ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: রাজহাঁসগুলি (Swan) সব গেল কোথায়? দিঘিতে নেই। পাড়ার পুকুরে নেই। সাগর পেরিয়েও আসে না এইসব পরিযায়ী! হ্যাঁ, পরিযায়ীই। ব্রিটেনের রানি আজও নিজহাতে খাওয়ান তাঁর সাধের রাজহাঁসগুলিকে। সেই সুদূর ইউরোপ থেকে একটা সময় পর্যন্ত নিয়ম করে বঙ্গে আসত এইসব পরিযায়ী রাজহাঁসের ঝাঁক। রাজকীয় চেহারাই তাদের বিদ্যার দেবী সরস্বতীর বাহন করে তুলেছিল পুরাণে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর হল, আর তাদের দেখা মেলে না। আজকের দিনে শ্বেতশুভ্র বাহনগুলির কথাই যেন বেশি করে মনে পড়ছে।
তবে কলকাতার (Kolkata) কলেজ স্কোয়্যার বা হেদুয়া পার্কে যাদের সংসার, সেই গলা উঁচু, দীঘল চেহারার হাঁস তবে কারা? “তারা গুজ, সোয়ান নয়”, বলছেন শহরের পক্ষী বিশারদ অপূর্ব চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “সোয়ান, অর্থাৎ রাজহাঁস শহর কেন, সম্ভবত এ রাজ্য এমনকী এই দেশেও এখন বিরল। কাশ্মীরে এর কিছু দেখা মেলে। আর কিছু পাওয়া যেতে পারে চিড়িয়াখানায়। যেমন আমাদের আলিপুরে।”
কিন্তু এভবে পরিযায়ী রাজহাঁসের অবলুপ্তির কারণ কী? অপূর্ববাবুর এক কথায় জবাব, “এক এবং একমাত্র কারণ পাখি শিকার।” তিনি বলছেন, “আরবকে ঘিরে গোটা ভারতের বিভিন্ন অংশে ইউরোপ থেকে পরিযায়ী রাজহাঁস আসত। কিন্তু বিশেষ করে আরব দেশেই মানুষের মধ্যে শিকারের প্রবণতা এত বেড়ে গেল যে, শেষে এই চত্বরেই তারা আসা ছেড়ে দিল।” নানা সময় নানা বার্ড ফেস্টিভ্যালে দর্শকদের পাখি চিনিয়ে দেওয়ার ডাক পড়ে তাঁর মতো অনেকেরই। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজহাঁস চেহারায় বড়। মাংসও বেশি। স্বাভাবিকভাবেই তাদের চাহিদাও বেশি ছিল। তাঁর আক্ষেপ, “লোকে সাধারণ পাতিহাঁস শিকার করে খায়। তায় রাজহাঁস। রাজকীয় চেহারায় বেশি মাংস। সেজন্য চট করে শিকারির হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে অক্ষম। ফলে শিকার হতেও সময় লাগত না।”
তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে আবহাওয়া। সেটাও একটা কারণ বলে জানাচ্ছেন এই পক্ষীবিশারদ। গ্রামবাংলার নানা জায়গা থেকে একটা সময় এও শোনা যেত যে, বিদ্যা ধরে রাখতে পুজোর আগের দিনরাত থেকে অন্তত একটা পুকুরের হাঁস অন্তত ধরে এনে রাখা হত। তবে এসবকে স্রেফ পাড়াগাঁয়ের গল্প বলে উল্লেখ করে সরস্বতীর বাহন কেন রাজহাঁসই হল, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন পুরোহিত নিতাই চক্রবর্তী। বলছেন, “হাঁস দুধ আর জল আলাদা করে খেয়ে নিতে পারে বলে একটা কথা শোনা যায়। রাজহাঁসকে সেই কাজে সেরা বলে মনে করা হয়। যে কোনও খারাপ পরিস্থিতিতেই একমাত্র বিদ্যা সকলকে উদ্ধার করে আনতে পারে। সেই কারণেই রাজহাঁসের এমন গুরুত্ব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.