Advertisement
Advertisement

লাদাখ থেকে সিকিম, হাই অলটিচিউডে হাঁসফাঁস, ট্রাভেল ব্যাগে অক্সিজেন সিলিন্ডারও

ফৌজি হাসপাতালে রয়েছে 'ট্যুরিস্ট ওয়ার্ড'।

From Ladakh to Sikkim, the odyssey unfoolds | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:June 15, 2023 9:53 am
  • Updated:June 15, 2023 9:53 am

কিংশুক প্রামাণিক, লাদাখ: লে (Leh) শহরের কেন্দ্রস্থলে সোনম নরবু মেমোরিয়াল হাসপাতাল। এমারজেন্সির সামনে লম্বা লাইন। যাঁরা দাঁড়িয়েছেন তাঁদের কেউই স্থানীয় মানুষ নন। হিন্দি, মারাঠি এমনকী, বাংলা ভাষাও শোনা যাচ্ছে। সবার মুখে উদ্বেগ।

এঁরা যে জন‌্য লাইনে দাঁড়িয়ে, আমিও সেই কারণে লাইনে দাঁড়াতে এসেছি। আমাদের লাদাখ (Ladakh) টিমে একজনের শরীর খুব খারাপ। অক্সিজেন দিতে হবে মনে হচ্ছে। যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন, সবাই আমার মতো সমতলের টুরিস্ট। এসেছেন তাঁদের টিমের কাউকে না কাউকে চিকিৎসা করাতে। রোগ একটাই, অক্সিজেনের অভাবে হাঁসফাঁস। কেউ ১৮ হাজার ফুট খারদুংলায় গিয়ে অসুস্থ হয়েছেন, কেউ ১৫ হাজার ফুট প্যাংগংয়ে রাত কাটিয়ে। আবার কেউ সমতল থেকে লে বিমানবন্দরে নেমেই।

Advertisement

এমারজেন্সিতে সারি সারি বেড। সব বেডের সঙ্গে অক্সিজেনের লাইন জোড়া। ফাঁকা শয‌্যা প্রায় নেই। যাঁদের সারা দিন অক্সিজেন দিয়েও কাজ হচ্ছে না, তাঁদের ‘টুরিস্ট ওয়ার্ড’-এ ভরতি করে দেওয়া হচ্ছে। এক নার্সকে জিজ্ঞাসা করলাম, টুরিস্ট ওয়ার্ড মানে কী? উনি বললেন, “বুঝলেন না! এই যে আপনারা হাই অলটিচিউডে বেড়াতে আসছেন। প্রতিদিন দশ শতাংশ টুরিস্টের অক্সিজেনের সমস্যা তীব্র হচ্ছে। তাঁদের ভরতি করা হচ্ছে আমাদের হাসপাতালে। এত চাপ যে, টুরিস্টদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডই খুলতে হয়েছে।” আরও জানলাম, সমতলে যখন অক্সিজেনের পরিমাণ ২১-২২ শতাংশ, তখন লে শহরে তার মাত্রা সাকুল্যে ১৩। প্যাংগং লেকে রাতে যাঁরা থাকেন, তাঁরা অনেকেই বলেছেন, অক্সিজেনের স্বল্পতায় ঘুমাতে পারেননি। সেখানে বাতাসে অক্সিজেন মাত্র ১০ শতাংশ। সবচেয়ে কম সোমোরিরি লেকে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: দুর্নীতি তরজায় সরগরম তামিলনাড়ু, রাজ্যে সিবিআই প্রবেশে ‘না’ স্ট্যালিন সরকারের]

এই প্রসঙ্গে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, মেডিসিনের চিকিৎসক রাজা ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ, “কলকাতায় অক্সিজেনের পরিমাণ বাতাসে ২১ শতাংশ। লাদাখে তো অর্ধেক হবেই। তবে দীর্ঘসময় থাকলে সেই পরিস্থিতি শরীর ক্রমে মানিয়ে নিতে পারে। হঠাৎ করে গেলে সমস্যা হবেই। হার্ট, ফুসফুস, মস্তিষ্কে অক্সিজেন কম পেলে জীবনহানিও হতে পারে। তাই আচমকা হাই অলটিচিউডে যাওয়া উচিত নয়।” তিনি আরও জানালেন, স্থানীয়রা পারছে, এটা স্বাভাবিক। সেনারাও দীর্ঘ দিন থাকার দরুন আবহাওয়ায় মানিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু টুরিস্টদের অনেক বিধি মেনেই অত উচ্চতায় যাওয়া উচিত।

