শুভময় মণ্ডল: দুর্গাপুজোর সন্ধেয় বেড়িয়েছেন নিশ্চয়ই? আগুপিছু ভাবনাচিন্তা ছেড়ে হেঁটে চলেছেন একের পর এক মণ্ডপের লক্ষ্যে। ভিড়ে ঠাসা চতুর্দিক। আপনি যখন প্রতিমা দর্শনের উৎসাহে ফুটছেন, তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে একদল মানুষ পরিশ্রম করেই চলেছেন। সিগন্যালের লাল-সবুজ আলো আর বাঁশিতে মগ্ন তাঁরা। বছরের এই চারটে দিনেও তাঁদের আনন্দ করার ফুরসত নেই। পরিবর্তে উর্দি পরে ঘেমেনেয়ে ভিড় সামলাচ্ছেন। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। কথা হচ্ছে কলকাতা পুলিশকে নিয়ে। থিমের মাধ্যমে তাঁদের এই অক্লান্ত পরিশ্রমকেই স্বীকৃতি দিতে চলেছে কৈলাস বসু স্ট্রিটের চালতাবাগান সর্বজনীন। এবার তাঁদের পুজোর ভাবনা ‘এবারের পুজোটা ওঁদের জন্য।’
[আরও পড়ুন: ফেসবুকে বিকৃত ছবি পোস্ট, পুলিশের দ্বারস্থ নৃত্যশিল্পী]
প্রতি বছরই কোনও না কোনও চমক দিয়ে থাকে এই পুজো কমিটি। চলতি বছরের ভাবনা এক্কেবারেই অন্যরকম। শিল্পী সায়ক রাজের হাতের ছোঁয়াতেই সেজে উঠছে পুজো মণ্ডপ। শিল্পীর কথায়,”শহরের মানুষের কথা ভেবেই কলকাতা পুলিশ বছরের পর বছর কাজ করে চলেছেন। আর পাঁচজনের সুরক্ষার জন্য ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন তাঁরা। যাঁরা চব্বিশ ঘণ্টা পরিজনদের কথা, নিজের কথা ভুলে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তাঁদের সম্মান জানাতেই এমন ভাবনা।”
শিল্পীর একটাই আক্ষেপ যাঁরা এত পরিশ্রমী তাঁরা যোগ্য সম্মান পান না। ছোটখাটো ত্রুটি হলেও তাঁদের সমালোচনা করা হয়। কিন্তু তাঁদের প্রশংসা করেন না কেউই। অথচ এই কলকাতা পুলিশকেই একসময় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে তুলনা করা হত। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা একগুচ্ছ অভিযোগের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন শিল্পী সায়ক রাজ। কলকাতা পুলিশের অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া সফলভাবে তিলোত্তমায় দুর্গোৎসব করা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: NRC-র প্রতিবাদে সরব তৃণমূল, পথে নেমে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত]
মণ্ডপের মাধ্যমে পুলিশদের সম্মান জানানোর ভাবনাচিন্তা বেশ কয়েকমাস আগেই শুরু করেছিলেন সায়ক। তাই কলকাতার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে পুলিশের ছবি তোলা হয়। মণ্ডপ সাজাতে ক্যান্ডিড সেই ছবি দিয়েই সাজানো হবে মণ্ডপ। সঙ্গে থাকবে সামান্য কয়েকটি মডেলও। আলাদা করে দেখানো হবে ডগ স্কোয়াড, মাউন্টেন পুলিশ, এসটিএফ, গোয়েন্দা বিভাগ, সাইবার ক্রাইম থানা ও রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের বিভিন্ন কাজকর্ম। পুলিশ পরিবারের কোনও সদস্য এই মণ্ডপে ঢুকলে তাঁরা প্রিয়জনের কাজের চাপ সম্পর্কে ধারণা পাবেন বলেই আশা শিল্পীর।
শিল্পীর কথায়, পুলিশকর্মীরা যদি একবারও এই মণ্ডপে আসেন তাহলে এত পরিশ্রম সার্থক হবে। পুজোয় সময় ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখে নয়, যাঁরা সাধারণ মানুষকে প্রতিমা দর্শনে সাহায্য করেই তৃপ্তি পান তাঁদের স্বীকৃতি না দিলে চলবে কেন?