১৬ জ্যৈষ্ঠ  ১৪৩০  বুধবার ৩১ মে ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’, সংসার সামলে পাখি পাহাড়ে গাইডের দায়িত্বে ৪১ জন মহিলা

Published by: Sayani Sen |    Posted: March 22, 2023 4:15 pm|    Updated: March 23, 2023 4:19 pm

41 women being the tourist guide of Pakhi Pahar in Purulia । Sangbad Pratidin

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’! এই কথার যেন আরও একটি জ্বলন্ত উদাহরণ পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি ব্লকের মাঠা বনাঞ্চলের পাখি পাহাড়ের ৪১ জন মহিলা গাইড। পুষ্পরানি মাহাতো, ঊষারানী মাহাতো, গীতারানি মাহাতো, অষ্টমী মাহাতো, আদরি মাহাতো, সীতারানি মাহাতো। লম্বা তালিকা। হেঁশেল, সংসার সামলে নিজেদের স্বনির্ভরতায় গাইডের কাজ করে যাচ্ছেন গত পাঁচ মাস ধরে। সেই সঙ্গে বিস্তীর্ণ জঙ্গলকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে রীতিমতো আগলে রাখা। জঙ্গলরক্ষা করে ৪১ জন মহিলার এই গাইডের কাজকে বাহবা জানিয়েছে পুরুলিয়া বনবিভাগ।

Pakhi Pahar

বলরামপুর-বাঘমুণ্ডি সড়কপথে ভুচুংডি মোড় থেকে ডানদিকে কিছুটা গেলেই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পাখি পাহাড়। যদিও সড়ক পথ থেকেই উঁকি দেয় এই পাহাড়। এই পাহাড় আসলে অযোধ্যারই অংশ। সেই পাহাড়ের পাথরে খোদাই করে নানা পাখি আঁকা হয়েছে। তাই এই পাহাড়ের নাম হয়ে গিয়েছে পাখি পাহাড়। দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই কাজ করছে। ফলে এই পাহাড় এখন অযোধ্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাইট সিয়িং। ফলে ফি দিন পর্যটকরা এখানে পা রাখেন। আর তাদেরকেই এই পাখি পাহাড় ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন ওই ৪১ জন গাইড।

Pakhi Pahar

আজ থেকে এক দশক আগেও পুরুলিয়ার কোন পর্যটন কেন্দ্রে গাইড ছিল না। পর্যটকরা নিজেদের মতো করেই ঘুরে বেড়াতেন। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই গাইড ব্যবস্থার ব্যাপ্তি ঘটেছে এই জেলার পর্যটনে। আর পাখি পাহাড় যেন এক দৃষ্টান্ত। চার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৪১ জন মহিলা রীতিমত পালা করে জঙ্গল রক্ষা করে গাইডের কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন যে কাজ পুরুষরা করেন তা মহিলারাও পারেন। বেদবতী, মা মনসা, অন্নপূর্ণা ও পাহাড়ি এলাকা মহিলা সমিতি।

এই চার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৪১ জন মহিলার মধ্যে কমপক্ষে সাতজন করে প্রতিদিন এই গাইডের কাজ করে থাকেন। তবে পর্যটক যদি বেশি চলে আসেন তাহলে কখনও ১০ জন আবার কখনও ২০ জন। কখনও আবার একসঙ্গে ৪১ জনই পর্যটকদের নিয়ে পাখি পাহাড়ের জঙ্গলে চলে যান। দিনের শেষে যা আয় হয় তা নিজ নিজ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সম্পাদকের হাতে টাকা জমা পড়ে। সাত দিন হলেই তার হিসাব হয়।

[আরও পড়ুন: শপথের পর বায়রনকে পদ্মের ফুল! ফের উঠছে আঁতাঁতের অভিযোগ]

এভাবেই গাইডের কাজ করে গীতারানি, ঊষারানিরা সংসারের হাল ধরেছেন। পাহাড়ি এলাকা মহিলা সমিতির বাসন্তী মাহাতোর কথায়, “সপ্তাহের শেষে কমপক্ষে ২০০-৩০০ টাকা করে হাতে চলে আসে। এই টাকায় সপ্তাহভরের নুন, তেল, মশলার খরচ হয়ে যায়। এর জন্য বাড়ির কাউকে বলতে হয় না। গাইডের কাজ করে বিভিন্ন মানুষজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যেমন ভাল লাগে। তেমনই উপার্জন করে সংসারের খরচ খানিকটা দিতে পারায় কি যে ভালো লাগে বলে বোঝাতে পারবো না।” সকাল হলেই ৪১ জন এই পাহাড়ের কোলে চলে আসেন। সেখানে থাকা প্লাস্টিকের বোতল, কন্টেনার, প্যাকেট-সহ নানা আবর্জনা সাফ করে বাড়ি গিয়ে গৃহস্থালির কাজকর্ম করেন।

Tourist

সকাল ১০টা বাজলেই পালা অনুযায়ী মহিলারা গাইডের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এই পাখি পাহাড়ে। হেঁশেল, সংসার সামলানো সেই মহিলারাই তখন পর্যটক দলকে জঙ্গলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলতে থাকেন, এই পাথরের উপর ময়ূরটি খোদাই করা হয়েছে আজ থেকে দু’বছর আগে। দেখাতে থাকেন ময়ূর ছাড়াও পাথরের গায়ে হরিণ, হাতি, কাঠবিড়ালি, পেঙ্গলিন, কুমিরের ছবি। এই জঙ্গলের আয়তন কত, কি কি গাছ রয়েছে। কোন, কোন পাখি আছে। বন্যপ্রাণদের আসা-যাওয়া রয়েছে কিনা। জঙ্গল ঘুরিয়ে পর্যটকদের সবটাই বাতলে দেন তারা। বিনিময়ে পর্যটকের গাড়ি পিছু মাত্র ১০০ টাকা।

Guide

একটি গাড়িতে যত জন পর্যটক থাকেন তাদের সকলকে একজন মহিলা জঙ্গল ঘুরে দেখান। বেদপতি মহিলা সমিতির সদস্য তথা গাইড রিমা মাহাতো বলেন, “আমরা নিজে নিজেই গাইডের কাজ রপ্ত করেছি। কীভাবে পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে গল্পের ছলে সবকিছু বোঝাতে হয় তা শিখেছি। তবে আমাদের একটা প্রশিক্ষণ দরকার। সেই কারণে আমরা বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত সমিতির কাছে আবেদন করেছি।” বারাসত এলাকা থেকে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটক তানিয়া বোস, বিশ্বজিৎ সেন, রানি মণ্ডল বলেন, “মহিলা গাইড দেখে খানিকটা অবাকই হলাম। তবে বেশ ভালো লাগলো ওনারা যেভাবে আমাদের জঙ্গলে ঘুরিয়ে সব কিছু বোঝালেন। তাতে আমরা অভিভূত।” নারীর ক্ষমতায়নে এ যে আরেক ধাপ তা বলাই যায়।

দেখুন ভিডিও:

[আরও পড়ুন: মার্কিন নজরে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দল BJP, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্টে প্রশ্ন]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে