Advertisement
Advertisement

Breaking News

আপনার সন্তান ঠিকমতো বেড়ে উঠছে তো? জানাটা খুবই জরুরি

কিন্তু, কীভাবে?

How to take care of your baby
Published by: Tanumoy Ghosal
  • Posted:December 4, 2018 9:51 pm
  • Updated:December 4, 2018 9:51 pm

আপনার সন্তানের বুদ্ধির বিকাশ ঠিকঠাক হচ্ছে তো? খেয়াল রাখুন। পরামর্শ দিচ্ছেন কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সের বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট ডা. অনির্বাণ ঘোষাল। শুনলেন জিনিয়া সরকার

শোনার সমস্যায় উন্নত মাইক্রোস্কোপিক সার্জারি

Advertisement

সম্প্রতি ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ইএনটি, হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগে লাইফ অটোলজি অ্যান্ড টেমপোরাল বোন ডিসসেকশন অপারেশনের ওয়ার্কশপ হয়। শোনা বা কানের অন্যান্য সমস্যায় মাইক্রোস্কোপিক সার্জারি করে কীভাবে রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব তাই ছিল এই ওয়ার্কশপের উদ্দেশ্য। লাইভ অপারেশন করে দেখালেন মুম্বইয়ের নানাবতী হসপিটালের ইএনটি সার্জন ডা. কে.পি মোরওয়ানি। ওয়ার্কশপ অর্গানাইজেশন কমিটির চেয়ারম্যান ডা. সোমনাথ সাহা বলেন, এমন কর্মশালা আয়োজনে জুনিয়ার ডাক্তারদের এই চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ে। হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাও অনেক উন্নত হবে। জন্মের প্রথম আটটা বছরই শিশুর ব্রেনের ৮০ শতাংশ বিকাশ হয়ে যায়। শৈশবকালে একজন শিশু যা শেখে তা নিয়মিত প্র‌্যাকটিস না করলেও মস্তিষ্কে এমনভাবে গেঁথে যায় যে সারা জীবন মনে থাকে। ফলে ছোটবেলায় শেখা সমস্তই বড় বয়সে কাজ, কথাবার্তার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাই জন্মের পর এই আটটা বছর শিশুর মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

Advertisement

জন্মের সময় বেশি সতর্কতা

শিশু যখন মাতৃগর্ভে, ব্রেন ডেভলপমেন্টের অনেকটা কাজ তখনই সম্পন্ন হয়ে যায়। তারপর ধীরে ধীরে শিশু জন্মের পর থেকে বাকি বিকাশ সম্পন্ন হয়। তাই বাচ্চার ব্রেন ঠিকমতো বিকশিত হতে মায়ের ভূমিকাও জরুরি। মায়ের সঠিক বয়সে সন্তানধারণ অত্যন্ত জরুরি। গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টিও ঠিক থাকলে তবেই ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ ঠিকমতো হবে। এছাড়া শিশুর জন্মের সময় সতর্ক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকক্ষেত্রে জন্মানোর সময় শিশু কাঁদে না। এটা শিশু ব্রেনের ক্ষতি করে। সদ্যোজাতের কান্নার ফলে তার ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করতে শুরু করে। ফলে রক্ত স্বাভাবিকভাবে সঞ্চালিত হতে শুরু করে। তাই না কাঁদলে শিশুর চিকিৎসা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হলে শিশুর পরবর্তীকালে মস্তিষ্কের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ব্রেনে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে শিশুর ব্রেন ড্যামেজ হতে পারে। তাই মায়ের উচিত অ্যান্টিনেটাল চেক আপ করা।

পরিবারই দায়ী

এখন অধিকাংশ পরিবারই খুব ছোট। অধিকাংশ বাবা-মা কর্মরত। ফলে শিশুর সঙ্গে ঘরে কথা বলা, খেলাধুলা করার সঙ্গীর অভাব। মোবাইল, টিভি কিংবা ল্যাপটপে গেমই শিশুর বেড়ে ওঠার সঙ্গী। শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিক করতে শিশুর প্রতি যত্নবান হওয়া অত্যন্ত জরুরি। মোবাইল, ভিডিও গেম খেলে কিংবা কার্টুন দেখিয়ে শিশুকে বাড়তে দিলে তা শিশু মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। শিশুর মনে একটা নির্দিষ্ট জিনিসই গেঁথে যায়। ফলে সে আর নতুন কিছু শিখতে পারে না। মন বা মস্তিষ্কের বিকাশ থমকে যায়। তাই অধিকাংশ শিশুরই বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক লক্ষণের তারতম্য ঘটছে।

বেড়ে ওঠার সময়

১.শিশুর বাড়ন্ত বেলায় স্বাভাবিক লক্ষণের মধ্যে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে তা নানা রোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই সকলের সঙ্গে মিলেমিশে শিশুকে বড় করা অত্যন্ত জরুরি। শিশুর সঙ্গে অনর্গল কথা বলা, গল্প শোনানো দরকার। অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে, মিশতে দিতে হবে। এতে নিত্যনতুন বিষয়ের উপর শিশুমনের প্রকাশ ঘটে।

