কচিকাঁচাদের শরীরেও একে একে থাবা বসাচ্ছে ডায়াবেটিস। এই রোগের হাত থেকে আপনার সন্তানকে কীভাবে সুস্থ রাখবেন? শিশু দিবস ও বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে তা জেনে নিন এই প্রতিবেদনে। জানাচ্ছেন মেডিকা ডায়াবেটিস সেন্টারের বিশিষ্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. সুজয় রায়চৌধুরি। লিখছেন পৌষালী দে কুণ্ডু।
মাত্র ১০ বছর বয়সি বাচ্চা ডায়াবেটিসের রোগী! চমকে ওঠার কিছু নেই। খারাপ লাইফস্টাইল, মানসিক চাপের জন্য বয়স্কদের অসুখটি এখন থাবা বসাচ্ছে শিশুর শরীরেও। দ্রুত খারাপ হচ্ছে কিডনি, চোখ। এতদিন জিনঘটিত কারণের জন্য টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে খুব কম সংখ্যক শিশু আক্রান্ত হত। কিন্তু বর্তমানে বড়দের মতো টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ছোটদের।
[OMG! শিশুদিবসে তৈমুরকে কোটি টাকার উপহার সইফের]
কেন?
কারণ অনেকগুলি। তবে মূলত এখনকার জীবনযাপনের স্টাইল ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে ওবেসিটি, পড়াশোনার চাপের জন্য স্ট্রেসকে প্রধান দোষী বলা যায়। এছাড়া পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে অর্থাৎ মা-বাবার জিন মারফতও শিশুর ডায়াবেটিস হতে পারে।
মোটা হলেই বিপদ: খেলাধুলা, এক্সারসাইজ করার সময় নেই। পড়াশোনার প্রচণ্ড চাপ। ভাল রেজাল্ট করার জন্য মা-বাবার চাপ। অবসরে মুখ গুঁজে মোবাইল-কম্পিউটারে। অধিকাংশ বাচ্চারই এমন লাইফস্টাইল। সঙ্গে চিপস, বার্গার, ম্যাগি, প্যাকেটের খাবারের প্রতি ঝোঁক। ফলে বাড়ছে সেন্ট্রাল ওবেসিটির প্রবণতা। আর মোটা হলেই লিভারের কার্যক্ষমতা, অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণের ক্ষমতা কমছে। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে। ওজন বাড়ার সঙ্গে ইনসুলিন হরমোনের যোগ রয়েছে। যত ভুঁড়ি বাড়বে তত ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা কমবে। আর টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। সাধারণ ওজনের বাচ্চাদের চেয়ে ওবেসিটি আক্রান্ত বাচ্চার ডায়াবেটিস হওয়ার চান্স তিন-চার গুণ বেশি। তাই বাচ্চার উচ্চতা ও ওজন অনুযায়ী বিএমআই যেন স্বাভাবিক থাকে।
[কোন পথে জয়যাত্রা শুরু হল বাংলার রসগোল্লার?]
অতিরিক্ত চাপ একদম নয়: স্কুলে প্রায় রোজ ক্লাস টেস্ট, সন্ধ্যায় কোচিংয়ের শিক্ষকের পড়া ধরা। সব পারতে হবে। সব মুখস্থ রাখতে হবে। ফার্স্ট হতে হবে। নম্বর কম হলেই বকুনি। পেরেন্ট-টিচার্স মিটিংয়ে কোনও অভিযোগ পেলেই পিটুনি। বহু বাচ্চাই এই চাপের আতঙ্কে সব সময় টেনশনে থাকে। কখনও কখনও এই চাপা স্ট্রেস, টেনশন ডায়াবেটিসের কারণ হয়ে ওঠে। মানসিক চিন্তার জন্য বড়দের যেমন ডায়াবেটিস হয়, ঠিক তেমনভাবেই শিশু বা টিনএজারদেরও হচ্ছে। এর সঙ্গে ওবেসিটির প্রবণতা মিলে গিয়ে ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই সন্তানকে সুস্থ রাখতে অযথা কোনও চাপ দেবেন না। প্রয়োজনে মিউজিক থেরাপি করিয়ে স্ট্রেস কমান। নাচ-গান-আঁকার সঙ্গে যুক্ত রাখুন।
বাবা-মায়ের ডায়াবেটিস: ফ্যামিলি হিস্ট্রিতে ডায়াবেটিস থাকলে ছোটবেলা থেকে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা একটু থাকে। জিনঘটিত কারণেই এটি হয়। তবে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের রোগী হলে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। এই ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নিতে হলেও তাতে যন্ত্রণা হয় না। আধুনিক এই ইনসুলিন ইঞ্জেকশন দেওয়া শিখে নিয়ে বাবা-মা, এমনকী বাচ্চা নিজেও নিতে পারে।
অসুখ বুঝবেন কীভাবে?
