Advertisement
Advertisement

জানেন, কেন অধিকাংশ চালক স্টিয়ারিং হাতেই ঘুমিয়ে পড়েন?

স্লিপ অ্যাপনিয়া নয় তো? সাবধান!!!

Sleep Apnea a major cause of road mishap: Dr Shantanu Banerjee
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 27, 2017 1:37 pm
  • Updated:June 27, 2017 1:37 pm  

কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। মাত্র সাতচল্লিশেই থেমে গিয়েছে  লোকগানের এই  চেনা সুর। কারণ, পথদুর্ঘটনা। মাঝ রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন গাড়ির চালক। কিন্তু কেন? কেন দক্ষ হাতেও স্টিয়ারিং কেঁপে উঠেছিল? চোখে নেমে এসেছিল অযাচিত ঘুম? আসল কারণটি জানালেন শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। শুনলেন শুভময় মণ্ডল ও সুপর্ণা মজুমদার।

মার্চের প্রথম সপ্তাহেই এসেছিল খবরটা। কিন্তু এখনও যেন বিশ্বাস ঠিক করে উঠতে পারেনি সংগীতপ্রিয় বাঙালি মন। কাদামাখা দেহটা যখন বের করা হয়েছিল, চেনাই প্রায় যাচ্ছিল না। পথ দুর্ঘটনার নির্মম পরিণতি যে কী হতে পারে, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে বিশ্বকে দেখিয়ে গিয়েছে কালিকাপ্রসাদের মৃত্যু। কিন্তু সাধারণ মানুষের স্মৃতিশক্তি বড়ই দুর্বল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতি বড় ঘটনা বা দুর্ঘটনা ভুলতে পারাটাও যেন মানুষের মজ্জাগত। আর এই ভুলেই হারিয়ে যায় কিছু প্রশ্ন। কিছু এমন প্রশ্ন যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মানুষের জীবন। আর তাঁর মৃত্যু।

Advertisement

[জানেন, শ্যাম্পু-ডিটারজেন্টও আপনার যৌনজীবনে ডেকে আনছে বিপদ?]

মৃত্যু কখন কার জীবনে কীভাবে আসবে, সে প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারে না। কিন্তু সতর্ক তো মানুষ হামেশাই হতে পারেন। নিজের মতোই বাকিদেরও সতর্ক করতে পারেন। এই সতর্কতার জন্যই তুলতে পারেন প্রশ্ন, কেন গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল কালিকাপ্রসাদের গাড়ির চালক? প্রশ্নের উত্তরে নানা মুনির নানা মত হতেই পারে। কিন্তু আসল কারণের হদিশ ক’জন রাখেন? পথদুর্ঘটনার বলি তো একা কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য নন। এমন ঘটনা আজ নয় তো কাল আমার কিংবা আপনার সঙ্গে ঘটতে পারে না, তা কি কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবেন? তাহলে, ঘটনা ঘটার জন্য কি অপেক্ষা করা উচিত? নাকি রোগের আসল কারণটিকে খুঁজে বের করে তাকে সমূলে ধ্বংস করা উচিত?drowsy1

হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থেই এটি একটি রোগ। যে রোগটির কথা এখনও অধিকাংশ বাঙালিরই অজানা। স্লিপ অ্যাপনিয়া। এই সেই রোগ যার প্রকোপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অথচ যার সম্পর্কে এখনও সাধারণ মানুষ সচেতন নন। আর সবচেয়ে বেশি এমন রোগ যাঁদের উপর থাবা বসাচ্ছে, তাঁরা হলেন গাড়ির চালক। বেশিরভাগ সময়ই গাড়ির চালকরা জানতে পারেন না, এমন একটি রোগ চুপিসারে বেড়ে উঠেছে তাঁদের শরীরে। যার ফলে যখন-তখন, যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়ছেন তাঁরা। স্টিয়ারিং হাতে থাকার সময় বার বার ঢলে আসে চোখ দু’টি। ফল, মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। খোঁজ নিলেই জানা যাবে, ঘুমের মধ্যেই প্রচণ্ড জোরে নাকও ডাকেন স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা। শরীরে ডায়াবেটিস থাকতে পারে তাঁদের। থাকতে পারে উচ্চ রক্তচাপের প্রবনতাও। এর জেরেই শরীর হয়ে আসতে পারে অবসন্ন। স্টিয়ারিং হাতে বুজে আসতে পারে চোখ। আর যেকোনও মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে কোনও অঘটন।

sleep-2016-05-12-14-17সময় পাল্টেছে। পাল্টেছে মানুষের জীবনযাপন। এখন অনেকেই কোথাও যাওয়ার ক্ষেত্রে গাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। বেড়েছে অ্যাপ নির্ভর ক্যাবের চাহিদা। কিন্তু যাঁরা গাড়ি ভাড়া দেন কিংবা অ্যাপ নির্ভর গাড়ি যে সংস্থাগুলি চালান তাঁরা কি চালকের স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখেন? দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদেশে গাড়ির চালকদের চাকরি দেওয়ার আগে তাঁর স্লিপ টেস্ট করার রেওয়াজ নেই। অথচ এই স্লিপ টেস্ট মোটেও ব্যয়সাপেক্ষ নয়। নয় যন্ত্রণাদায়কও। এখন বহুস্থানেই করা যায়। চাইলে নিজের বাড়িতেই অনায়াসেই করে নেওয়া যায় এই পরীক্ষা। শোওয়ার সময় গায়ে যন্ত্রটি বিশেষভাবে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হয়। সকালে উঠেই জানা যায়, স্লিপ অ্যাপনিয়া রয়েছে কি না।

[মারণ ক্যানসার ছড়াচ্ছে এই নেশাগুলিও, কতটা সচেতন আমরা?]

কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইটুকু টেস্টই করা হয় না। গাড়ি যাঁরা ভাড়া দেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে চাকরি দিয়ে দেন। কিন্তু তাঁর স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো রোগ রয়েছে কি না। থাইরয়েড, উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগ কিংবা অন্য রোগ রয়েছে কি না। সেই হদিশ কেউ রাখেন না। এর মধ্যেই আবার চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ড্রাইভিং। অতিরিক্ত টাকার জন্য অনেকেই একের পর এক শিফট করে চলেন বিরামহীনভাবে। ফল কালিকাপ্রসাদের মতো প্রতিভার অকালমৃত্যু। বিসর্জনের এই সুর তো আর বাংলা ফেরত পাবে না। কিন্তু এমন ঘটনা যাতে আমার কিংবা আপনার জীবনে না হয়। তার জন্য সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এখনই হওয়া প্রয়োজন। এমনটাই মনে করেন শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement