প্লাস্টিক ব্যবহার যে ভাল নয়, তা কারও অজানা নয়। কিন্তু তাও প্লাস্টিকের বোতল, টিফিন বক্স, এমনকী প্লাস্টিকে মোড়া খাবারও খায় ছোটরা। জল থেকে ফল, সবখানেই অবারিত দ্বার প্লাস্টিকের। নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহারে ক্ষতি কতটা? খোঁজ করলেন সুমিত রায়।
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? এই নিয়ে অতীতকাল থেকেই নানা বিতর্ক চলে আসছে। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতি থেমে থাকেনি। আবিষ্কার সবসময়েই আমাদের অগ্রগতিকে তরান্বিত করেছে। তবে সীমাহীন কোনও কিছুই ভাল নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত নির্ভরতা সবসময়ই বিপদ ডেকে আনে আর তখনই আশীর্বাদ হয়ে যায় অভিশাপ। যার জলজ্যান্ত একটি উদাহরণ প্লাস্টিক। ১৮৯৮ সালে পলিমেথাইলেন ও তারপর ১৯৩৩ সালে পলিথিলিন রূপে প্লাস্টিকের আবিষ্কার হয়। এরপর বিভিন্ন রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক তৈরি হয়, নানা ক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে। জলের বোতল, খাবার প্লেট, ক্যারি ব্যাগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে শুধু সুবিধার কথা ভাবলে অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যের প্রতি অবমাননা করা হয়। তাই এখন প্লাস্টিক ছাড়া আমরা চলতেই পারি না, অলক্ষ্যে স্বাস্থ্যের কতটা ক্ষতি করছি তা প্রায় উপেক্ষিত। প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশের পাশাপাশি জীবজগতের ক্ষতি করছে মারাত্মক। দূষিত হচ্ছে বায়ু, মাটি ও জল। এই প্লাস্টিক যেহেতু নষ্ট হয় না, তাই এর নিস্পত্তি আজ বিশ্বজুড়ে বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্ষতির প্লাস্টিক
- প্লাস্টিক বিভিন্ন ধরনের হয়। যে কোনও প্লাস্টিকের পাত্রের পিছনে ত্রিকোণা রিসাইকেল চিহ্নের মধ্যে ১-৭ পর্যন্ত যেকোনও একটি নম্বর দেওয়া থাকে। এই নম্বরের উপর ভিত্তি করেই ভাল-খারাপ প্লাস্টিক চেনা যায়।
- এর মধ্যে ৩ রকম প্লাস্টিক অত্যন্ত ক্ষতিকর। – PET (No.1), PVC (No.3) এবং পলিস্ট্রেন (No.6) জাতীয় প্লাস্টিকের দীর্ঘ ব্যবহার ক্যানসার ঘটাতে পারে এবং হরমোনের নানা পরিবর্তন ঘটায়। এই প্লাস্টিকের খারাপ কেমিক্যাল শরীরে কৃত্রিম হরমোন তৈরি করে শরীরের নানা গরমিল ঘটায়। PET দিয়ে জলের বোতল ও PVC দিয়ে বাচ্চাদের খেলনা, কিছু বোতল, খাবারের মোড়ক তৈরি করা হয়। পলিস্ট্রেন ব্যবহার করা হয় একবার ব্যবহার যোগ্য খাবারে প্লেট ও কাপে। এই ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিকের দীর্ঘ ব্যবহার থেকে ক্যানসার, হৃদরোগের প্রবণতা বাড়তে থাকে। প্লাস্টিকের পাত্রে জল বা খাবার খাওয়ার দীর্ঘ অভ্যাস থাকলে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
- সবচেয়ে নিরাপদ প্লাস্টিক হল PLA (No.7) পলিমান পলিঅ্যাকটাইড। এই প্লাস্টিক আখ ও ভুট্টার নির্যাস থেকে তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এই বোতলে No.7 না বসিয়ে সবুজ পাতার চিহ্ন দেওয়া থাকে।
- নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিওনাদ্রো জানিয়েছেন যে, আমেরিকাতে দেখা গিয়েছে, যে বাচ্চারাই স্থূলতায় ভুগছে তাদের প্রস্রাবে বিপিএ-র মাত্রা অনেক বেশি। এই উপাদান প্লাস্টিকের পাত্র থেকে শরীরে যায়। বিপিএ-এর মাত্রা শরীরে বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে ডায়েবেটিস, লিভারের সমস্যা ও হৃদরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়ে। এমনটাই দাবি ইউনাইটেড কিংডমের পেনিনসুলা মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকদের।
সাবধান!
প্লাস্টিক থেকে মূলত তিন ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান খাদ্যের সঙ্গে মিশে শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। ‘স্টাইরিন’ (যেটা ফোমের কাপ-প্লেটে থাকে), বিসপেনল এ বা বিপিএ (যেটা প্লাস্টিককে ঝকঝকে দেখতে ও শক্ত করতে সাহায্য করে) এবং ফ্যালেট (যেটা প্লাস্টিককে নরম বা সচল করতে সাহায্য করে)। এই তিনটে জিনিসে উপাদানগুলি প্লাস্টিকের বাটি, কৌটো, বোতল থেকে বেরনোর সম্ভাবনা সবচেয়ে, বিশেষ করে যখন এগুলো গরম বস্তুর সংস্পর্শে আসে। এছাড়া দীর্ঘদিন ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বাসন বা বোতল থেকে এই কেমিক্যাল সবচেয়ে বেশি বের হয়।
মেনে চলুন
- যতটা সম্ভব কাচ, মাটি বা স্টেনলেস স্টিলের জিনিস ব্যবহার করুন, প্লাস্টিকের বোতলের জল বা কোল্ড ড্রিঙ্কসের বোতল ব্যবহার করবেন না। প্লাস্টিকের বোতল কিনলে তাতে PET লেখা দেখে কিনুন। কিন্তু তা ৬ মাসের বেশি ব্যবহার করবেন না।
- যদি প্লাস্টিকের বাসন ব্যবহার করেন সেটাতে গরম জিনিস রাখবেন না বা মাইক্রোওয়েভে ব্যবহার করবেন না।
- প্লাস্টিকের পাত্রে বা কন্টেনারে রেস্টুরেন্টের খাবার কিনে এলে খাবেন না। তৈলাক্ত গরম খাবার প্লাস্টিকের পাত্রে রেখে খেলে ক্ষতি মারাত্মক।