফ্রেমিং–এর কাজ হয়। এবার তা রোগীর শরীরে যেখানে প্রয়োজন সেখানে প্রয়োগ করা হয়।
কোন কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য: সাধারণত কোনও দুর্ঘটনায় হাড়ে চিড় ধরলে, ভেঙে গেলে, হাড়ের পুনর্গঠনে, কোনও ক্ষেত্রে হাড় জুড়ছে না এমন অবস্থায় অথবা হাড়ে ফাঁক রয়েছে, বোন অগমেন্টেশনে চিকিৎসায় ওসরোন থেরাপি ব্যবহার হয়।
সুবিধা:
- অস্থিমজ্জা নেওয়ার সময় রোগীকে একদিন হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। অন্যদিকে নতুন হাড় প্রতিস্থাপনের সময় রোগীকে দু’–তিনদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়।
- অপারেশনের মতো কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন পড়ে না। চিকিৎসায় বেশি সময়ও লাগে না।
- একবার ওসরোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে রোগী সাধারণত স্থায়ীভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
[মহিলার বাড়িতে ঢুকে পড়ল বিষধর সাপ, তারপর…]
কনড্রোন
কনড্রোন বা এসিআই (অটোলোগাস কনড্রোসাইট ইমপ্ল্যান্টেশন কার্টিলেজ) থেরাপি বিশ্বে কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি পুনর্গঠনের সেরা পদ্ধতি হিসাবে গণ্য হয়েছে। আর্টিকুলার কার্টিলেজ ছিঁড়ে গেলে সাধারণত কনেড্রোন থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। বেশ কয়েক বছর আগে কার্টিলেজ ক্ষয়ের কোনও চিকিৎসা ছিল না। কিন্তু কনড্রোন থেরাপি অর্থপেডিক চিকিৎসায় আসার পর কার্টিলেজের ক্ষয়ের চিকিৎসা সফলভাবে করা সম্ভব হয়েছে।
কীভাবে হয়:
প্রথমে এমআরআই করে রোগীর কোন অংশের কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি ক্ষয় হয়েছে তা দেখা হয়। এরপর রিজিওনাল অ্যানাস্থেসিয়া করে রোগীর শরীরের কার্টিলেজ ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে নিয়ে ল্যাবরোটরিতে সেল প্রসেসিং–এ পাঠানো হয়। সেখানে টিসু্ কালচার ফ্লাক্সে কার্টিলেজ রাখা হয়। এরপর চারটে পর্যায়ের কনড্রোসাইট এক্সপ্যানসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্টিলেজের চূড়ান্ত ফল পাওয়া যায় যা রোগীর ত্রুটিপূর্ণ কার্টিলেজের জায়গায় সামান্য অস্ত্রোপচার করে প্রতিস্থাপন করা হয়।
কখন দরকার:
অনেক সময় খেলতে গিয়ে আর্টিকুলার কার্টিলেজ ছিঁড়ে যায়। আবার বেশি হাঁটলেও হাঁটুর সংযোগস্থলে কার্টিলেজ ছিঁড়ে যেতে দেখা যায়। হাঁটুর কার্টিলেজ, গোড়ালির তরুণাস্থির ক্ষয় এর চিকিৎসায় কনড্রোন থেরাপি ব্যবহার হয়।
সুবিধা:
- অপারেশনের থেকে অনেক কম সময় লাগে। যদিও কার্টিলেজ প্রতিস্থাপনের জন্য সামান্য অস্ত্রোপচার করতে হয়। তবে তাতে সার্জারির থেকে অনেকটাই কম সময় লাগে।
- রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
- একবার কনড্রোন থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করলে রোগী স্থায়ীভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
[অত্যাধুনিক যোগাযোগ উপগ্রহ মহাকাশে উৎক্ষেপণ ইসরোর]
জরুরি তথ্য:
১. বহুদিনের আর্থারাইটিস রোগের চিকিৎসায় ওসরোন ও কনড্রোন থেরাপি কোনও কাজ করে না। প্রাথমিক পর্যায়ে হাড়ের কিংবা কার্টিলেজের সমস্যায় এই দুটি থেরাপি ফলপ্রসূ হয়।
২. সাধারণত রোগীর বয়স পঞ্চাশ বছরের মধ্যে থাকলে এই চিকিৎসা দুটি করা হয়।
৩. কনড্রোন থেরাপির মাধ্যমে কার্টিলেজের চিকিৎসার পর রোগীকে বেশ কয়েকমাস অত্যন্ত যত্নে থাকতে হবে। বেশি জোরে হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে।
যোগাযোগ : ০৩৩ ২৩২০৩০৪০
আরও পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।