ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: আবারও এক কঠিন পরীক্ষায় সফল হল চন্দ্রযান-২।ইসরোর বিজ্ঞানীদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা পরিশ্রম, চূড়ান্ত টেনশনে একলহমায় ইতি টেনে আবর্তন গতি কমিয়ে মহাশূন্য থেকে চাঁদের কক্ষপথে লাফিয়ে পড়ল সে। এবার কয়েকদিন চন্দ্রকক্ষে ঘুরে বেড়ানোর পর আগামী ২ সেপ্টেম্বর চন্দ্রপৃষ্ঠের কাছে পৌঁছবে চন্দ্রযান। তারপর ৭ সেপ্টেম্বর মাঝরাত নাগাদ মিশন সম্পূর্ণ করে চাঁদের মাটিতে নামবে চন্দ্রযান-২’এর ল্যান্ডার বিক্রম। সমগ্র অভিযানের মধ্যে আজকের পর্বটিই সবচেয়ে কঠিন ছিল বলে জানিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। তা সফল হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে।
[ আরও পড়ুন : পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের প্রস্তুতি! গোপন কথা ফাঁস রাওয়াতের]
কিন্তু কেন চাঁদের কক্ষপথে চন্দ্রযান-২’এর প্রবেশ এতটা উদ্বেগে রেখেছিল বিজ্ঞানীদের?এর উত্তর নিহিত পুরোপুরি একটি অঙ্কের মধ্যে। ইসরোর ব্যাখ্যা, চাঁদের কক্ষপথে চন্দ্রযানের না পৌঁছানোর আশঙ্কাও ছিল ষোল আনা। আশঙ্কা ছিল, ছিটকে মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে পারে যানটি। গত ২২ জুলাই ভারতের মাটি ছেড়ে উড়ে পাঁচ পাক খেয়ে সোজা চলে গিয়েছিল পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে। এই ২৯ দিন সময়ে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গিয়েছে সে। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথম থেকেই অল্প জ্বালানি খরচ করে মূলত চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উপর ভরসা করেছে ইসরো। এই পর্বে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরেছে চন্দ্রযান-২। সেই শক্তিতে ভর করে এবার তার বিপরীত দিকে ঘোরার পালা। বিপরীতমুখী জ্বালানি দিয়েই বদলানো হবে গতিপথ। তখন তার ঘূর্ণন হবে ঘড়ির কাঁটার দিকে। ইসরো বলছে, সেই কাজটাই সহজ নয়। চেয়ারম্যান কে শিবন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, “প্রথমেই গতি থামাতে হবে চন্দ্রযানের। এতদিন তার অনবোর্ড প্রপালশন হয়েছে গতি বাড়ানোর জন্য। এবার গতি কমানোর জন্য। কারণ, এবার থেকে উল্টো পথে পাক খেতে হবে তাকে।”
এই অনবোর্ড প্রপালশন বা নির্দিষ্ট পরিমাণ জ্বালানি পুড়িয়ে চন্দ্রযান-২ তার বর্তমান গতি থামিয়েছে চাঁদের কক্ষপথের একেবারে মুখোমুখি এসে, মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে। যানের গতি শূন্য হলে তবেই চাঁদের প্রবল মাধ্যাকর্ষণ তার উপর ক্রিয়াশীল হয়। যার টানে চাঁদের নিয়ম অনুযায়ী পাক খেতে শুরু করে চন্দ্রযান-২। এবং সেভাবেই ধীরে ধীরে ঢুকে পড়েছে চাঁদের কক্ষপথে। এই অঙ্কে ভুল হয়ে গেলে, অর্থাৎ
চন্দ্রযান-২ গতি কমিয়ে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণের মধ্যে না পড়লে বিপদের সমূহ সম্ভাবনা ছিল। চাঁদের আশপাশ থেকে ছিটকে বেরিয়ে মহাশূন্যে হারিয়ে যেতে পারত।
#ISRO
Today (August 20, 2019) after the Lunar Orbit Insertion (LOI), #Chandrayaan2 is now in Lunar orbit. Lander Vikram will soft land on Moon on September 7, 2019 pic.twitter.com/6mS84pP6RD— ISRO (@isro) August 20, 2019
তবে সেসব আশঙ্কা মিথ্যে করে আজ সকাল সাড়ে নটা নাগাদ অভিযানের তৃতীয় পর্যায়টিও পেরিয়ে গেল ইসরোর পাঠানো চন্দ্রযান। এরপর পৃথিবীর মতো চাঁদের চারপাশেও ৫ বার পাক খাবে সে। ২০আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পরপর সেই পাঁচটি পাক খেয়ে পৌঁছবে চাঁদের পিঠের কাছাকাছি।২ সেপ্টেম্বর অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা বিক্রম ল্যান্ডাররের। তারপর আরও দু’টি পাক খাবে বিক্রম। শেষে গতি কমিয়ে নিম্নমুখী হবে। অর্থাৎ, এরপরই তার চাঁদের পিঠে নামার প্রস্তুতি শুরু হবে। ৭ সেপ্টেম্বর মাঝরাতে দেড়টা থেকে আড়াইটের মধ্যে তার চাঁদের পিঠে নামার কথা। ততক্ষণে সচল হয়ে যাবে অরবিটার আর বিক্রমের ক্যামেরা। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর যে অংশে তার নামার কথা, সেই জায়গার জরিপ করবে অরবিটার আর বিক্রম দু’জনেই। দেখে নেওয়া হবে ‘ল্যান্ডিং জোন’—এর পরিস্থিতি। তার পরই ঘুরতে ঘুরতে থেমে আলতো লাফ। শেষে প্রজ্ঞান বেরিয়ে আসবে বিক্রমের পেট থেকে। চাঁদের জমিতে শুরু হবে তার কাজ।