Advertisement
Advertisement

Breaking News

কেমন হল পদব্রজে নর্মদা পরিক্রমা, যাত্রাশেষে স্মৃতির ঝাঁপি উপুর করলেন চন্দন বিশ্বাস

পড়ুন যাত্রাপথের Exclusive অভিজ্ঞতা।

Bengal youth covers 1000 km on foot, scripts record

ছবি সৌজন্যে: চন্দন বিশ্বাস

Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:August 28, 2018 4:49 pm
  • Updated:August 28, 2018 4:49 pm

শুভময় মণ্ডল: ৪৬ দিন। ১০০৭ কিমি পথ। পায়ে হেঁটে পুণ্যতোয়া নর্মদার মোহনা থেকে উৎস পর্যন্ত এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে অসাধ্যসাধন করলেন বাঙালি যুবক। নয়া এই কীর্তি গড়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত হৃদয়পুরের বাসিন্দা চন্দন বাসিন্দা। গুজরাটের গাল্ফ অফ খাম্বাট থেকে মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্টক। দীর্ঘ এই পথে সব মিলিয়ে চারটি রাজ্য-গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড় পায়ে হেঁটেই অতিক্রম করেছেন অভিযাত্রী। আর ৪৬ দিনের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরে ফিরছেন তিনি। বিপদসঙ্কুল নাহলেও টানটান উত্তেজনা ছিল এই যাত্রাপথে। কিন্তু সব বাধা জয় করে সঙ্গে করে ভাল অভিজ্ঞতাই সঞ্চয় করেছেন চন্দন। তাঁর যাত্রাপথের প্রথম সঙ্গী ছিল sangbadpratidin.in। তাই যাত্রাশেষে sangbadpratidin.in-এর কাছেই গল্পের ঝাঁপি উপুর করলেন চন্দন।

হাফেশ্বর- গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের বর্ডার

ভারতবর্ষের ভূগোল এবং ইতিহাসে নর্মদার গুরুত্ব অপরিসীম। নর্মদা নদী দিয়েই উত্তর এবং দক্ষিণ ভারত পৃথক করা হয়। এই নর্মদা-বিন্ধ্যপর্বতের জন্যেই আর্যরা দক্ষিণ ভারত আক্রমণ করতে পারেনি, ফলে দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতি রয়েছে অটুট। এই নর্মদার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস। ইতিহাসের জ্বলজ্যান্ত সাক্ষী এই নদীর অববাহিকা হেঁটে পেরোলেন চন্দন। পেশায় সিনেমাটোগ্রাফার চন্দন বিশ্বাসের আরও এক নেশা হল অ্যাডভেঞ্চার। আর সেই ভালবাসা থেকেই এর আগে বহু অভিযানে পাড়ি দিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল, ট্রান্স-হিমালয়ান সাইক্লিং। উত্তর-পূর্বের অরুণাচল থেকে সাইকেলে প্যাডেল করে লাদাখ পর্যন্ত পৌঁছন তিনি। এছাড়াও মাউন্ট সিবি ১৩ পর্বতাভিযান, তুলিয়ান লেক ট্রেকিং আরও অনেক রোমাঞ্চকর অভিযান। এর আগে নর্মদা পরিক্রমা নতুন কিছু নয়। অনেকে বইও লিখেছেন পরিক্রমা নিয়ে। চন্দন সেসব পড়েননি। তিনি নিজের মতো করে এক্সপ্লোর করতে কোমর বেঁধে নেমেছিলেন। এবং তাতে সফলও হয়েছেন। এই বিস্তীর্ণ যাত্রাপথে বহু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘গুজরাট থেকে শুরু করে মধ্যপ্রদেশ। নর্মদার অববাহিকা ধরে কেউ মোহনা থেকে উৎস পায়ে হেঁটে অতিক্রম করছে, এই বিষয়টিই অনেকের কাছে আশ্চর্যের ঠেকেছে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে এমন অভিযাত্রী ঈশ্বরের সমতূল্য। পুণ্যতোয়া নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানে স্বয়ং ভগবান শিব হেঁটে চলেছেন। এবার ভাবুন, যাত্রাপথে স্থানীয় মানুষদের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে। আতিথেয়তা নিয়ে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’

