Advertisement
Advertisement

মোবাইলের বিকিরণ বিষের থাবায় শিশুরা, আড়ালে ব্রেন ক্যানসারের বীজ

এই বেলা সতর্ক হোন।

Radiation from Mobile can cause cancer in children

ছবি: প্রতীকী।

Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 14, 2018 5:05 pm
  • Updated:March 14, 2018 5:05 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মোবাইল নামটা শুনলেই হল। একবার হাতে পাওয়ার জন্য কত যে বায়না,  কত যে কান্না। না দিলে জেদ আরও বেড়ে যায়। আর হাতে পেলেই সঙ্গে সঙ্গে বুঁদ মোবাইলের স্ক্রিনে। দুধের শিশুও আজকাল মোবাইলে ভিডিও বা ছবি না দেখে খেতে চায় না। নার্সারির বাচ্চাগুলো মোবাইল গেমসে মুখ গুঁজে। বারণ করলে বাড়িতে বেধে যায় যুদ্ধ। আবার অনেক মা নিজের কাজ গোছানোর ব্যস্ততায় শিশুর হাতে তুলে দেন মোবাইল। প্রায় সব বাড়িতেই এক দৃশ্য।

বাচ্চারা এতটাই মোবাইলে আসক্ত যে, মাঠে খেলতে যাওয়া কিংবা বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটানোয় আগ্রহ নেই। তারা ক্রমশই হয়ে উঠছে ডিজিটালি ইনটক্সিকেটেড। যার প্রভাবে শিশু মস্তিষ্কে রেডিয়েশনের প্রকোপ মারাত্মক বাড়ছে। অনেক দেশেই ১২ বছর বয়সের আগে মোবাইল ফোনের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এদেশে সেই সচেতনতাই নেই।

Advertisement

ব্যবহারে অসুখ

Advertisement

ছোট থেকে অনিয়ন্ত্রিত মোবাইল ফোনের ব্যবহার ৪০০ শতাংশ সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে ব্রেন ক্যানসারের। এই রেডিয়েশন ডিএনএ নষ্ট করে,  স্লিপ ডিসঅর্ডারের সমস্যা বাড়ায়, নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ ও অ্যালঝাইমারের সমস্যা ডেকে আনে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের(হু) তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশন ‘পসিবলি কার্সিনোজেনিক’ অর্থাৎ এই রেডিয়েশন থেকে ক্যানসারের সম্ভাবনা খুব বেশি। বিশেষ করে এই রেডিয়েশনের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি শিশু মস্তিষ্কে। কারণ শিশুদের ব্রেনের ত্বক, টিস্যু ও হাড় খুব পাতলা হয়। ফলে রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব প্রাপ্ত বয়স্কদের থেকে দ্বিগুণ বেশি। জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী,  রেডিয়েশনের প্রভাব শিশুদের ব্রেনের নার্ভে পড়ে। যা থেকে খুব সহজেই ক্যানসার,  ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয় শিশু মস্তিষ্ক। শিশুরা যদি দু’মিনিটও ফোনে কথা বলে, তাতেও তাদের ব্রেনে রেডিয়েশন থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যাকটিভিটি শুরু হয়ে যায়। যা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে। এটি শুধু কানের চারপাশের ব্রেনেই প্রভাব ফেলে না। তা ক্রমশ ব্রেনের গভীরে প্রবেশ করে মনোসংযোগ ও পড়াশোনা বোঝার ক্ষমতা কমায়। বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত চারিত্রিক স্বভাব প্রকাশ পায়। স্কুলে যেতে,  পড়তে অনীহা ও ছোট বয়সেই মানসিক অবসাদ ডেকে আনে।

ছোট সমস্যার সূত্রপাত

১- পড়াশোনার বাইরে অবসর সময় শুধু মোবাইলে মুখ গুঁজে কাটানো। যার ফলে খুব ছোট বয়সেই এখন গ্রাস করছে টাইপ টু ডায়াবেটিস ও চাইল্ডহুড ওবেসিটি।

২- শিশুর অল্পতেই বিরক্তভাব, কোনও কিছু নিয়েই বেশিক্ষণ খুশি থাকতে পারে না। রেডিয়েশনের ক্ষতি থেকে বাড়ছে অল্প বয়সে হার্টের সমস্যা ও উচ্চ রক্তচাপ।

৩- সকলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয় না। শিশুর মনে জন্ম নেয় নেতিবাচক, হিংসাত্মক মনোভাব।

৪- দীর্ঘ সময় মোবাইলের মতো অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার থেকে চোখের ক্ষতি হয়। অল্পতেই চোখ জ্বালা করা, লাল হওয়া, ড্রাইনেস অফ আই হতে পারে।

