চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: কয়েকদিন পরই ইসিএলের সুরক্ষা সচেতনতা সপ্তাহ। সেই সপ্তাহ জুড়ে কয়লা চুরি রোধে মানুষকে সচেতন করতে বিশেষ প্রচার চালাবে ইসিএল কর্তারা। ২৮ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে সচেতনতা শিবির। তার আগে কয়লা চুরি রুখতে স্মার্ট ফোনে ‘অ্যাপ’ নিয়ে এল কয়লামন্ত্রক। স্যাটেলাইট নির্ভর এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন কয়লাঞ্চলের মানুষ। ‘খান-প্রহরী’ নামক অ্যাপটির সাহায্যে ইসিএল-সহ সব কোলব্লকে নজরদারি চালানো যাবে। ইতিমধ্যেই ইসিএলের সিএমডি প্রেমসাগর মিশ্র কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ‘খান প্রহরী’ অ্যাপ সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে হবে। জানা গিয়েছে, এবার অবৈধ খাদান বা চোরাই কয়লা দেখলেই সাধারণ নাগরিক ছবি তুলে পাঠিয়ে দিতে অ্যাপের মাধ্যমে। তারপরই শুরু হবে অভিযান।
সিএমডির কথায়, ‘ইসিএলের নিজস্ব সুরক্ষা বাহিনী, সিআইএসএফ বা পুলিশ থাকলেও সব থেকে বড় নিরাপত্তা বাহিনী হয়ে উঠতে পারেন আম জনতা বা সাধারণ নাগরিক। তাঁরা সচেতন হলেই বন্ধ হবে কয়লা চুরি। চোরাই খাদানে মৃত্যুর ঘটনাও এড়ানো যাবে। একথা মাথায় রেখেই আনা হল নতুন অ্যাপ।’
অভিযোগ, প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে ইসিএলের আধিকারিকদের একাংশ অনেকেই চুরির খবর চেপে যায়। অনেকেই আবার জানতে পেরে ফেসবুক-হোয়াটস অ্যাপে ঘটনার প্রতিবাদ করে। তথ্য ও ছবি পোস্ট করেন। কিন্তু সেই তথ্য সবসময় প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে ঠিকঠাক পৌঁছয় না। কিন্তু এই অ্যাপ ব্যবহার করলে ছবি ভিডিও ও তথ্য একেবারে কয়লামন্ত্রকে পৌঁছে যাবে। দেখতে পাবেন সেই এলাকার উচ্চ আধিকারিক থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ভিজিল্যান্সও।
ইসিএলের সিএমডি প্রেমসাগর মিশ্র বলেন, ‘খান-প্রহরী’ অ্যাপটি ডাউলনোড করা যাবে গুগল প্লে স্টোর থেকে। অ্যাপ ডাউললোড হওয়ার পর ক্লিক করলেই খুলে যাবে পেজ। কোলমাইন্স সার্ভিলেন্স অ্যান্ড ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম লেখার নিচে পাঁচটি ফিচার দেওয়া রয়েছে। নিচে লেখা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ফর রিপোর্টিং ইললিগ্যাল কোল মাইনস বাই পাবলিক। কয়লামন্ত্রকের সঙ্গে সিএমপিডিআইয়ের সংযোগ করে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। হলুদ বাক্সে লেখা কমপ্লেইনে ক্লিক করলে রির্পোরিটং করা যাবে ও ছবি তোলা যাবে। সেইভাবে ডিজাইন করা রয়েছে অ্যাপটি। মাইনস ম্যাপ নামক ফিচারে ম্যাপটি লোকেশন চলে যাবে অ্যাডমিনের কাছে। আর গুগল ম্যাপে অ্যাপ ব্যবহারকারীর লোকেশন ট্র্যাক করা যাবে। এছাড়াও কিছু আরও ফিচার্স রয়েছে যা শুধুমাত্র কয়লা মন্ত্রকের আধিকারিকরা পাসওয়ার্ড দিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
ইসিএলের চিফ সিকিউরিটি অফিসার তন্ময় দাস জানান, সপ্তাহ জুড়ে এই অ্যাপটি সম্পর্কে জোর প্রচার চালানো হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চুরি রোধে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার অনেকটাই কাজে আসবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত রবিবার চোরাই খাদানে নেমে মৃত্যু হয় স্থানীয় তিন যুবকের। মাইনস রেসকিউ টিম, আসানসোল বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী চেষ্টা করেও উদ্ধার করতে পারেনি খনিতে তলিয়ে যাওয়া তিন যুবককে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী তিন যুবকের দেহ উদ্ধার করতে সমর্থ হয় ঘটনার পাঁচদিন পর। ইসিএলের কর্তারা মনে করছেন এই মৃত্যু মিছিল এড়ানো যেত সাধারণ মানুষ যদি সচেতন থাকতেন। এসব ভেবেই এই অ্যাপ তৈরির সিদ্ধান্ত।