Advertisement

 

Advertisement

এতটা পথ, এতদিন ধরে অভিযান, আদৌ সফল হবেন তো? প্রশ্ন ছিল অনেকের। কিন্তু সব বাধাকে জয় করে কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। যাত্রাপথে সাক্ষী হয়েছেন, নির্বিচারে আদিবাসী উচ্ছেদের। মূলত মহারাষ্ট্রের পথে আদিম জনজাতি ভিল সম্প্রদায়ের দুঃখ-দুর্দশা স্বচক্ষে দেখেছেন। সর্দার সরোবর ড্যামের জন্য এই ভিল সম্প্রদায়কে শূলপানেশ্বর জঙ্গল থেকে উৎখাত করা হয়েছে। গভীর অরণ্যের সঙ্গে নাড়ির টান ছিন্ন হয়েছে এই জনজাতির। একইসঙ্গে নর্মদার তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে নগরায়ণের অভিশাপে কীভাবে প্রকৃতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে তাও চোখে পড়েছে তাঁর। সেসব অভিজ্ঞতা দিয়েই স্মৃতির ঝাঁপিকে সমৃদ্ধ করেছেন চন্দন। পূণ্যতোয়া নর্মদা পরিক্রমায় চন্দনের সহযোগিতায় ছিল সোনারপুর আরোহী, অভিযান পাবলিশার্স। চন্দনের ভাষায়, ‘হেঁটে ৪৬ দিনে ১,০০৭ কিলোমিটার। পুরো নর্মদা নদী গতিপথ, মোহনা থেকে উৎস। যতই পড়াশোনা করে অভিযান করি বাস্তবের রাস্তার সঙ্গে তা মেলে না। প্রতিকূলতা এসেছে, সেগুলোকে ওভারকাম করাটাও খুব কঠিন হয়নি। অবশেষে আজ অমরকণ্টকে ‘মাই কি বাগিয়া’তে নর্মদার উৎসে অভিযান শেষ করলাম। ট্যাডিশনাল ট্রেকরুট এটা নয়। প্রায় পুরোটাই এক্সপ্লোরেশনের জায়গা। সব মিলিয়ে চারটি রাজ্য গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়। সাতপুরা এবং বিন্ধ্য পর্বতমালা প্রথমবারের জন্য পেরোতে হল এই অভিযানে। পেরোতে হল প্রায় দুর্ভেদ্য শূলপানেশ্বর এবং পুনাসার জঙ্গল।

 

 

তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘অনেক মানুষের সাহায্য নিয়ে এই অভিযান। অভিযান শুরুর আগে এবং যাত্রাপথে যেভাবে সবাই এগিয়ে এসেছেন তাতে আমি অভিভূত। আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ আমার সংগঠন সোনারপুর আরোহীর কাছে। এবং সেই সঙ্গে HDMTA, Arete MC, নীলকণ্ঠ অভিযাত্রী সংঘ, লিটল ল্যাম্ব ফিল্মস এবং অনুকল্প। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে অসংখ্য মানুষ, যাদের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। দীর্ঘদিন বাড়ির বাইরে, তিন-চারদিনের মধ্যে বাড়ি পৌছাব। মা অপেক্ষা করছেন। অনেকদিন নিরামিষ খেয়ে আছি, প্রবলভাবে আমিষের প্রয়োজন বোধ করছি।’ সত্যি, চন্দন বিশ্বাসের এই সাফল্যে গর্বিত বাঙালিরা। বেঁচে থাকুক চন্দনদের অ্যাডভেঞ্চার রোম্যান্টিসিজম। তাহলেই আপন হতে বাহির হয়ে আসবে বাঙালি।

 

ইচ্ছেমতো নর্মদা

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