সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইউফ্রেসিস (Euphrates) ও টাইগ্রিস (Tigris)। এক সময় এই দুই নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল মেসোপটেমিয়া সভ্যতা। গোটা বিশ্বকে আজও যে সভ্যতার উন্নতি অবাক করে। ঐতিহাসিক সেই দুই নদীর অস্তিত্ব আজ সংকটে। কচুরিপানায় ঢেকে গিয়েছে নদী। নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে কালঘাম ছুটছে ইরাক সরকারের। জল ক্রমশ শুকিয়ে আসছে। দুই নদীর এই অবস্থায় চিন্তার ভাঁজ পরিবেশবিদদের কপালেও।
কচুরিপানা এমন এক জলজ গাছ যা খুব কম সময়ের মধ্যে একটা আস্ত জলাশয়কে নষ্ট করে দিতে পারে। সেই পানাই এবার বাসা বেঁধেছে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিসে। ইরাকে এর নাম ‘নাইল ফ্লাওয়ার’। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের এই গাছ শ্রীলঙ্কা থেকে নাইজেরিয়া পর্যন্ত সব জায়গার ইকোসিস্টেমকে ধ্বংস করেছে। বিশ্বের অন্যতম তীব্র গরমের দেশ ইরাক প্রায়ই খরা এবং জল সংকটে ভোগে। তার উপর বিষফোড়ার মতো রয়েছে দূষণ এবং নদী বাঁধ। ফলে জলের সমস্যা ইরাকে বড়ে একটি ইস্যু। সেখানে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিসের জল শুকিয়ে গেলে সেই সংকট যে আরও তীব্র হবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাই এই দুই নদীকে বাঁচাতে তৎপর ইরাক প্রশাসন।
কচুরিপানার চকচকে পাতাগুলি জলের উপর ঘন আচ্ছাদন তৈরি করে। ফলে সূর্যের আলো জল পর্যন্ত পৌঁছয় না। জলে অক্সিজেন সরবরাহও হয় না। প্রতি গাছ পাঁচ লিটার পর্যন্ত জল শোষণ করে। তার উপর সূর্যের আলো ও অক্সিজেন না পৌঁছনোয় জলজ অন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীজীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যহত হয়। জলে মাছ বাঁচতে পারে না। আর ইরাকের এই দুই নদী জেলেদের অন্যতম কর্মসংস্থানের জায়গা। এখান থেকে মাছ ধরে তারা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। দক্ষিণ ইরাকের মানুষ ইউফ্রেসিসে মাছ ধরেন আর বাগদাদের মানুষ টাইগ্রিসে মাছ ধরে জীবনযাপন করেন। এই দুই নদীই কচুরিপানার দখলে চলে যাওয়ার তাদের জীবিকায় টান পড়েছে। শুধু তাই নয়। নদীর জল শুকিয়ে আসায় চাষবাসও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। জলের স্তর নেমে যাওয়ার চাষির জমিতে ঠিক মতো জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
চিন্তার কারণ আরও রয়েছে। পরিবেশবিদদের মতে, এক হাজার বর্গফুটের কচুরিপানার ওজন পাঁচ টন পর্যন্ত হতে পারে। এত ভারী হলে নদীর পাড়ের উপর তা চাপ সৃষ্টি করবে। ফলে নদীতে ভাঙন তো বটেই, এমনকী বাঁধ ভেঙে পড়াও আশ্চর্য নয়। কচুরিপানা থাকায় নদীরগুলির জল ব্যবহারযোগ্য নেই। ইরাকে এমনিতেই জলের সংকট রয়েছে। নদীর জল ব্যবহার না করতে পারায় সেখানে পানীয় জলের সমস্যা তীব্র হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকার একেবারেই বিষয়টি নিয়ে উদগ্রীব নয়। তা যদি হত, এভাবে কচুরিপানা দুই নদীকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারত না। অন্যদিকে ইরাক প্রশাসনের মতে, কাজ শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব দুই নদীকে ফের স্বাভাবিক করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.