সুমন করাতি, হুগলি: পঞ্চায়েত অফিসে আটকে পড়েছিল একটি কুকুর (Dog)। আর মুক্তি পেতে পঞ্চায়েত অফিসের ল্যান্ড ফোন থেকে উপপ্রধানের মোবাইল নম্বরে ফোন করে ফেলল সে! হ্যাঁ, এমনই আজব ঘটনার সাক্ষী হুগলি (Hooghly) গুপ্তিপাড়া পঞ্চায়েতের (Panchayat) উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ। পঞ্চায়েত অফিস তালা বন্ধ করে বাড়িতে আসার পরেই এই অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি হন তিনি। আর যা ঘটেছে, তা যেন নিজেও বিশ্বাস করতে পারছেন না উপপ্রধান।
জানা গিয়েছে, শনিবার পঞ্চায়েত অফিসে (Panchayat Office) নিজের ঘর তালাবন্ধ করে বাড়ি ফেরেন উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ। তখনই হঠাৎ তাঁর মোবাইল (Mobile)ফোনটা বেজে ওঠে। মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ যেতেই ভ্রু কুঁচকে যায় পঞ্চায়েত উপপ্রধান বিশ্বজিৎবাবুর। দেখেন, অফিসের ল্যান্ড ফোন থেকে কেউ ফোন করছে তাঁকে। তিনি তো নিজেই অফিস বন্ধ করে বাড়ি ফিরেছেন কিছুক্ষণ আগে। তবু ফোনটা তুলে ‘হ্যালো’ বলেন বিশ্বজিৎবাবু। কিন্তু ফোনের অন্যদিক থেকে সাড়া নেই। কিছুক্ষণ পর ফোনের অপর দিকে কুকুরের কান্না শুনতে পেলেন উপপ্রধান! সঙ্গে সঙ্গে তিনি অফিসে ছোটেন।
অফিসে গিয়ে দরজা খুলে দেখেন, সেখানে একটি কুকুর আটকে রয়েছে। আর দরজা খোলার পরেই কুকুরটিকে ডাকতেই কুকুরটি বেরিয়ে যায় অফিস থেকে। তিনি বুঝতে পারেন অজান্তে কুকুরটি অফিস বন্ধের সময় ভিতরে রয়ে গেছিল। আর এই ঘটনায় কার্যত হতবাক উপপ্রধান-সহ পঞ্চায়েতের কর্মীরা। ফোনটা কি তাহলে কুকুরই করল? ঘরে তো আর কেউ নেই, আর কে-ই বা করবে ফোন? এ সব নানা প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তাঁদের। যদিও উপপ্রধান নিশ্চিত যে, ফোনটি এসেছে অফিসের ভিতরে আটকে থাকা কুকুরের কাছ থেকেই। কারণ, তিনি যখন অফিসে বসে ফোনে কথা বলতেন, কুকুরটি সব খেয়াল রাখত।
হুগলির গুপ্তিপাড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ। তিনি জানান, অফিসের ল্যান্ডলাইন নম্বরটি হটলাইন করা আছে। কেউ অফিস থেকে রিসিভার তুললেই তাঁর মোবাইলে ফোন আসে। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে ছিলেন। পঞ্চায়েত অফিসের ল্যান্ডলাইন নম্বর থেকে ফোন আসায় অবাকই হন তিনি। কারণ, একটু আগে নিজেই অফিসের শাটার টেনে তালা দিয়ে এসেছিলেন। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের ফোনটি হটলাইন করা আছে আমার মোবাইলের সঙ্গে। কেউ রিসিভারে হাত দিলেও মেসেজ চলে আসে। আমি ফোন তুলে ‘হ্যালো’ বললাম। কোনও সাড়া পাইনি প্রথমে। বার কয়েক ‘হ্যালো’ বলার পর উলটোদিক থেকে ভৌ ভৌ আওয়াজ পেলাম। তারপর কুকুরের কান্না। আমি আর দেরি না করে অফিসের দিকে ছুটে যাই।’’
এরপর সেখানে গিয়ে নিজের হাতে শাটার তুলতেই দেখতে পান একটি কুকুর বসে তাঁর অফিসে। তিনি ‘আয়, আয়’ ডাক দিতেই গা ঝাড়া দিয়ে সে এক ছুটে বেরিয়ে রাস্তায় চলে যায়। বিশ্বজিৎবাবু এরপর বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত অফিসের সামনে মোট ১১টি কুকুর থাকে। ওদের দেখভাল আমরাই করি। শনিবার তাদের একটি যে অফিসে ঢুকে রয়েছে, বুঝতে পারিনি।’’ কিন্তু ফোনটা কে করল? উপপ্রধানের বিশ্বাস, কুকুরই রিসিভার থেকে ফোনটা তুলেছিল। কারণ ওরা প্রায়শই দেখে যে তিনি ফোন তুলে কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেমন কথা বলার পর ফোন রেখে দিই, অফিসে ঢুকে দেখলাম তেমনই ঠিকভাবে রাখা আছে টেলিফোন। ওর টানাহ্যাঁচড়ায় পড়েও যায়নি।’’ উপপ্রধান সারমেয়ের কাণ্ডে যতটা মুগ্ধ, ততটাই বিস্মিত অন্যরা। তাঁরা শুধু একটাই কথা বলছেন, ‘‘ফোনটা সত্যিই ও-ই করল?’’
কিন্তু কুকুর কি তাহলে নিজের মুক্তির জন্য নিজেই ফোন করল উপপ্রধানকে? আর সেটাও আবার কীভাবে সম্ভব? কিন্তু কল রেকর্ডেও পরিষ্কারভাবে শোনা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত অফিস থেকে যে ফোন গেছিল, সেখানে কুকুরের কান্নার আওয়াজ। এখন এই ঘটনায় উঠছে অনেক প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.