পা অবশ, প্রায়ই ঝিন ঝিন – ডায়াবেটিক ফুটের সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগী ঘরে ঘরে৷ কীভাবে যত্ন নেবেন? জানাচ্ছেন কনসালট্যাণ্ট ফিজিশিয়ান ডা. আশিস মিত্র৷ লিখছেন সোমা মজুমদার৷
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই! প্রায়ই পা অবশ হয়ে যাচ্ছে? কেটে গেলে টেরও পাচ্ছেন না? কাটা জায়গা থেকে ঘা হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে? এমন লক্ষণ দেখা দিলে সময় থাকতেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷ দেরি হলে পা কিংবা পায়ের আঙুলের কোনও অংশ বাদ দিতে হতে পারে৷ তাই ডায়াবেটিস রোগীরা পায়ে অস্বাভাবিক কিছু দেখলে দ্রুত ডাক্তার দেখান৷
কখন হয় –
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অর্থাৎ এইচবি১সি-তে ডায়াবেটিসের মাত্রা ৭-এর বেশি হলে সতর্ক হতে হবে৷ যে কোনও সময় নার্ভের সমস্যা হতে পারে৷ এছাড়াও সামান্য অসাবধানতা থেকে পায়ের নানা সমস্যা হয়৷
কেমন সমস্যা –
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা স্নায়ুতন্ত্র বা নার্ভে প্রভাব ফেলে৷ যাকে নিউরোপ্যাথি বলা হয়৷ এক্ষেত্রে মাঝে মাঝেই রোগীর পা ঝিন ঝিন করে৷ অনেকক্ষণ বসে থাকার পর হাঁটতে শুরু করলে পা ঝিন ঝিন করে৷ কিছুক্ষণ হাঁটার পর ধীরে ধীরে ঠিক হয়৷ অনেক সময় আবার রোগীর পায়ে কোনও অনুভূতি থাকে না৷ রোগী মনে করেন যে তিনি সর্বক্ষণ বালির উপর দিয়ে হাঁটছেন৷ পায়ের কোনও অনুভূতি না থাকায় কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে রোগী বুঝতেও পারেন না৷ ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছুড়তেও দেখা যায়৷ রোগীর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার মতো পায়ে অনুভূতি হয়৷
ডায়াবেটিসের সঙ্গে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে ও ধূমপান করলে অনেক সময় ধমনিতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়৷ এই ধরনের ডায়াবেটিক রোগী বেশিক্ষণ হাঁটাচলা করতে পারেন না৷ একে ইসচেমিক পেন বলা হয়৷ কিছুক্ষণ হাঁটার পর রোগীর পায়ে ব্যথা অনুভূত হয়৷ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে ঠিক হতে পারে৷
ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সংক্রমণ হতে পারে৷ ইনফেকশন হয়ে অনেক সময় সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে৷ একে ডায়াবেটিক ফুট আলসার বলে৷ পায়ের পাতা বা আঙুলের মাঝখানে সাদা রঙের ছত্রাকের মতো ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়৷ সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে অ্যামপুটেশন বা পা কেটে বাদ দেওয়া হতে পারে৷ ডায়াবেটিক রোগীর সংক্রমিত পায়ে কিছু ফুটে গেলে বা ঢুকলে শুকোতে দেরি হয়৷
ডায়াবেটিস রোগীরা কী করবেন –
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে৷ এইচবিএ১সি-তে ব্লাড সুগারের মাত্রা ৬.৫ অথবা ৭-এর নিচে থাকতে হবে৷
- পায়ের কোনও সমস্যা হলে নরম জুতো ব্যবহার করুন৷
- বাড়িতেও খালি পায়ে হাঁটবেন না৷
- প্রত্যেকদিন পায়ের নিচে ও আঙুল আয়না দিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে৷
- পা ফাটা, ফোলা, লালভাব, ইনফেকশন হয়েছে কি না তা দেখুন৷
- মন্দিরে খালি পায়ে যেতে হলে রোদ ওঠার আগে যান৷ রোদের তাপে ডায়াবেটিক রোগীর পায়ে ফোস্কা পড়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে৷
- পায়ে কখনওই গরম সেঁক দেওয়া চলবে না৷ আপাতদৃষ্টিতে আরাম হলেও তা
- ডায়াবেটিক রোগীর শরীরের জন্য একেবারেই ভাল নয়৷
- ডায়াবেটিক রোগীর রোগীর পা সন্ধ্যায় ফুলে যায়৷ তাই সন্ধ্যার পর জুতোর প্রকৃত মাপ পাওয়া গেলে জুতো কেনা উচিত৷
- নিয়মিত ব্লাড সুগার মাপা ও ডাক্তারের পরামর্শমাফিক লাইফস্টাইল মেনে চলুন৷ হাঁটাচলা করুন, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, যোগা করুন৷
চিকিৎসা-
নার্ভের কোনও সমস্যা বা নিউরোপ্যাথি হলে সঠিক সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷ নার্ভের অসুখে নার্ভ কনডাকশন ভেলোসিটি টেস্ট করা হয়৷ সেই রিপোর্ট অনুযায়ী নার্ভের চিকিৎসা করা হয়৷ রোগীকে ব্যথার ওষুধ গাবাপেনটিন (Gabapentin) প্রিগাবালিন (Pregabalin) ইত্যাদি দেওয়া হয়৷ ইসচেমিক পেইন হলে ডপলার টেস্ট করে প্রথমে পরীক্ষা করা হয়৷ এক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন, সিলোস্টাজোল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়৷ ফুট আলসার হলে অ্যাণ্টিবায়োটিক বিটাডাইন মলম ভাল করে ড্রেসিং করতে হবে৷ এছাড়াও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে থাকতে হবে৷
যোগাযোগ :
সুরক্ষা ক্লিনিক – ৯৮৩১৬৭১৫২৫
আরও জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে