অর্ণব আইচ: ভুয়ো ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের ফাঁদ। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আসা এই অ্যাপটি ডাউনলোড করলেই পড়তে হবে বিপদে। এভাবেই সেনা কর্মী ও আধিকারিকদের মোবাইল হ্যাক করে যাবতীয় তথ্য নিজেদের মুঠোর মধ্যে নিয়ে আসার ছক কষেছে আইএসআই (ISI)। এই বিষয়ে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে ভারতীয় সেনা। এই সতর্কবার্তা এসেছে ইস্টার্ন কমান্ডের সেনা গোয়েন্দা দপ্তরে। তার ভিত্তিতে পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারতের প্রত্যেকটি সেনাঘাঁটি ও শিবিরকে সতর্ক করেছে ফোর্ট উইলিয়াম।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি বিষয়টি সেনা গোয়েন্দারা জানতে পারেন। সেনাদের কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আসছিল একটি মেসেজ। ‘আরোগ্য সেতু’ নামে একটি অ্যাপের লিংক সেখানে পাঠানো হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল অ্যাপটি ডাউনলোড করতে। জানা গিয়েছে, করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপটি তৈরি করেছে। গোয়েন্দাদের অভিযোগ, এই অ্যাপটিকে হাতিয়ার করে সাইবার যুদ্ধে নেমেছে পাক গুপ্তচর সংস্থা। লকডাউনের সময় মূলত নিজেদের শিবির বা ঘাঁটির মধ্যে রয়েছেন সেনা আধিকারিক ও জওয়ানরা। আগাম ছুটি নেওয়া থাকলেও তাঁরা যেতে পারছেন না বাড়িতে। একমাত্র যোগাযোগের রাস্তা ফোন। নিজেদের বাড়ির এলাকা রেড জোন বা অরেঞ্জ জোনের মধ্যে পড়লে তাঁদের বাড়ির লোকেরা অ্যাপটি ডাউনলোড করছেন। আবার এই অ্যাপ দেখে নিজেরা সতর্ক হয়ে সেনাকর্মীরা বহু তথ্য বাড়ির লোককে জানাচ্ছেন। তাই বহু সেনাকর্মী ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপটি ডাউনলোড করছেন। যেহেতু কলকাতা রেড জোনের আওতায় পড়ে, ফোর্ট উইলিয়ামের সেনাকর্মীরাও ডাউনলোড করছেন এই অ্যাপটি। সেনা গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সেই সুযোগ নিচ্ছে আইএসআই-এর মতো গুপ্তচর সংস্থা। তারা বহু সেনা কর্মীর মোবাইলে ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠাচ্ছে এই অ্যাপের লিংক।
[আরও পড়ুন : দেশের কোনও রাজ্যপাল এমন শব্দ ব্যবহার করেন না, ধনকড়কে জবাবি চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর]
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভুয়া অ্যাপটি আসলে একটি মিরর অ্যাপ। যে এটি পাঠাচ্ছে, তার মোবাইল অথবা ল্যাপটপে অ্যাপটি রয়েছে। এবার কোনও সেনাকর্মী আসল ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপ মনে করে এই ভুয়া অ্যাপটি ডাউনলোড করলে, ওই সেনাকর্মীর মোবাইলের যাবতীয় তথ্য এসে যাবে যে সেটি পাঠিয়েছে তার হাতে। এই ক্ষেত্রে যদি আইএসআই পাঠিয়ে থাকে, তবে পাক গুপ্তচর সংস্থার কর্মীরা নিজেদের মোবাইল বা ল্যাপটপ খুলেই দেখতে পারবে কোন সেনাকর্মী কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যদি হোয়াটসঅ্যাপ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও সেনাকর্মী বা আধিকারিককে তাঁর উর্দ্ধতন অফিসাররা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়ে থাকেন, সেই নির্দেশ স্পষ্ট দেখতে পারবে তারা। একজন সেনা কর্মীর মোবাইল হ্যাক করলে ‘কন্টাক্টস’ থেকেই ওই শিবিরের অন্য সেনাকর্মী বা অফিসারের তথ্য চলে আসবে আইএসআই এর হাতে। ইস্টার্ন কমান্ডের সেনা গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত পূর্ব বা উত্তর পূর্ব ভারতের কোনও সেনা জওয়ান বা আধিকারিকের মোবাইল হ্যাক করা হয়েছে কি না সেই তথ্য এখনও আসেনি। কেউ এই অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন কি না, সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে এই সতর্কবার্তা তাঁরা পেয়েছেন। পাওয়ামাত্রই ফোর্ট উইলিয়াম থেকে প্রত্যেকটি সেনাঘাঁটিকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এই বিষয়ে পূর্বাঞ্চলীয় সেনাবাহিনীর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক মনদীপ হুডা জানান, সেনাবাহিনীকে বলে দেওয়া হয়েছে আরোগ্য সেতু-সহ যে কোন অ্যাপ যদি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আসে তা যেন কেউ ডাউনলোড না করেন। কারণ সেক্ষেত্রে ভুয়া অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রত্যেকে যেন মোবাইলের প্লে স্টোরে গিয়ে অ্যাপ ডাউনলোড করেন। তা অনেকটাই নিরাপদ। এদিকে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, অন্যান্য সরকারি সংস্থার ক্ষেত্রেও বিদেশি গুপ্তচররা ভুয়া অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য হ্যাক করার চেষ্টা করতে পারে। তাই এই বিষয়ে প্রত্যেককেই সতর্ক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।