নন্দন দত্ত, সিউড়ি: দুর্গাপুজোয় এখানে শুধু মাতৃ সাধনা হয়। মড়ার খুলি দিয়ে তৈরি পঞ্চমুণ্ডির বেদিতেই অধিষ্ঠান করা হয় দেবী দুর্গাকে। সঙ্গে থাকে শুধু লক্ষ্মী ও সরস্বতী। কার্তিক আর গণেশের কোনও মূর্তি নেই। পুজোও নেই। এমনই তিন পুতুলের পুজো হয় সিউড়ি দু’নম্বর ব্লকের পুরন্দরপুর গ্রামে।
[আরও পড়ুন: নিষ্ঠাভরে পুজো করলেই পুরস্কৃত করবে বিজেপি, শারদ সম্মান আয়োজন গেরুয়া শিবিরের]
প্রায় পাঁচশো বছর ধরে পুরন্দরপুর আদি সার্বজনীন দুর্গোৎসব পালিত হয়ে আসছে বলে জনশ্রুতি। আধুনিকতার সঙ্গে আজও বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে সেই আদি পুজো পদ্ধতি। তাই বংশ পরম্পরায় তালপাতার পুঁথি দেখেই মন্ত্রোচ্চারণ করা হয়। বিসর্জনের আগেই গোঁসাই বাবার পুজো হয়। আর নবমীতে হয় কালীপুজো।
গ্রামবাসীরা জানায়, বাংলা সনের হিসেবে দশম শতাব্দীতে মনোহর দাস বাবাজী তন্ত্র সাধনার উপাচারে মাতৃ সাধনা শুরু করেন। তাই কার্তিক ও গণেশ ছাড়া শুধুই মাতৃরূপা দুর্গা। আর দুর্গা প্রতিমা বসানো হয় তান্ত্রিকের প্রতিষ্ঠিত পঞ্চমুণ্ডির বেদিতে। যার নিচে কেউ বলে ১০৮টি মড়ার খুলি পোঁতা আছে। কেউ বলে, পাঁচ ধরনের পশুর সঙ্গে মানুষের খুলিও পোঁতা আছে। সে যাই হোক এখানে দেবীকে বসানো হয় পশ্চিম মুখে। সাধারণত দক্ষিণাবর্তে দেবী দুর্গাকে আরাধনা করা হয়। কিন্তু, পুরন্দরপুরে মনোহর দাসের নিজস্ব পদ্ধতিতে পুজো হয়।
[আরও পড়ুন: অপরাধের বিচারে স্বয়ং মা, ঝাড়গ্রামের পুজোয় এবারের চমক ‘যমালয়ে জীবন্ত দুর্গা’]
একসময়ে তালপাতার চালাঘরে পুজো শুরু করেছিলেন বিখ্যাত ওই তান্ত্রিক। তাঁর লেখা মন্ত্রের পুঁথি দেখে এখনও বংশ পরম্পরায় তা পাঠ হয়। যার পৌরহিত্য করেন সাজিনা গ্রামের গদাধর মুখোপাধ্যায়ের পরিবার। তবে সার্বজনীন এই পুজোয় এখন মন্দির পাকা ছাদের হয়েছে। কিন্তু, পুজো হয় হাতে লেখা পুঁথি থেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা নিত্যগোপাল কর্মকার বলেন, এখানে পুজো এখন সর্বজনীন। মা খুব জাগ্রত। অনেকেই মায়ের কাছে মানত করে সন্তানলাভ করেন। আরও বড় চমক নবমীতে এখানে কালীপুজো হয়। তারপরে মায়ের পুজো বসে। দশমীতে গোঁসাই বাবার পুজো দিয়ে তবে ঘট বিসর্জন হয় প্রতিমার। আর প্রতিমার নিরঞ্জন হয় একাদশীতে।
ছবি: শান্তনু দাস