তন্ময় মুখোপাধ্যায়: রসগোল্লার জিআই স্বীকৃতিতে বঙ্গে যুদ্ধজয়েরর মেজাজ। ওড়িশার মুখ থেকে রসগোল্লা কেড়ে নিয়ে মিষ্টিসুখে গর্বিত বাঙালি। এই নজিরে রসগোল্লা নিয়ে আহ্লাদ কয়েক গুণ বেড়ে গেলেও এবঙ্গের অনেক মিষ্টিই নিজস্বতায় জায়গা করে নিয়েছে। মিষ্টির তথাকথিত কুলীন কূলে হয়তো পৌঁছাতে পারেনি, কিন্তু এই মিষ্টান্নগুলিও জিআইয়ের দাবিদার।
[কোন পথে জয়যাত্রা শুরু হল বাংলার রসগোল্লার?]
বর্ধমানের সীতাভোগ ও মিহিদানা: কামিনি আতপ চালের সঙ্গে সবেদার রস। তাতেই বাজিমাত। সীতাভোগের মতো ডালের গুঁড়ো ঘিয়ে ভেজে চিনির রসে ফেলে তৈরি হয়েছিল মিহিদানা। লর্ড কার্জনকে চমকে দিতে বর্ধমানের রাজার ছিল এমন দুই নিবেদন।যা ইতিমধ্যেই জিআই ট্যাগ পেয়েছে।
শান্তিপুরের নিকুতি: ছানার সঙ্গে চিনির মিশ্রণ। আলাদা ছাঁচে ফেলে হালকা গরম তেল বা ঘিয়ে ভাজা। তারপর রসের পাকে কিছুক্ষণ। শান্তিপুরের নিখুঁতি এতটাই নিখুঁত যে কামড় দিলে মুখে রসে ভরে যাবে। বাইরে রস যাবে না। পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ ভাল থাকে।
বহরমপুরের ছানাবড়া: ছানা, চিনি, মিছরি এবং ঘিয়ের এক অদ্ভুত যুগলবন্দি। কড়াপাকের মাঝে মিছরির স্তর এর ইউএসপি।
শক্তিগড়ের ল্যাংচা: ল্যাংচা ঘর, ল্যাচাং মহল। বাহারি সব নামের মতো এই মিষ্টির তৈরির ক্ষেত্রে রয়েছে নানা ইতিহাস।
রানাঘাট এবং কাটোয়ার পান্তুয়া: রানাঘাট স্টেশনের পাশে একের পর এক পান্তুয়া স্টপেজ। মেজদা, ছোড়দা, বড়দা। কাকে ছেড়ে কার কাছে যাবেন। কাটোয়ার ক্ষীরের পান্তুয়া কোনও অংশে কম যায় না।
মালদহের রসকদম্ব: মালদহ গেলে রসকদম্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে চান না মিষ্টি রসিকরা। কড়া পাকের রসগোল্লার উপর ক্ষীরের চাদর। নিজস্ব স্বাদ আনতে ব্যবহার হয় পোস্তর প্রলেপ।
বেলাকোবার চমচম: চমচম সর্বত্র পাওয়া যায়। তবে বেলাকোবার চমচম স্বাদে অনন্য, টেকে অনেক দিন।
ক্ষীরপাইয়ের বাবরসা: জিলিপ ভেবে ভ্রম হতে পারে। তবে প্যাঁচের জোর কম। বেসন তেলে বা ঘিয়ে ভেজে চিনির রসে ফেললেই তৈরি বাবরসা।
[ওড়িশাকে হারিয়ে রসগোল্লার অধিকার পেল বাংলা]
পুরুলিয়ার মন্দিরা: বড়াবাজারের মন্দিরা। চাঁচি দিয়ে মন্দিরের মতো তৈরি এই মিষ্টান্ন এলাকায় বেশ জনপ্রিয়।
বলগোনার মন্ডা: গ্রামের মিষ্টি হিসাবেই মূলত পরিচিত। মূলত পুজো-পার্বণে লাগে। পূর্ব বর্ধমানের বলগোনার মন্ডা স্বাদে, গন্ধে অতুলনীয়।
কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া ও সরভাজা: অধর দাসের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ। ক্ষীর ও সরের যোগে এই মিষ্টি নিয়ে রাজার শহরের বাসিন্দাদের গর্বের শেষ নেই।
চন্দননগরের জলভরা তালশাঁস: জলভরা সন্দেশের আবিষ্কারক ‘সূর্য মোদক’। এখানকার জলভরার প্রাণভোমরা চিনির রস ও গোলাপ জলে ভরপুর। স্বাদ ধরে রাখতে এখনও গোলাপ জল আসে কনৌজ থেকে।
সাদা বোঁদে: রামকৃষ্ণদেবের জন্মভূমির এ এক অহঙ্কার। কামারপুকুরের এই বোঁদে শুধু রংয়ের জন্য নয় এর বানানোর পদ্ধতিও খানিকটা আলাদা।
মালদহের কানসাট: মিষ্টির নামেই দোকানের নাম। বঙ্গভূমে এই বিরল নজির ইংরেজবাজারে। ছানার তৈরি জালের উপর ভাজা ক্ষীর ছড়িয়ে দিলে তৈরি হয় কানসাট।