বারবার খিদে পাওয়া, একটুতেই ক্লান্তি, অত্যাধিক জল তেষ্টা, বাথরুম পাওয়া, দুর্বল বোধ করা, আগে মোটা থাকলেও হঠাৎ রোগা হয়ে যাওয়া, কেটে গেলে ঘা শুকাতে দেরি, ঘন ঘন সর্দি-জ্বর ডায়াবেটিসে আক্রান্তের লক্ষণ। তবে ৫০ শতাংশের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস লক্ষণগুলি দেখা যায় না। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস হলে বা ওবেসিটি থাকলে শিশুর ডায়াবেটিসের লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে ঠিক সময়ে চিকিৎসা না শুরু করলে খুব কম বয়সেই হার্ট, কিডনির অসুখ হতে পারে।
১২-১৩ বছর বয়স হলেই একবার ব্লাড সুগার টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। পিপি ও ফাস্টিং ছাড়াও এইচবিএ১সি টেস্ট করলে আরও নিখুঁত ফলাফল পাওয়া যাবে। অনেক বাচ্চা প্রি-ডায়াবেটিক স্টেজে থাকে। এক্ষেত্রে ফাস্টিং সুগার ১০০-১২৫ ও পিপি ১৪০-২০০ থাকে। এদের ডায়াবেটিস বর্ডার লাইনে। ওজন কন্ট্রোল, লাইফস্টাইল মডিফিকেশন না করলে ভবিষ্যতে এরা দ্রুত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। একইসঙ্গে ডাক্তার ও ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শমতো ডায়েট মেনে ১৮০০-২০০০ কিলোক্যালোরি মেপে খেতে হবে।
[শিশুদিবসে আধারের ‘সঞ্জীবনি’ হাতে পেলেন তেইশের যুবক]
চিকিৎসা: ডায়েট মেনে, শরীরচর্চা করেও তিন-চার মাসের মধ্যে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে না এলে বাচ্চাকে কিছু ওষুধ দিতে হবে। এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। খুব হাই সুগার থাকলে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।
মা-বাবাকে সতর্ক হতে হবে:
- রোজ অন্তত আধ-এক ঘণ্টা বাচ্চাকে মাঠে খেলতে দিন। যোগ ব্যায়ামও করাতে পারেন। তবে সমবয়সিদের সঙ্গে ছুটোছুটি করে খেললে শরীরে মেদ জমার প্রবণতা কমার পাশাপাশি শিশুর মনের চাপও কমে।
- প্রয়োজনে হাঁটাহাঁটি, জগিং করাতে হবে।
- পড়াশোনায় ভাল রেজাল্ট, কেরিয়ার নিয়ে চাপ দেবেন না। স্কুল-কোচিংয়ের বাইরের জগতের সঙ্গে আনন্দে সময় কাটাতে দিন।
- ভাজাভুজি, তেলযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড না দিয়ে সবুজ, টাটকা শাকসবজি, মাছ, ডিম খাওয়াতে হবে। সাধারণত, লো-ফ্যাট, লো-
- কার্বোহাইড্রেট, হাই প্রোটিনের ডায়েট মেনে চলতে বলা হয়।
আরও জানতে : ৭০৪৪৪৯৯৯২৭
ডায়াবেটিস সংক্রান্ত আরও পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।