সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মানবেন্দ্র পাল বা সুধীন্দ্রনাথ রাহার গল্প পড়ে ছোটবেলায় আমরা দিনের বেলাতেও দারুণ ভয় পেতাম। তেমনই ভয় কিন্তু এই পরিণত বয়সেও আমাদের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসতে পারে। আপনি কি অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করেন? রাতের অন্ধকারে গা ছমছমে পরিবেশ আপনার মনে রোমাঞ্চ জাগায়! এই ভারতবর্ষে এমন কয়েকটি ভূতুড়ে স্থান রয়েছে যেখানে গেলে সত্যি সত্যিই ‘তেনাদের’ দেখা পাওয়া সম্ভব। এক অলৌকিক জগতের স্পর্শ পেতে ঘুরে আসতে পারেন এইসব স্থানে।
দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট, নিউদিল্লি: শহরের একটি সবুজ ও শান্ত এলাকা হিসেবে দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট পরিচিত। কিন্তু রাতের বেলায় এই স্থান এক ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। প্রচলিত আছে যে এখানে একজন সাদা পোশাক পরা মহিলা গাড়িচালকদের কাছে গভীর রাতে লিফট চেয়ে থাকে। গাড়িচালক যদি লিফট দিতে আপত্তি জানায়, তাহলে সেই মহিলা গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াতে শুরু করে। এমন বহু ড্রাইভার রয়েছেন যাঁরা মাঝরাতে এই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। স্থানীয় মানুষেরা বলেন, এই মহিলা নাকি বহু আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল। রাতের বেলায় তার অতৃপ্ত আত্মা আজও ওই স্থানে ঘুরে বেড়ায়। রাতের বেলায় এই এলাকায় সেজন্য গাড়ি খুব কম চলে। এই ভীতিকর ঘটনার সাক্ষী হতে চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট রোড।
লাক্কিডি গেটওয়ে, ওয়ানড়, কেরল: কেরলের ওয়ানড়ের লাক্কিডি গেটওয়ে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হলেও এর নেপথ্যে রয়েছে এক ভয়ংকর ইতিহাস। স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, এখানে ব্রিটিশ আমলে একটি কঠিন রাস্তা নির্মাণের সময় এক আদিবাসী যুবক কারিন্থান সাহায্য করেছিল ইংরেজদের। কিন্তু ব্রিটিশরা তার সাহয্যে গ্রহণ করলেও, পরে তাকে হত্যা করে। স্থানীয় বিশ্বাস মতে, কারিন্থানের আত্মা সেই গেটওয়েতে একটি অশ্বত্থ গাছের মধ্যে বন্দি হয়ে আছে। অনেক পর্যটক ও স্থানীয় মানুষ দাবি করেন যে তারা রাতের বেলা গাছটির কাছে এলে অদ্ভুত সব শব্দ শুনতে পান। অদৃশ্য শক্তির উপস্থিতিও অনুভব করেন। রাস্তার পাশে এই গাছটা শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় আজও। গাছটির উপস্থিতি এই ভৌতিক কাহিনির বিশ্বাসযোগ্যতা যথারীতি বাড়িয়ে তোলে পর্যটকদের কাছে।
গোলকোন্ডা ফোর্ট, হায়দরাবাদ: হায়দরাবাদের গোলকোন্ডা ফোর্ট তার ইতিহাস ও স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত হলেও, এই ফোর্ট নিয়ে বহু ভৌতিক কাহিনি প্রচলিত আছে। এই দুর্গে একটি কুখ্যাত কারাগার ছিল যেখানে বহু বন্দি অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হত। সবচেয়ে পরিচিত ঘটনাটি হল তারামতি নামে এক নৃত্যশিল্পীর। তিনি কুতুব শাহী রাজাদের প্রিয় ছিলেন। বলা হয়, তারামতি এবং তার গুরু প্রেমমতির আত্মা এখনও এই দুর্গে ঘুরে বেড়ায়। বিশেষ করে রাতে তাদের নাচ-গানের শব্দ শোনা যায়। অনেকে গভীর রাতে দুর্গের ভেতর থেকে অদ্ভুত চিৎকার ও ফিসফিস শব্দ শুনতে পান বলেও শোনা গিয়েছে। যদি কখনও আপনি ভূতুড়ে জায়গায় ঘুরতে যেতে চান, তাহলে সেই লিস্টে গোলকোন্ডা ফোর্টকে অবশ্যই তালিকাভুক্ত করবেন।
কুলধারা, রাজস্থান: রাজস্থানের জয়সলমীরের কাছে অবস্থিত কুলধারা এক পরিত্যক্ত গ্রাম। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই পরিত্যক্ত স্থান ‘ভূতুড়ে গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। কথিত আছে, ১৭শ শতাব্দীতে এই গ্রামের সমস্ত বাসিন্দা, প্রায় ১৫০০ পরিবার, এক রাতের মধ্যে রহস্যজনকভাবে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। কারণ তারা জয়সলমীরের শাসকের অন্যায় ও অত্যাচার মানতে চায়নি। গ্রাম ছাড়ার আগে তারা নাকি এই গ্রামকে অভিশাপ দিয়েছিল। সেদিনের পর ওই গ্রামে আর বসতি গড়ে ওঠেনি। আজও গ্রামটি জনশূন্য ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দিনের বেলা পর্যটকরা এখানে ঘুরতে এলেও রাতেরবেলা কেউ একা থাকার সাহস দেখায় না। কারণ রাতের বেলায় অনেকে এখানে অলৌকিক কর্মকাণ্ড ঘটতে দেখেন। ঝনঝন করে বাসনপত্র পড়ার শব্দ, শিশুদের কান্নার শব্দ এবং ফিসফিসানি শুনতে পাওয়ার কথা অনেকেই বলে থাকেন।
শনিওয়ারওয়াড়া, পুনে: পুনের শনিওয়ারওয়াড়া একটি ঐতিহ্যবাহী দুর্গ। পেশোয়া শাসকদের আমলে এটি নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু এই দুর্গের ইতিহাসে এক মর্মান্তিক ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে। ১৭৭৩ সালে, মাত্র ১৬ বছর বয়সি যুবরাজ নারায়ণরাও পেশোয়াকে নির্মমভাবে তার কাকা রঘুনাথরাও এবং কাকী আনন্দীবাইয়ের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল। বিশ্বাস করা হয়, সেই রাতে তাঁকে বাঁচানোর জন্য তাঁর আর্তনাদ ‘কাকা মালা বাঁচাও’ এখনও অমাবস্যার রাতে দুর্গের ভিতর থেকে শোনা যায়। অনেক স্থানীয় মানুষ ও পর্যটক ভয়ে অমাবস্যার রাতে দুর্গের আশেপাশে আসেন না। কারণ তাদের বিশ্বাস, নারায়ণরাওয়ের আত্মা এখনও এই দুর্গে বন্দি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.