রেডিয়েশন থেকে বাঁচতে

মোবাইলে কথা বলার পাশাপাশি দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেটে সিনেমা,  কার্টুন দেখা। অনলাইন গেম খেলা অথবা ভিডিও কলিং,  চ্যাট, সবেতেই রেডিয়েশনের প্রকোপ মারাত্মক। তাই বাচ্চাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে, এই পথে শান্ত করার চেষ্টা করলে বিপদই বেশি।

১- শিশু ফোন নিয়ে খেললে সবসময় তা ফ্লাইট মোডে রেখে তবে তার হাতে দিন। ফোনে কথা বলতে দিলে সবসময় হেডসেট লাগিয়ে কথা বলতে শেখান।

২- মোবাইল হাতে দিলে সে কী করছে, কিংবা কী দেখছে, তা সবসময় নজরে রাখা উচিত।

৩- রাত্রে ঘুমানোর সময় শিশুর মাথার কাছে ফোন রাখা চলবেই না। চার্জে বসিয়ে রাখলেও বিপদ। সবচেয়ে ভাল, শোওয়ার ঘরে ফোন না রাখা।

৪- ১২-১৬ বছর বয়সের নিচে ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়। ১৬-র কম বয়সীদের মস্তিষ্কে রেডিয়েশনের প্রভাবে ক্ষতি হয় সহজে।

৫- বাস,  ট্রেন ও চলমান অবস্থায় মোবাইলে কথা বললে সিগন্যালের খুব বেশি তারতম্য ঘটে। ফলে রেডিয়েশন খুব বেশি নির্গত হয়। তাই এমন অবস্থায় শিশুর হাতে ফোন দেওয়া উচিত নয়।

৬- যখন ফোনের সিগন্যাল খুব দুর্বল, থাকবে তখন শিশুকে মোবাইল ব্যবহার না করতে দেওয়াই উচিত।

৭- বাচ্চার কাছে বেশি মোবাইলে কথা কিংবা ইন্টারনেট করা চলবে না।

৮- স্কুলের চারপাশে,  খুব কাছাকাছি মোবাইল টাওয়ার থাকলে রেডিয়েশনের প্রকোপ পড়ে মারাত্মক। তাই সাবধান।

৯- অভিভাবককে রোল মডেল হতে হবে৷ বাচ্চার সঙ্গে মুখোমুখি বসে বেশি সময় কাটান৷ কী বলছে শুনুন, গল্প করুন৷ নিজেকে সময় দিতে গিয়ে বাচ্চাকে নেট দুনিয়ায় বুঁদ করে রাখবেন না। সন্তানের সামনে ফেসবুক,  হোয়াটসঅ্যাপ নয়৷ কাজ থেকে ফিরে সন্তানকে সময় দিন। ফোনের মাধ্যমে ওয়ানওয়ে কমিউনিকেশন হয়, যা শিশুর ব্রেনের ডেভলপমেন্টে বাধার সৃষ্টি করে। সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য দরকার টু-ওয়ে কমিউনিকেশন৷

১০- ০-২ বছরের বাচ্চার জন্য ফোন, টিভি, গেম কোনওটাই নয়।

১১- ৩-৫ বছরের বাচ্চা দিনে এক ঘণ্টা টিভি দেখতে পারে। তবে মোবাইল ফোন, ট্যাব ব্যবহার নয়।

১২- ৬-১২ বছর টিভি দেখতে পারে দিনে দু’ঘণ্টা৷ ফোন,  ট্যাব ব্যবহার নয়৷

১৩- ১৩-১৮ বছর বয়সীরা দিনে দু’ঘণ্টা টিভি। গেম, ফোন, ট্যাব ব্যবহার করলে ৩০ মিনিটের বেশি নয়।

মোবাইল থেকে নির্গত মাইক্রোয়েভ রেডিয়েশন শিশুর শরীরে সহজেই প্রবেশ করে। যার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্ক, হার্ট ও লিভারে। ক্ষতি হয় বলেই এখন বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি ফোনের প্যাকেটে, নির্দিষ্ট সেন্টিমিটার দূরে রেখে কথা বলার নির্দেশ লিখে দেয়। বেশিক্ষণ ফোনে কথা বললে কান-মাথা গরম হয়ে ব্যথা করে। ব্যবসায়িক স্বার্থে অনেকেই দাবি করেন, মোবাইল ব্যবহারে কোনও ক্ষতি নেই। তাতে ভরসা করে সারাদিন মুঠোফোনে নিজেকে আটকে রাখা উচিত নয়। কথা বলা, ইন্টারনেট, অনলাইন ভিডিও গেম, সবেতেই রেডিয়েশনের প্রকোপ রয়েছে। বেশকিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রেডিয়েশনের জেরে শরীরে ডিএনএ ভেঙে যায়। যা থেকে ক্যানসারের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

অধ্যাপক

ড. সুধাবিন্দু রায়

ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, যাদবপুর

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