[আরও পড়ুন: লোকসভার আগেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে সক্রিয় আইন কমিশন, জানতে চাইল জনতার মত]

মানুষের বেঁচে থাকতে জল, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, কাজ, বেতন ইত্যাদির গুরুত্ব কতটা বেশি, এতদিন তা নিয়ে চর্চা করে এসেছি। কিন্তু উচ্চ শীতল মরুদেশ লাদাখ সফর করে বুঝলাম, মানুষের জীবনে প্রথম প্রয়োজন ‘অক্সিজেন’। তারপর বাকি সব। অক্সিজেন না থাকলে, অথবা কম থাকলে কী হয়, চোখের সামনে দেখলাম। মানুষ দু’দিন না খেয়েও বাঁচতে পারে। কিন্তু বাতাসে প্রয়োজনমতো অক্সিজেন না থাকলে মৃত্যু অনিবার্য।
লে শহরের উচ্চতা সাড়ে এগারো হাজার ফুট। কোথাও যেতে গেলে পেরোতে হয় ১৭-১৮ হাজার ফুট উঁচু সব পাস। সর্বত্র অক্সিজেনের টানাটানি। রুক্ষ পাহাড়, সবুজের অভাব, তার উপর উচ্চতা। একটু জোরে হাঁটলেই হাঁফ ধরে যায়।

আমাদের কাছে আগাম আঁচ ছিল। কলকাতা থেকে লাদাখ যাওয়ার আগেই ব্যাগে ভরে নেওয়া হয়েছিল দু’টি ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার। মানালি থেকে লে-র পথে রওনা দেওয়ার আগে আরও একটি বড় সিলিন্ডার কিনে গাড়িতে রাখতে হয়েছিল। শোঁকার জন্য রাখা ছিল কর্পূর, পর্যাপ্ত ওআরএস। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। এক সদস্যের অক্সিজেনের অভাব এতটাই বেড়ে গেল যে, হাসপাতালে ভরতি করে ন’ঘণ্টা অক্সিজেন দিতে হল। দেখছিলাম, পাশের বেডে মুম্বই থেকে সরাসরি উড়ানে এসে নামা এক ব্যক্তি খাবি খাচ্ছেন।

[আরও পড়ুন: ISF-এর ৩ প্রার্থীকে ভাঙড়ে মনোনয়নে বাধা! পুলিশকে বিশেষ নির্দেশ হাই কোর্টের]

বিমানযাত্রীদের ক্ষেত্রে এটা নাকি বেশি হয়। যে কারণে লাদাখ আসতে গেলে শ্রীনগর অথবা মানালি থেকে সড়ক পথে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হবে। বিমানে সরাসরি এসে নেমে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। লাদাখের নানা প্রান্তে সেনা ছাউনি রয়েছে। প্যাংগং থেকে নুব্রা– প্রতিদিন সাধারণ টুরিস্টদের অনেকেই পথে অক্সিজেনের অভাবে অসুস্থ হন, তাঁদের সেখানে ভরতি করতে হয়। ফৌজি ডাক্তাররা চিকিৎসা করেন।

লাদাখে টুরিস্টবাহী গাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা বাধ্যতামূলক নয়। যদিও কলকাতায় ফিরে শুনলাম, সিকিম সরকার নাথুলা, লাচুং, গুরুদোংমার ইত্যাদি হাই অলটিচিউডের ট্যুরে গাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা আবশ্যিক করে দিয়েছে। তাহলে এবার বাঙালির ট্র‌াভেল ব্যাগে অক্সিজেন সিলিন্ডার বাধ্যতামূলক হয়ে গেল! জ্বর, সর্দি-কাশি, গ্যাসের ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে এবার রাখতে হবে অক্সিজেন সিলিন্ডারও। চাঁদের দেশে পাড়ির মতোই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