২. অধিকাংশ কর্মরত বাবা-মা শিশুকে ক্রেজে বা আয়ার কাছে রেখে বড় করেন। এক্ষেত্রে যাঁর কাছে শিশুর দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছেন তাঁকে সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে শিশুর সঙ্গে যেন সারাদিন নানা কথা বলে, গল্প শুনিয়ে রাখেন। এমন ভাবেই শিশুকে দেখাশোনা করছেন কি না তা নজরে রাখাও জরুরি।

৩. শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ কেমন হওয়া উচিত? সেই ব্যাপারে প্রতিটি বাবা-মায়ের অনেক বেশি জ্ঞান থাকা জরুরি। তা না হলে শিশু যে পিছিয়ে পড়ছে সেটা সঠিক সময়ে বুঝতে পারাও দুরূহ হয়ে পড়ে। যখন বোঝেন তখন হয়তো অনেক কিছুই করেও সেই স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না।

৪. শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সঠিক পুষ্টি জরুরি। বিশেষ করে ভিটামিনের ঘাটতি যেন কোনও ভাবেই না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। শিশুকে পর্যাপ্ত প্রোটিন খাওয়াতে হবে।

প্রকাশে লুকিয়ে বিকাশ

জন্মের পর সদ্যোজাতর প্রথম প্রকাশ মাধ্যম হল কান্না। তিনমাস বয়সে মুখে হালকা আওয়াজ করতে শেখে ও মায়ের চোখে চোখ রাখতে শেখে। ৬ মাস বয়সে গিয়ে খুব ছোট ছোট বা এক অক্ষরের শব্দ বলতে শেখে। আটমাসে দু’অক্ষরের (বাবা, দাদা) শব্দ একসঙ্গে বলতে পারে। একবছর বয়সে গিয়ে সেই শব্দের সঠিক প্রয়োগ বোঝে। অর্থাৎ বাবাকে বাবা, মাকে মা বলে ডাকতে পারে। দেড় বছর বয়সে শিশু ৭-৮ টা শব্দ বলতে শিখে যায়। দু’বছর বয়সে ছোট ছোট শব্দ দিয়ে বাক্য (ভাত খাব, জল দাও ইত্যাদি) গঠন করে ফেলে। তিন বছর বয়সে নিজের নাম উচ্চারণ করতে ও অন্যরা নাম ধরে ডাকলে তা চিনতে পারে। বিভিন্ন রং চিনতে শিখে যায়। চার বছর বয়সে নিজের মতো বানিয়ে গল্প বলে। পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে স্বাভাবিক কথা বলতে শিখে যাওয়াই মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের লক্ষণ।

স্বভাবেই অসুখ
১)  শিশুর ত্বক খুব মোলায়েম, নরম হয়। কোনও কারণে ত্বকে কোনও দাগ-ছোপ বা ত্বকে খসখসে ভাব দেখা দিলে, চুলের রং পরিবর্তিত হলে অপুষ্টি একটি কারণ হতে পারে। প্রোটিনের অভাবে এমন হতে পারে। ভিটামিনের অভাবে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়।

২) যদি দেখা যায় শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার সঙ্গে তার কথা বলা, চিন্তাভাবনা কিংবা কাজকর্মের মধ্যে অস্বাভাবিকতা রয়েছে তবে তা অন্য অসুখের লক্ষণও হতে পারে। শিশু যদি চোখে চোখ রেখে কথা না বলতে পারে কিংবা তাকানোর ভঙ্গিমা অন্যরকম সেক্ষেত্রে তা অটিজম অসুখের লক্ষণ হতে পারে। নিজের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে রাখার প্রবণতা থাকে। এরা কারও সঙ্গে মিশতে পারে না, কথা বলে না। হঠাৎ হঠাৎ রেগে যায়, পান থেকে চুন খসলেই তিরিক্ষে মেজাজ, বায়নার চূড়ান্ত, একগুঁয়ে স্বভাবের হয়। এক্ষেত্রে শিশুর মস্তিষ্কের সামাজিক বিকাশের ঘাটতি থাকে। শিশু অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে। তখন সেই শিশুর ডেভলপমেন্টাল থেরাপি বা অটিজমের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা জরুরি।
৩)  অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই দেখা যায় পড়াশোনা বা যেকোনও কাজ করতে মনোসংযোগের খুব অভাব। খুব ছটফটে মনের হয়। অল্পতেই খুব উগ্র স্বভাবের প্রকাশ ঘটে। সবেতেই হঠকারিতা। এমন লক্ষণ অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিসওর্ডার বা হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার থেকে দেখা দেয়। এমন শিশুদের প্রতি বাবা—মাকে সকর্ত হতে হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা জরুরি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