সৌরভ মাজি, বর্ধমান: দুই শরিক পরিবারের বিবাদ। তার জেরে ‘দুই সতীন’ মজে গিয়েছে। সর্বজনের ব্যবহার্য পুকুরে আর জল মেলে না। কৃষিকার্য, স্নান ও অন্যান্য কাজে ব্যবহারে জল পাচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা। এমনকী পাশেই রয়েছে শ্মশান। দাহ করা চিতায় দেওয়ার জলটুকুও পেতে সমস্যায় পড়তে হয়। অবিলম্বে পুকুর সংস্কারের দাবি তুলেছেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের আঝাপুর গ্রামের বাসিন্দারা। এই ব্যাপারে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপেরও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রায় সাড়ে পাঁচ একর আয়তন ‘দুই সতীন’ নামের এই জলাশয়টি। একসময় আঝাপুরের মিত্র পরিবারেরই ছিল পুকুরটি। পরে মেমারির কেন্না গ্রামে সিংহ রায় পরিবার অংশ কেনে। কিন্তু এরপরই বিতর্ক শুরু হয়। মিত্র পরিবারের দাবি, পুকুরের পুরো অংশই তাদের রয়েছে। বিক্রিত অংশও তারা পুনরায় কিনে নিয়েছে। উল্টোদিকে সিংহরায় পরিবারের দাবি, পুকুরের পুরো অংশই তাদের। ভূমিদপ্তরে তার রেকর্ডও রয়েছে। মালিকানার বিবাদ গড়ায় আদালত পর্যন্ত। কথায় আছে ভাগের মা গঙ্গা পায় না। তেমনই ভাগের পুকুরও মরতে বসেছে। দীর্ঘকাল সংস্কার না হওয়ায় মজে গিয়েছে পুকুরটি।

[আরও পড়ুন: প্রয়াত গুফি পেন্টাল, চিরঘুমের দেশে মহাভারতের ‘শকুনি মামা’]
গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মী ক্ষেত্রপাল বলেন, “সেই ছোট থেকে এই পুকুরে স্নান করতাম। এখন জল নেই পুকুরে স্নান, কাপর কাচতে সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের।” আর এক বাসিন্দা কুশ ক্ষেত্রপাল বলেন, “এই পুকুরের জল থেকে চাষাবাদ হত। সব ধরনের প্রয়োজনে জল ব্যবহার করা যেত। এখন জল না থাকায় খুব সমস্যা হচ্ছে। তীব্র দাবদাহ চলছে। কোথাও আগুন লাগলে নেভানোর জল মিলবে না। এই পুকুরে জল থাকলে আগুনের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে নিয়ন্ত্রণ করা যেত।”
এলাকার আর এক বাসিন্দা শুভ্রনীল ঘোষ বলেন, “পুকুরেল মালিক যেই হোন তাতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। আমাদের সমস্যা এই পুকুরটি সর্বজনের ব্যবহারের জন্য রেকর্ড আছে। পুকুরটি সংস্কার না করায় জল মিলছে না। পাশেই শ্মশাণ রয়েছে। চিতায় আগুন লাগলে এখানকার জল ব্যবহার করা হত। এখন সেটা হয় না। শ্মশানে সাবমার্শিবলের জল ব্যবহার করতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে সেই জলও পাওয়া যায় না।”
পুকুরটি দ্রুত সংস্কারের দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। সিংহ রায় পরিবার পুকুর সংস্কারের চেষ্টা করলে মিত্র পরিবার বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সুব্রত ঘোষ নামে এক বাসিন্দা বলেন, “পুকুরের মালিকানা নিয়ে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। সিংহরায় পরিবার ভূমিদপ্তরের নথিপত্র দেখিয়ে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে যুক্ত সংস্থাকে দিয়ে পুকুর কাটানোর ব্যবস্থা করে। মাটি কাটার কাজ শুরু হলে বাধা দেয় মিত্র পরিবার। পুকুরটা সংস্কার হলে এলাকার জল সংকট অনেকটা কমত।”
এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু সোমবার বলেন, “পুকুরের মালিকানা নিয়ে বিবাদ থাকতেই পারে। সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু পুকুরটি মজে যাওয়ায় এলাকার মানুষ জল সংকটে পড়বেন সেটা হতে পারে না। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে আমরা আলোচনা করবো। কীভাবে পুকুর সংস্কার করে জল সংকট দূর করা যায় সেই চেষ্টা করা হবে।”