১৩ জ্যৈষ্ঠ  ১৪৩০  রবিবার ২৮ মে ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

অবিকল মা ভবতারিণীর মূর্তির মতোই আরও দুই মূর্তি আছে বাংলায়, কোথায় জানেন?

Published by: Sulaya Singha |    Posted: January 25, 2022 7:56 pm|    Updated: January 25, 2022 7:56 pm

Two more Kali idols like the one in Dakshineswar temple present in West Bengal | Sangbad Pratidin

কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়: দক্ষিণেশ্বর আলো করে আছেন মা ভবতারিণী। দেবীমূর্তির এহেন প্রসন্ন রূপ সচরাচর দেখা যায় না। এই রূপ কল্পনা করেই যেন কবি লিখেছিলেন, ‘সিন্ধুতে মা’র বিন্দুখানিক/ঠিকরে পড়ে রূপের মানিক’। অপরূপ এই মূর্তিখানা তো শুধু মূর্তি মাত্র নয়, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে তিনি ছিলেন মা। যাঁকে না খাইয়ে নিজে জলটুকু মুখে তুলতেন না ঠাকুর। মা ভবতারিণীর (Bhavatarini Maa) এই মূর্তিটির রূপকার ছিলেন কাটোয়ার দাঁইহাটের নবীন ভাস্কর।

শোনা যায় সেবার কাশীতে দেবী অন্নপূর্ণার পূজা দিতে যাচ্ছিলেন রানিমা। ঠিক যাত্রার প্রাক্কালে হয় দেবীর স্বপ্নাদেশ। দেবী জানান, কাশীতে যেতে হবে কেন? বরং কলকাতাতেই গঙ্গাতীরে রানি যেন একখানা মন্দির নির্মাণ করেন। সেখানেই যেন তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেবারের মতো স্থগিত হল যাত্রা। মন্দির নির্মাণে মন দিলেন রানিমা। কিন্তু শুধু মন্দির হলেই তো হবে না। মায়ের মূর্তিও তো গড়াতে হবে। কার উপর দায়িত্ব দেবেন এই মূর্তি নির্মাণের? শুরু হল খোঁজ। শেষ পর্যন্ত দাইহাঁটের নবীন ভাস্কর পেলেন বরাত। তিন তখন সদ্যযুবা। খ্যাতির আলো তখনও তাকে স্পর্শ করেনি। তবে তাঁর হাতের কাজের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র। মা ভবতারিণীর মূর্তি নির্মাণের পরই বিখ্যাত হয়ে উঠবেন নবীন ভাস্কর।

[আরও পড়ুন: দক্ষিণেশ্বরই ছিল তাঁর শক্তির উৎস, মাতৃমন্দিরে নিয়মিত যেতেন নেতাজি, গাইতেন মায়ের গান]

তবে সেই খ্যাতি পাওয়ার আগে যে নিষ্ঠা ও ভক্তিতে নবীন এই কাজ করেছিলেন তা স্মরণীয়। কেবলমাত্র পেশাদার ভাস্কর হিসাবে তো নবীন এ কাজ করেননি। যেরকম ভক্তি থাকলে মায়ের এমন রূপ ফুটিয়ে তোলা যায়, সেরকম ভক্তিভাবই ছিল তাঁর কাজে। একজন সাধকের মতোই এ কাজে মগ্ন হয়েছিলেন তিনি। কলকাতায় এসে শুরু করলেন মূর্তি নির্মাণের কাজ। সেই সময়পর্বে, অর্থাৎ মাসাধিকাল ধরে হবিষ্যান্ন খেয়ে নিষ্ঠা সহকারে মূর্তি তৈরির কাজ শেষ করেন তিনি। কিন্তু কাজ যেন শেষ হয়েও শেষ হল না। আসলে মায়ের ইচ্ছা বুঝি ছিল অন্যরকম। মূর্তি নির্মাণ হলে রানি রাসমণি এলেন মা-কে দেখতে। মূর্তি তাঁর একরকম পছন্দই হল। তবু সমস্যা একটা থেকেই গেল। রানিমার মনে হল দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের (Dakshineswar Temple) গর্ভগৃহের মাপে মূর্তি বেমানান হচ্ছে। একটু যেন ছোট হয়েছে মূর্তি। রানি ফের নবীন ভাস্করকে আর-একটু বড় করে মূর্তি তৈরির বরাত দেন। আবার কাজে লেগে পড়লেন নবীন। আবার গড়লেন মা ভবতারিণির মূর্তি। এবারও কাজ শেষ হল, রানিমা দেখলেনও। এবার দেখা দিল আর-এক সমস্যা। এবারের মূর্তি হল গর্ভগৃহের মাপের থেকে কিঞ্চিৎ বড়। পুনরায় মূর্তি তৈরি শুরু করলেন নবীন। এবার যে মূর্তি নির্মিত হল, আমরা আজও সেই রূপেই মায়ের দর্শন পাই দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে।

dakhineshwar

অর্থাৎ নবীন ভাস্কর মোট তিনটি মূর্তি তৈরি করেছিলেন। তাহলে বাকি মূর্তি দুটি কোথায় গেল, এই প্রশ্ন ভক্তদের মনে উঠতেই পারে। নবীন ভাস্কর নির্মিত সবচেয়ে বড়ো মূর্তিটি হেদুয়ার গুহ বাড়িতে নিস্তারিণী কালী নামে পূজিতা হচ্ছেন। সবচে়য়ে ছোট মূর্তিটি বরাহনগরের দে প্রামাণিক পরিবারে ব্রহ্মময়ী কালী নামে পূজিতা হচ্ছেন। এই ব্রহ্মময়ী কালীকেই ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ মাসিমা বলে ডাকতেন। কারণ, দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মা এবং বরাহনগরের ব্রহ্মময়ী মায়ের মুখের আদল অলৌকিক ভাবে হুবহু এক।

[আরও পড়ুন: মাঝরাতে ঢাকের তালে ‘নাচেন’ দেবী যোগাদ্যা, পূর্ব বর্ধমানের এই সতীপীঠের মাহাত্ম্য জানেন?]

মা ভবতারিণীর মূর্তি নির্মাণের পর থেকেই নবীন ভাস্কর সারা বাংলাতেই খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। আরও বহু মূর্তি গড়ার বরাত আসতে থাকে। দেবতার মূর্তি গড়া ছাড়াও পরবর্তীতে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেন তিনি। নবীন ভাস্করের তৈরি আরও একটি মা কালীর মূর্তি বীরভূমের সিউড়ির, বড়ো কালীবাড়ী মন্দিরে পূজিতা, যিনি দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মায়ের হুবহু প্রতিরূপ। অর্থাৎ মা ভবতারিণীর আদলে আরও অন্তত দুটি মূর্তি আছে এই বাংলাতেই। নবীন ভাস্করের হাতের সেই জাদু আর মনের ভক্তি শুধু দেবালয়ে নয়, আলো হয়ে জেগে আছে অসংখ্য ভক্তদের মনের মন্দিরেও।

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে