Advertisement
Advertisement

প্রকৃতির স্বাদ এবং পরিযায়ী পাখি চাক্ষুস করতে ঘুরে আসুন সিঙ্গি গ্রামে

জেনে নিন বিস্তারিত।

A must visit tourist spot in West Bengal
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 6, 2018 3:33 pm
  • Updated:January 6, 2018 3:33 pm  

শীতের সকালে পল্লি বাংলার গ্রাম থাকুক উইকএন্ড-এ ঘুরতে যাওয়ার তালিকায়। এবার মহাভারত প্রসিদ্ধ কাশীরাম দাস-এর জন্মভিটে সিঙ্গি গ্রাম ঘুরে পরিযায়ী পাখি দেখতে যাওয়া যেতেই পারে পূর্বস্থলীতে। লিখছেন সোমনাথ লাহা

ক্রমশ কংক্রিটের জঙ্গল আর আকাশচুম্বী হাইরাইজে মুখ ঢাকছে শহর ও শহরতলি। প্রকৃতির স্বাদটুকু নেওয়া তো দূর অস্ত, দূষণের মাত্রাতিরিক্ত চাপে শরীরও যেন অবসন্ন হয়ে ওঠার পাশাপাশি হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে চায়। পল্লিবাংলার ছোট ছোট গ্রামের উজাড় করা প্রকৃতির সেই মোহময়ী রূপ আপনার মনকে জুড়িয়ে দেবে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। প্রকৃতির সেই অনাবিল রূপ-রসের টানেই শীতের উইকএন্ডে দিন দু’য়েকের জন্য পাড়ি জমাতেই পারেন কলকাতা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে বর্ধমানের কাটোয়ার কাছে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম সিঙ্গিতে। তবে রসনাপ্রেমী বাঙালিরা অবশ্য কাটোয়ার কথা বললেই সেখানকার ডাঁটার স্বাদ ভুলতে পারেন না। অথচ প্রকৃতির নয়নাভিরাম রূপের পাশাপাশি এহেন কাটোয়ার সিঙ্গি গ্রামেই রয়েছে বাংলায় মহাভারত লেখা কাশীরাম দাসের জন্মভিটে।

Advertisement

[ভোরের মতো পড়ন্ত বিকেলেও মোহময়ী, গজলডোবা যেন স্বপ্নের ঠিকানা]

শুধু এখানেই শেষ নয়। এখানে রয়েছে চন্দ্রবাড়ির ঐতিহ্যমণ্ডিত টেরাকোটার মন্দিরও। প্রকৃতির এই সুদৃশ্য গ্রাম তার ঐতিহ্যের শোভার পাশাপাশি মাটির ও প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধের ছোঁয়ায় ভরিয়ে তুলবে পর্যটকদের মনকেও। সিঙ্গি থেকে বেশ কিছুটা দূরে অবস্থিত শ্রীবাটি গ্রাম। ইতিহাস বলে, এই শ্রীবাটি গ্রামেই একসময় গুজরাত থেকে আগত গন্ধবণিক সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজনরা ঘাঁটি গেড়ে শুরু করেছিল লবণের ব্যবসা। এই গন্ধবণিকদেরই উত্তরসূরি হল চন্দ্ররা। চন্দ্রদের বাড়িতে এখনও জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবছর। এই বাড়ির সন্নিকটেই রয়েছে শিবমন্দির। বিষ্ণুপুরের টেরাকোটার আদলে নির্মিত প্রায় দু’শো বছর আগের এই শিবমন্দিরের স্থাপত্যরীতি দেখার মতো। তবে বর্তমানে খুব বেশি করে চোখে পড়ে রক্ষণাবেক্ষণের পর্যাপ্ত অভাবে মন্দিরের দৈন্যদশার চেহারাও।

[ডাল লেকের ধাঁচে হাউসবোটে রাত কাটানোর সুযোগ পূর্বস্থলীর চাঁদের বিলে]

প্রায় একই অবস্থায় রয়েছে কাশীরাম দাসের জন্মভিটেটিও। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের অভাবে প্রায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে এই বাড়ি। অথচ এই বাড়িকে ঘিরেই জড়িয়ে রয়েছে কত সুপ্রাচীন ইতিহাসের পরশ। শোনা যায় এখানেই এক গাছের ছায়ায় বসে নিজের লেখালিখির কাজ করতেন কাশীরাম দাস। সিঙ্গি গ্রামের আশপাশে ঘুরে দেখার রোমাঞ্চ অনুভব করতে চাইলে একবার চড়ে বসতেই পারেন গরুর গাড়িতে, গ্রামের সরু পথ ধরে গরুর গাড়িতে চড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আজীবন মনে থাকবে আপনার। এক নিখাদ গ্রামবাংলার স্বাদ পাবেন, এ কথা হলফ করে বলাই যায়। সিঙ্গির খুব কাছাকাছি অবস্থিত পূর্বস্থলী। সেখানে রয়েছে ভাগীরথী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ছাড়িগঙ্গার চুপির চর। আর এই চরেই শীতকালে আগমন ঘটে বহু পরিযায়ী পাখির। এমনকী শীতে বহু মানুষ পিকনিক করতেও ছুটে আসে এখানে। ফলস্বরূপ ছাড়িগঙ্গার এহেন চরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পর্যটনকেন্দ্রও। তবে পরিযায়ী পাখিদের দেখার আকর্ষণও কিছু কম নয়। একে উপরি পাওনাও বলতে পারেন। এখানে এলে ক্যামেরা আনতে ভুলবেন না। আপনার লেন্সে হয়তো ধরা দিতে পারে অচেনা পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। আর শীতকালে এই জায়গায় পিকনিক হোক বা ঘোরাই হোক বাজারটা একবার ঘুরে দেখবেন। এই সময়ে তাজা শাক-সবজি পাবেনই। শহরের কোলাহল আর একঘেঁয়ে জীবনযাপন থেকে আরামে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য যেতেই পারেন গ্রামবাংলার পরশমাখা এই জায়গায়। উইকএন্ডটা জাস্ট জমে যাবে, এ কথা বলাই যায়।

[পাহাড়ে বেড়াতে যাবেন? নিখরচায় সাফারির সুযোগ ব্রিটিশ আমলের ল্যান্ডরোভারে]

কীভাবে যাবেন: সিঙ্গি যাওয়ার সবচেয়ে সহজতম পথ হল ন্যাশনাল হাইওয়ে ১৯ নম্বর ধরে যাওয়া। সময় লাগবে ৪ ঘণ্টার মতো। এ তো গেল সড়কপথের কথা। যদি ট্রেনে যেতে চান তাহলে নামতে হবে সিঙ্গির সবচেয়ে নিকটবর্তী স্টেশন পাটুলিতে। ট্রেনে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘণ্টার মতো।

কোথায় থাকবেন: সিঙ্গি এবং ছাড়িগঙ্গার চুপির চরে ধীরে ধীরে হলেও ক্রমশ উন্নত হচ্ছে পর্যটনের পরিকাঠামো। এখানে থাকার জায়গা হিসাবে আদর্শ শান্তিনিকেতন হোম স্টে। ওয়েবসাইট দেখে কলকাতা থেকে বুকিং করে আসাই ভাল।

[কংসাবতীর রূপে উজ্জ্বল ‘সবুজদ্বীপ’, রূপসী বাংলায় নতুন বেড়ানোর স্পট]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement