Advertisement
Advertisement

Breaking News

Black magic

কালো জাদুর অন্ধকার ইতিহাস বহু পুরনো, কেন আজও টিকে শয়তানের উপাসনা?

'রেনেসাঁ'র আগে পৃথিবীতে ছেয়ে গিয়েছিল এই ধরনের জাদুর চর্চা।

Here is how Black magic is interwind in our society। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 14, 2022 5:17 pm
  • Updated:October 14, 2022 8:51 pm

বিশ্বদীপ দে: ”আমাদের ভিতরে আলো ও অন্ধকার দুই-ই রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কোনটাকে আমরা বেছে নিই সেটাই আসল। সেটাই বুঝিয়ে দেয় আমরা আসলে কী।” ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য প্রিজনার অফ আজকাবান’ গ্রন্থে জে কে রাউলিং সিরিয়াস ব্ল্যাক নামের এক চরিত্রের মুখ দিয়ে বলিয়ে নিয়েছিলেন এই সার সত্য। আর সেই সত্যই যেন চিহ্নিত করে দেয় ব্ল্যাক ম্যাজিক তথা কালো জাদুর (Black Magic) উদ্ভবের দিকটি। ভুলে গেলে চলবে না একে ‘ডার্ক’ তথা অন্ধকার জাদুও বলা হচ্ছে। যার প্রয়োগের পিছনে রয়েছে অন্ধকারকে বেছে নেওয়ার দুরভিসন্ধি।

যেতে যেতে সভ্যতা অনেকটা পথ চলে এসেছে। তবু আজও কালো জাদু খবরের শিরোনামে। সম্প্রতি যৌবন এবং ভাগ্য ফেরানোর জন্য কেরলে (Kerala) দুই প্রৌঢ়ার খুনের ঘটনায় ব্ল্যাক ম্যাজিকের তত্ত্ব উঠে এসেছে। আবার গুজরাটে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘ভূতে ধরেছে’ এই সন্দেহে কিশোরী মেয়েকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। তিনিও নাকি কালো জাদু প্রয়োগ করে ভূত তাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। ভাবতে অবাক লাগে তথাকথিত ‘রেনেসাঁ’র আগে পৃথিবীতে ছেয়ে গিয়েছিল এই ধরনের জাদুর চর্চা। এত বছর পেরিয়েও সেই ব্যাধিকে হারানো যায়নি।

Advertisement

Dark-magic

Advertisement

[আরও পড়ুন: বাড়ছিল ঋণখেলাপির সংখ্যা, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা ঋণ আদায়ে ব্যর্থ ব্যাংক ম্যানেজারের]

পৃথিবীর সব দেশেই কালো জাদুর চর্চার ইতিহাস রয়েছে। কীভাবে জন্ম হয়েছিল এর? রবার্ট এম প্লেসের বিখ্যাত বই ‘বুক, ম্যাজিক অ্যান্ড অ্যালকেমি’তে বলা হয়েছে আত্মার আদিম, আচারিক উপাসনাই জন্ম দিয়েছিল সাদা ও কালো দুই জাদুরই। সেখান থেকেই বইতে বইতে আধুনিক সময়েও প্রবেশ করে কালো জাদু। এর পিছনে অন্যতম উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে আত্মাকে (অথবা অন্য লোকের বাসিন্দা অপশক্তিকে) বন্দি করে তার সাহায্যে অন্যের ক্ষতিসাধন করা কিংবা নিজের কোনও হিতসাধন। সাধারণ ভাবে সাদা জাদুকে উঁচু শ্রেণির জাদু ধরা হয়। একই ভাবে কালো জাদুকে নিচু শ্রেণির জাদু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দুই জাদুর উদ্দেশ্যগত ফারাকের কারণেই এই শ্রেণিবিভাগ। যদিও এই বিভাজন এতই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, যে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে এদের আটকে রাখা মুশকিল। বিশেষ করে ভাল উদ্দেশ্যে যে জাদুর জন্ম, সেই জাদুকেই খারাপ কাজে ব্যবহার করার উদাহরণ কম নেই।

‘কালো জাদু’র কথা বলতে বসলেই উঠে আসে উইচক্র্যাফট তথা ডাকিনীবিদ্যা কিংবা স্যাটানিজম অর্থাৎ শয়তানের উপাসনার প্রসঙ্গ। মধ্যযুগে ইউরোপ জুড়ে বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল, মহামারী ও অন্যান্য দুর্যোগের মূলে আসলে শয়তানরা। আর তাই ক্যাথলিক চার্চ শুরু করে ‘উইচ হান্ট’। ধরে ধরে ‘ডাইনি’ তথা ডাইনি বিদ্যা চর্চাকারীদের খুঁজে বের করে তাঁদের হত্যা করা। বহু নিরপরাধ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল ইনকুইজিশনের নিষ্ঠুর রক্তচক্ষুর কবলে পড়ে।

[আরও পড়ুন: ট্রেনে আরও কাছাকাছি আগরতলা-কলকাতা, রাষ্ট্রপতির হাত ধরে চালু হল সম্প্রসারিত দুই রেলপথ]

