Advertisement
Advertisement

Breaking News

Boroli

বিপদ এড়াতে তিস্তার বোরোলি কিংবা মহাশোল পাতে নয়! কেন একথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

সুস্বাদু তিস্তার মাছ মারাত্মক রাসায়নিকের প্রভাবে এখন যেন সাক্ষাৎ বিষকন্যা!

Expert advice to avoid Boroli Fish from Teesta | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:November 7, 2023 6:34 pm
  • Updated:November 7, 2023 6:55 pm

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: সুস্বাদু তিস্তার মাছ মারাত্মক রাসায়নিকের প্রভাবে এখন যেন সাক্ষাৎ বিষকন্যা। জৈবিক বিবর্ধক অর্থাৎ ‘বায়োলজিক্যাল ম্যাগনিফিকেশন’-এর জেরে বিলুপ্তির পথে ‘রূপালি শস্য’ বোরোলি। জলে পলির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে কমেছে। তারই জেরে প্রায় প্রতিদিন মরা মাছ জলে ভাসছে। শুধু কি তাই! মহাশোল, বাঘাআড় থেকে ছড়াতে পারে দুরারোগ্য ব্যাধি।

উত্তর সিকিমে লোনাক হ্রদে বিস্ফোরণের পর বিধ্বংসী হড়পা বানের জেরে বিপজ্জনকভাবে পালটে যাওয়া তিস্তার বাস্তুতন্ত্র পর্যবেক্ষণ করে এমনই সতর্কতা মৎস্য বিজ্ঞানী এবং নদী বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের শঙ্কা জলে ভেসে আসা নাইট্রিক অ্যাসিড, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ক্লোরিনের মতো বিভিন্ন রাসায়নিকে তিস্তা মারাত্মকভাবে দূষিত হওয়ায় ধাক্কা খেতে পারে উত্তরের পর্যটন। বাধ্য হয়ে শীতে আসা পরিযায়ী পাখিরা তিস্তা ছেড়ে চলে যেতে পারে অন্য কোথাও। পালটে যাওয়া তিস্তার বাস্তুতন্ত্র নিয়ে অনুসন্ধান এবং সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে নামছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

Advertisement

 

[আরও পড়ুন: চক্রব্যুহে অভিষেক! ডায়মন্ড হারবারে নওশাদকে সমর্থন সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপির]

উত্তরের ‘রূপালি শস্য’ বোরোলি মাছের অস্তিত্ব কতদিন থাকবে তা নিয়ে এতদিন শুধু প্রশ্ন ছিল। ৪ অক্টোবর বিধ্বংসী বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি দেখে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুধু বোরোলি কেন! তিস্তার মহাশোল, বাঘাআড়-সহ অন্য প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব থাকবে কিনা তা নিয়েও রীতিমতো সংশয় দেখা দিয়েছে। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে তবে কি উত্তরের ঐতিহ্যের মুকুট থেকে একটি পালক খসে পরার পথে! কারণ, তিস্তার বোরোলি নেহাতই মাছ নয়। উত্তরের ‘আইডেনটিটি’। কোচবিহারের রাজদরবারের গল্প-গাথায় জানা যায়, মহারানি ইন্দিরাদেবী যখন কলকাতা অথবা মুম্বইয়ে থাকতেন তাঁর জন্য বিমানে বোরোলি মাছ পাঠানো হতো। শুধু কি রাজদরবার! হাল আমলে রাজ্যের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ওই মাছের স্বাদে মুগ্ধ ছিলেন। উত্তরবঙ্গ সফরে এলে তার মেনুতে রাখা হতো বোরোলি। প্রতি বছর যে পর্যটকরা ডুয়ার্সে বেড়াতে আসেন তাঁদের রসনায় তৃপ্তি আনে ওই বোরোলি। সুস্বাদু মাছের টানে তাঁরা গজলডোবায় ভিড় জমান। সেখানেই ঘনাচ্ছে বিপদ।

বন্যার পরদিন ৫ অক্টোবর থেকে তিস্তায় নজদারিতে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্য তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল ঘোষ। তিনি জানান, দিন যত গড়িয়েছে ভেসে আসা পচাগলা দেহ থেকে জলে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সিকিমের ওষুধ ও রংয়ের কারখানা থেকে ভেসে আসা রাসায়নিকের প্রভাবে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের খাদ্যশৃঙ্খল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জৈবিক বিবর্ধক অর্থাৎ ‘বায়োলজিক্যাল ম্যাগনিফিকেশন’-এর জেরে ওরা বিলুপ্তির পথে চলে যেতে বসেছে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিস্তা-মহানন্দা লিঙ্ক ক্যানেল। জলে অক্সিজেনের মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে কমে যাওয়ায় মাছ ভেসেছে। এখনও ভাসছে। তিনি বলেন, “এখন কলকাতায় বসে বোরোলি মাছ নিয়ে বিভিন্ন রকমের খবর পাচ্ছি। কিছু হোটেলে নাকি সস্তায় খাওয়ানো হচ্ছে। আমি অনুরোধ করব এটা করবেন না। তিস্তার কোনও মাছ এখন মুখে তুলবেন না। সবই মারাত্মকভাবে বিষাক্ত।”

 

 

[আরও পড়ুন: ম্যাথিউজের ‘টাইমড আউট’ই এবার সচেতনতা প্রচারের হাতিয়ার পুলিশের, দেখুন পোস্ট]

কয়েকদিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের অনুসন্ধান শুরু হবে বলেও তিনি জানান। ওই সময় বিভিন্ন পরীক্ষার কাজ হবে। এদিকে নদী গবেষক তথা ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান মধুসূদন কর্মকার জানান, বন্যার জলে শুধু দেহ অথবা কারখানা ভাসেনি। সেনাবাহিনীর মর্টার, গ্রেনেড সহ আরও অনেক বিস্ফোরক ভেসেছে। সেগুলো থেকে জলে মিশেছে নাইট্রিক অ্যাসিড, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, সিসা, গ্লোরিনের মতো মারাত্নক রাসায়নিক। এর প্রভাবে নদীর বাস্তুতন্ত্র বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলে পলির পরিমাণ বেশি থাকায় অক্সিজেন কমেছে। তিনি বলেন, “এমন দূষণ থেকে নদীকে বাঁচাতে পলি সরাতে হবে। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। তাই প্রকৃতির ভরসায় থাকতে হচ্ছে। ওই কারণে তিস্তায় জলপ্রবাহ ঠিক রাখা প্রয়োজন। সেটা করতে গেলে যে ১৯টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে বন্ধ করা জরুরি।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