Black magic

এই সংক্ষিপ্ত লেখায় খুব বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়। তবু একবার উঁকি দেওয়া যেতেই পারে স্যাটানিজমের দিকে। এই শয়তানবাদের প্রচারকদের পূজ্য যে শয়তান তা বলাই বাহুল্য। খ্রিস্টান ধর্ম তো বটেই, ইসলামেও উল্লেখ রয়েছে শয়তানের। আব্রাহামিক ধর্মে শয়তানকে বিপথগামী দেবদূত হিসেবে দেখানো হয়েছে। তার কাজই মানুষকে পাপের উসকানি দেওয়া। শয়তানের ভক্তরা মনে করে তার উপাসনা করলে কালো জাদুর শক্তি অর্জন করে অমিত বলশালী হওয়া যায়। এই মতবাদকে থেইস্টিক স্যাটানিজম বলে। এপ্রসঙ্গে মনে পড়তেই পারে ‘রোজমেরিস বেবি’ (১৯৬৮) অথবা হিন্দি ছবি ‘পরি’র (২০১৮) কথা। সেখানে শয়তানের ঔরসে নারীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে। এর পাশাপাশি রয়েছে অ্যাথেইস্টিক স্যাটানিজম। এটা আবার সেই অর্থে কোনও ধরনের ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত নয়। এই মতবাদীদের বিশ্বাস, শয়তান আসলে মানুষেরই সুপ্ত প্রবৃত্তিরই প্রতিফলন।

Black magic

১৯৬৯ সালে লেখা ‘স্যাটানিক বাইবেল’ নামের বইয়ে বিখ্যাত শয়তানবিদ অ্যান্টন লাভে লিখছেন, ‘সাদা জাদু ব্যবহৃত হয় ভাল তথা স্বার্থহীন উদ্দেশ্যে। এবং কালো জাদু, আমরা বলে থাকি, খারাপ উদ্দেশ্যে। শয়তানবাদে এমন কোনও সীমারেখা নেই। জাদু শেষ পর্যন্ত জাদুই। সেটা কাউকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে কিংবা কাউকে রুখতে। একজন শয়তানবাদী, জাদুকর হিসেবে, সিদ্ধান্ত নেবে সে জাদুশক্তিকে কীভাবে ব্যবহার করবে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে।’

কালো জাদুর কথা বলতে বসলে সাধারণ ভাবে যে ছবিগুলো ভেসে ওঠে, সেখানে ভুডু থাকবেই। পপুলার কালচারে ব্ল্যাক ম্যাজিকের অন্যতম প্রতিনিধি ভুডু। ভুডুর অবশ্য স্বতন্ত্র ইতিহাস রয়েছে। যার সঙ্গে উইচক্র্যাফটের সম্পর্ক সামান্যই। কিন্তু কালো জাদুর সঙ্গে এই বিদ্যা ওতপ্রোতভাবেই জড়িয়ে। পশ্চিম আফ্রিকার এক ছোট দেশ বেনিনে এই ভুডুর জন্ম। পাশাপাশি নাইজেরিয়া, টোগোর মতো দেশেও জীবনযাত্রা, সাংস্কৃতিক ও আচারগত বিশ্বাসের সঙ্গে মিশে রয়েছে ভুডু। এই বিদ্যার চর্চা যেমন দুর্বোধ্য, তেমনই রহস্যময়। সূচ বেঁধানো ভুডু পুতুলের ছবি আমাদের চেনা। খারাপ আত্মাকে ওই পুতুলের মধ্যে বন্দি করা কিংবা কারও ক্ষতি করতে তার প্রতিভূ হিসেবে পুতুলটির ক্ষতি করার অনুশীলনের কথা আমরা জানি। যদিও বলা হয়, পশ্চিমি দেশগুলি ভুডুকে এভাবেই বাকি বিশ্বের কাছে তুলে ধরলেও আসলে ভুডুচর্চায় ভাল আত্মাকে ডেকে এনে জীবনকে মঙ্গলময় করে তুলতে চাওয়াই মূল লক্ষ্য।

Voodoo
ভুডু বলতেই এই ছবি ভেসে ওঠে মনে

এভাবেই এত হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবী নানা আলোছায়ার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চললেও কালো জাদু রয়ে গিয়েছে। সেই আদিম কাল থেকেই জাদুর কারসাজিতে নানা ‘অলৌকিকে’র দাবি করে বহু মানুষকে ঠকিয়ে এসেছে বুজরুকরা। আজও যে সেই সময় থেকে আমরা খুব বেশি এগতে পারিনি তার প্রমাণ সাম্প্রতিক ঘটনাবলি। চাঁদের মাটিতে পা রাখার পাঁচ দশক পেরিয়ে এসেও খবরের শিরোনামে উঠে আসছে যৌবন এবং ভাগ্য ফেরাতে অন্যের জীবন বিপণ্ণ করার ভয়ংকর প্রবণতা ও অন্ধ বিশ্বাসের কাহিনি। কবে এই জট থেকে মুক্তি পাবে সভ্যতা? প্রশ্নটা যতই সহজ হোক উত্তর আজও অজানাই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